পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাঙামাটিতে মৃত বেড়ে ১০৮ : সঙ্কটের অজুহাতে পণ্যমূল্য বহুগুণ বৃদ্ধি : আশ্রয়কেন্দ্রে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ
ইনকিলাব ডেস্ক : : সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটিসহ পাহাড়ধসের শিকার এলাকাগুলোতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। উদ্ধরকারী দল গতকাল ১ সেনা সদস্য, ১ নারীসহ ৩ জনের লাশ উদ্ধার করেছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের পাশাপাশি নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সরকারী ত্রাণ সরবরাহ শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অর্থ সহায়তা পেলেও তা দিয়ে পণ্য কেনার মতো অবস্থা নেই উপদ্রæত এলাকায়। যে স্বল্প পণ্যের যোগান রয়েছে তার মূল্য বহুগুণ বেশি।
সৈয়দ মাহাবুব আহামদ, রাঙামাটি থেকে জানান, ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত রাঙামাটি জেলায় চলছে শোকের মাতম। স্বজন হারানো মানুষের আহাজারিতে এখনও ভারি পাহাড়ের বাতাস। আপনজন হারানো মানুষের তালিকা দীর্ঘ হয়েছে আরও। জেলার শহর এলাকাসহ উপজেলাগুলোতে এই পর্যন্ত পাওয়া গেছে সর্বমোট ১০৮ জনের লাশ। পুরো শহরজুড়েই বিরাজ করছে শোকার্ত পরিবেশ। একদিকে স্বজনহারা পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। বিদ্যুত নাই পানি নাই, বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সঙ্কট, লাগামহীন দাম, দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থা, রাঙামাটিবাসীর নতুন দূূর্ভোগ হচ্ছে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় খাদ্য সামগ্রীর মূল্যের উধ্বগতি। এছাড়াও নেটওয়ার্কিং সমস্যা জনিত কারণে রাঙামাটির ব্যাংকগুলোতে লেনদেন অনেকটাই বন্ধ রয়েছে।
ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুঁজি করে কয়েকগুণ বাড়িয়ে বিক্রি করছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। রাঙামাটির বাজার গুলোতে একটি সিন্ডিকেট চক্র মোটা চাল বিক্রি করছে পঞ্চাশ টাকা কেজি দরে। আগুন জ্বলছে তরকারি বাজারেও। প্রতিকেজি আলু বিক্রি করা হচ্ছে ৭০ থেকে ১১০ টাকায়। প্রতি লিটার জ্বালানী তেল (অকটেন) ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শহরের ভেদভেদী নতুনপাড়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, মাটিধসে আমার ঘরের কিছুই নেই। আমরা কোনো রকমে বেঁেচ আছি। গত দুইদিনে শুধুমাত্র শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করেছি। মঙ্গলবার সকালে বাজারে গিয়ে আলু কিনতে গিয়ে শুধুমাত্র দুই কেজি চাউল কিনে বাসায় ফিরে এসেছি। তিনি জানান, আলু প্রতিকেজি বিক্রি করা হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। চাউল কিনেছি ৫০ টাকা কেজি ধরে। তিনি জানান, একমুঠো লাউ শাক কিনেছি ৪০ টাকায়। ভেদভেদী এলাকার অন্যান্যরাও জানালেন বিদ্যুৎ না থাকায় বাজারের দোকানগুলোতে ৫ টাকার মোমবাতি বিক্রি করা হচ্ছে ২০ টাকা প্রতিটি। এভাবে চলতে থাকলে শহরের বাজারগুলোতে আগামী দু’য়েক দিনের মধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সঙ্কট দেখা দিবে এমন মন্তব্য করে শহরবাসী জানায় বাজারগুলো নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রকার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব রাঙামাটি জেলার সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাঙামাটির চরম এই দূর্যোগের সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সঙ্কট দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা অর্জনের প্রবৃত্তি অত্যন্ত দুঃখজনক। দ্রæততার সাথে দূর্যোগে থাকা রাঙামাটিবাসীর এইসব সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। দূর্যোগের চারদিন পরেও বিদ্যুত পানির মতো অত্যাবশ্যকীয় সেবাসমূহ বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষগুলোর কর্মদক্ষতার সক্ষমতা বিষয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শুধুমাত্র ত্রাণ কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অত্যাবশ্যকীয় সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করার প্রয়োজন। তিনি ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দূর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনাকে অবর্ণনীয় বলে অবিহিত করেন এবং চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা রাঙামাটিবাসীকে প্রয়োজনীয় নিরাপদ পরিবেশে পুনর্বাসনের দাবি জানান।
এদিকে, রাঙামাটিতে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৮ জনে, আহত হয়েছেন দুই শতাধিক এবং নিখোঁজ রয়েছে অন্ততঃ ১৫জন। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে রাঙামাটি শহরে ৫ সেনা সদস্যসহ ৬১ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮ জন, জুরাছড়ি ৪ জন ও বিলাইছড়ি ২ জন রয়েছে। এর মধ্যে শিশু হচ্ছে ৩৪ জন, মহিলা ৩২ জন পুরুষ ৩৯ জন। এর মধ্যে নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ২০ জন। আহত হয়েছে ৭৭ জন। এর মধে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বেশ কয়েকজন চলে গেলেও ৩৪ জনের মতো রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এদিকে রাঙামাটি জেলায় পাহাড় ধ্বসের ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২০ পরিবারে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর বাড়ির মধ্যে রাঙামাটি সদরে ৯০, কাউখালী-১৯০, নানিয়ারচর-৩০ বরকল-৭০, চিংমরং, ওয়াগ্গার রাইখালী ৩৪০। অন্যদিকে, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রাঙামাটি- কাপ্তাই সড়ক, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক বিচিছন্ন রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটে রাজার হাট লিচু বাগান, কারিগর পাড়া পাহাড় ধ্বসে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তিন দিনের একটানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি উচ্চতা বেড়ে যাওযায় নিম্নাঞ্চলে জেলার বিলাইছড়ির ফারুয়া, কাউখালী, জুরাছড়ি এবং বরকলের ভুষণছড়ার নিম্নাঞ্চল বন্যায় প¬াবিত হয়েছে। জুরাছড়িতে ৩৩ শতাংশ জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দমকল বাহিনীর প্রশংসনীয় ভূমিকা
১৩ জুন পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে সংঘঠিত ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগে সৃষ্ট ভুমিধ্বাসের পর জেলার বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার কার্যক্রমে ফায়ার ব্রিগেডের উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের নিরলস প্রচেষ্টা প্রশংসিত হয়েছে সর্বত্র। ফায়ার ব্রিগেডের রাঙামাটি ও কাপ্তাই স্টেশনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে ব্রিগেডের উদ্ধারকারী দলের অভিজ্ঞ সদস্যরা অংশ নেন এইসব উদ্ধার কাজে। দূর্যোগের পর মুহূর্ত থেকে টানা তিনদিন ভমিধ্বসে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালন করে দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এই উদ্ধারকারী বাহিনীর সদস্যরা। উদ্ধার কার্যক্রমের তত্বাবধানে থাকা ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক (অপারেশন) শাকিল নেওয়াজ জানান, দূর্যোগের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত টানা ৩ দিন উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা। রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ২২০ জন প্রশিক্ষিত উদ্ধার কর্মী এই কার্যক্রমে যুক্ত আছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।