Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬৪

সারা দেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন : বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়নি

প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৫৪ এএম, ১৫ জুন, ২০১৭

ইনকিলাব ডেস্ক : অবিরাম বর্ষণ থেকে সৃষ্ট পাহাড়ীধসে চট্রগ্রাম, রাঙামাটি, ও কক্সবাজার, বান্দরবন জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে কমপক্ষে ১৬৪। জেলা শহরগুলোর সাথে কোথাও কোথাও উপজেলা বা বিভাগীয় শহরগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দূর্গত জেলা-উপজেলায় আর্থিক সাহায্য ও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। দূর্গত এলাকার যানচলাচলে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রদক্ষেপ।
পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামে আরও ৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭-এ। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ৩৪ জন নিহত এবং আরও ২ জন নিখোঁজ থাকার বিষয়টি জানানো হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়া আরও অন্তত ৩ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ধস ও পাহাড়ী ঢলে মারা গেছে ২৭ জন। চন্দনাইশের ধোপাছড়িতে পাহাড়ধসে মারা যায় ৪ জন। রাউজানে গাছ চাপা ও পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছে নারী, শিশুসহ ৩ জন। নগরীতে গাছচাপা ও বজ্রপাতে দুই জন এবং বাঁশখালীতে গাছ চাপা পড়ে একজন মারা যায়।
দুইদিনের টানা ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে এই অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। গতকাল বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। চট্টগ্রামের সাথে কক্সবাজার ও বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে নগরীর কয়েকটি এলাকা নিয়মিত জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় পাহাড় থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মহানগরীর মতিঝর্ণা, একে খান ও বায়েজিদ এলাকাসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি বসতি থেকে প্রায় ৭৫০ জন লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এছাড়া রাঙ্গুনিয়ায় ৫৮০টি পরিবারের ২ হাজার জন, চন্দনাইশে ৫০টি পরিবারের ২৫০ জনসহ মোট প্রায় ৩ হাজার জনকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও এর আশপাশ থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক আহত ব্যক্তিকে নগদ ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান উপজেলার জন্য ১০ টন করে ২০ টন, চন্দনাইশ উপজেলার অনুকূলে ৫ টন এবং লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলার অনুকূলে ৩ টন করে ৬ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।
রাঙামাটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৫ : আহত-দুই শতাধিক, নিখোঁজ ১৬
সৈয়দ মাহাবুব আহামদ রাঙামাটি থেকে জানান, রাঙামাটিতে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৫ জনে, আহত হয়েছেন দুই শতাধিক এবং নিখোঁজ রয়েছে অন্ততঃ ১৬জন। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বুধবার রা সাড়ে ৮টায় প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এই তথ্য জানান। তবে তিনি জানান মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তেও পারে।
গতকাল দিনভর প্রায় দেড় হাজার মানুষ কাজ করেও বিপর্যস্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার খুব সামান্যই উন্নয়ন করতে পেরেছে। এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার নাগাদ কিছু কিছু সড়ক চালু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হোসেন। তবে চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হতে আরো সময় লাগবে।
এদিকে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সকালে রাঙামাটি এসে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন। এর আগে তিনি সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিগ্রস্থমানুষের পুনর্বাসন ও সহায়তায় সরকার সব রকম সহযোগিতা করবে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে রাঙামাটির দূর্গত মানুষের জন্য ৫০ লাখ টাকা নগদ ১০০ মেট্রিক টন চাল এবং ৫শ’ বান্ডিল টিন ও এবং আহত প্রত্যেকের জন্য ৩ হাজার করে বরাদ্দ প্রদানের ঘোষণা দেন। তিনি রাঙামাটির চট্টগ্রাম সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের জন্য এবং রাঙামাটি শহরে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করতে যা কিছু করার দরকার দ্রæত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করেন। পরে তারা রাঙামাটি শহরের মানিকছড়ি, শিমুলতলী, ভেদভেদী এলাকায় পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থএলাকা ও আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
