মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো সুদের হার বৃদ্ধি করল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। এছাড়া ব্যালান্স শিট সংকোচনের লক্ষ্যে বন্ডসহ অন্যান্য সিকিউরিটিজে নিজেদের অংশ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ধরনের সিদ্ধান্তে দেশের অর্থনীতি ও শ্রমবাজার নিয়ে ফেডের আস্থারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। মুদ্রানীতি-সম্পর্কিত দুদিনের বৈঠক শেষে স্থানীয় সময় গত বুধবার ফেডের পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, শ্রমবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতির অবস্থা বিচার করে ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি (এফএমওসি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি করে ১ থেকে ১ দশমিক ২৫ শতাংশের মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের পর এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ সুদহার সীমা। ২০০৮ সালে আর্থিক মন্দার পর সাধারণ মানুষকে ঋণগ্রহণ ও ভোক্তা ব্যয়ে উৎসাহী করে তুলতে সুদহার কমিয়েছিলেন নীতিনির্ধারকরা। এদিকে এফএমওসির পরামর্শ অনুযায়ী ফেড তাদের সর্বশেষ নীতিনির্ধারণী বৈঠকে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে। শ্রমবাজার ও মূল্যস্ফীতি মিলিয়ে অর্থনীতির মিশ্র অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সুদহার বৃদ্ধি করল মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি। এ নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের পর চারবারের মতো সুদহার বাড়ানো হলো। শ্রমবাজারের অব্যাহত অগ্রগতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবগত রয়েছে। পাশাপাশি দুর্বল মূল্যস্ফীতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফেড। বেকারত্ব নিয়ে আগের দেয়া পূর্বাভাস পরিবর্তন করে ফেড বলেছে, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ কর্মহীন থাকবে। মার্চে দেয়া পূর্বাভাসে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেকারত্বের পূর্বাভাস দিয়েছিল ফেড। এছাড়া মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাসও কমিয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে ফেড, মার্চে যা ছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২ শতাংশ সুদের হার নির্ধারণ করেছে। অবশ্য ফেড বলছে, নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় সার্বিক মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়েছে। এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে ফেড জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি দুর্বল হওয়া সত্তে¡ও অর্থনীতিতে অব্যাহত চাঙ্গাভাব দেখতে পাচ্ছে তারা। সা¤প্রতিক সময়ে গৃহস্থালি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ব্যবসার ক্ষেত্রে স্থির সম্পদে বিনিয়োগ বাড়ছেÍ এসব কিছুই অর্থনীতির পালে হাওয়া জোগাবে। ফেড আশা করছে, চলতি বছর মার্কিন অর্থনীতি ২ দশমিক ২ শতাংশ স¤প্রসারিত হবে; মার্চের পূর্বাভাসে যা ছিল ২ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থনীতিতে এই স্থিতাবস্থা দেখে নিজেদের ৪ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ব্যালান্স শিট সংকোচন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ফেড। হোল্ডিং হ্রাসের সামগ্রিক পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করেছে ব্যাংকটি। প্রাথমিকভাবে ট্রেজারিগুলোয় প্রতি মাসে ৬০০ কোটি ডলার করে হোল্ডিং কমানো হবে। তিন মাস অন্তর তা আরো ৬০০ কোটি ডলার করে ক্রমবৃদ্ধি করা হবে। পরবর্তী ১২ মাসের মধ্যে তা মাসিক ৩ হাজার কোটি ডলার না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা চলবে। এছাড়া ঋণ ও বন্ধকি-সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে এই হার ৪০০ কোটি ডলার করে নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্রমে তা বাড়িয়ে মাসে ২ হাজার কোটি ডলার করা হবে। ফেডপ্রধান জেনেট ইয়েলেন বলেন, আমাদের নেয়া সিদ্ধান্তে অর্থনীতির চাঙ্গাভাব প্রতিফলিত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যপূরণ না হওয়া সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সচেতন রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ফেডের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ব্যাংকরেট ডটকমের অর্থনীতি-বিষয়ক বিশ্লেষক গ্রেগ ম্যাকব্রাইড বলেন, ঋণের বোঝার সঙ্গে সুদহার বৃদ্ধি পরিবারগুলোর জন্য কষ্টকর হয়ে উঠবে। তবে বৃহৎ পরিসরে অর্থনীতিতে এর প্রভাব বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হবে। কারণ এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে ডলার শক্তিশালী হবে, বাড়বে ব্যাংকগুলোর মুনাফা। এদিকে ফেডের সুদ বৃদ্ধি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের মামলার প্রস্তুতির খবরে ভবিষ্যত্ চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার শেয়ারবাজারে পতন লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে এসঅ্যান্ডপি মিনি ফিউচারস দশমিক ৩ শতাংশ ও এমএসসিআই দশমিক ৭ শতাংশ হারিয়েছে। রয়টার্স, বিবিসি, বøুমবার্গ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।