এদিকে রাঙামাটি জেলায় পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২০। ক্ষতিগ্রস্থ ঘর বাড়ির মধ্যে রাঙামাটি সদরে ৯০, কাউখালী-১৯০, নানিয়ারচর-৩০ বরকল-৭০, চিংমরং, ওয়াগ্গার রাইখালী ৩৪০।
অন্যদিকে, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রাঙামাটি- কাপ্তাই সড়ক, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীন রুটে রাজার হাট লিচু বাগান, কারিগর পাড়া পাহাড় ধ্বসে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
তিন দিনের একটানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি উচ্চতা বেড়ে যাওযায় নি¤œাঞ্চলে জেলার বিলাইছড়ির ফারুয়া, কাউখালী, জুরাছড়ি এবং বরকলের ভুষণছড়ার নি¤œাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। জুরাছড়িতে ৩৩ শতাংশ জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
কাপ্তাইয়ে সর্বশেষ পাহাড় ধসে নিহত ১৮ আহত ১৯
কবির হোসেন, কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) থেকে জানান, টানা বর্ষণে কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধসে উপজেলা প্রশাসনের জরিপ অনুযায়ী গতকাল (বুধবার)পর্যন্ত কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সর্বশেষ ১৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। নিহত ও আহতদের বিভিন্ন সাহায্যে প্রদান করা হয়েছে। গত তিন দিনের টানা প্রবল বর্ষণে কাপ্তাইয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধসে নিহত ও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে এলাকার অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। কাপ্তাইয়ে টানা বর্ষণে কাপ্তাই-চট্রগ্রাম প্রধান সড়ক বনশ্রী পর্যটন এলাকায় ফাঁটল দেখা দিয়ে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ঐ সড়ক দিয়ে ভারি কোন যানচলাচল করতে পারছে না। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ছোট, ছোট যান চলাচল করছে এবং পাহাড় ধসে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক বসতঘর ক্ষতিসহ কর্ণফুলী নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম গতকাল (বুধবার) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী প্রাণহানি ও আহতদের খবর জানান, তিনি বলেন, কাপ্তাই লগগেইট আবুল হাসেম (৪৫), রাইখালী উচিনু মারমা (৩৫) মিতু মারমা (৬) রোকসনা বেগম (৫৫) মিতিঙ্গাছড়ি নুরনবী (৩৫) রুবি আক্তার(৩০), রোহান (৫) ইকবাল (৩০) চিংমরম হেডম্যানপাড়া মনু মারমা (৩০) উবাইউ মারমা (৪৯) এবং মুড়ালীপাড়া এলাকায় একই পরিবারের ৬জন হল কেমাপ্রæ মারমা (৪৯) স্ত্রী সামারাই মারমা (৩৫) কেমাপ্রæ মারমা (৪৯) থোয়াইঅংপ্রæ মারমা (৩৮) চাইপ্রæউ মারমা (১৫) সিংনেই মারমা (১৪) ও শিশু এনিউচিং মারমা (৪) মারা যায়। এছাড়া ১৯ জন আহত হয়েছে বলে নির্বাহী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ, প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, নৌ স্কাউট সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং উদ্বার কাজে সহযোগিতা করেন। গতকাল (বুধবার) বিকাল ৪টায় ত্রাণ ও দুর্যোগমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রায় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং ১৮ নিহত পরিবারদের জনপ্রতি নগদ বিশহাজার টাকা ও ত্রিশ কেজি চাল বিতারণ করে। এ সময় ত্রান ও দুর্যোগ সচিব শাহ কামাল, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন,বিজিবি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর মাহামুদ হাসান, কাপ্তাই ইউনিয়ন আ’লী, উপজেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
টেকনাফে বাবা-মেয়ের মৃত্যু
মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ থেকে জানান, কক্সবাজারের টেকনাফে টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পাহাড়ের মাটি ও গাছ চাপা পড়ে মোহাম্মদ সেলিম (৪০) ও তাঁর মেয়ে টিসু মনি (৩) মারা গেছে। তবে এ ঘটনায় তার স্ত্রী ও এক ছেলে জীবিত রয়েছে। গতকাল দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।



 

Show all comments
  • সেলিম উদ্দিন ১৫ জুন, ২০১৭, ১:৩৭ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি ওই অঞ্চলের মানুষের প্রতি রহমত নাযিল করো।
    Total Reply(0) Reply
  • নোমান আহমদ রাজু ১৫ জুন, ২০১৭, ৯:৫০ এএম says : 0
    পত্রিকা ন পড়লে ভালই লাগেনা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সারা দেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