পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : পাহাড়ে বেঘোরে মৃত্যু থামছে না। বর্ষা আসতেই পাহাড় ধসে গণমৃত্যু এখন যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে অন্তত ৫ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বড় ৫টি পাহাড় ধসের ঘটনায় মারা গেছে ২৭১ জন। পরিবেশবিদদের মতে, এটি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলেই ঘটছে পাহাড় ধস।
পাহাড় ধসে গণমৃত্যু ঠেকাতে ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) এম এ মতিন বীর প্রতীকের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি টাক্সফোর্স গঠন করা হয়েছিল। তবে সে টাক্সফোর্সের ৩৬ দফা সুপারিশের বেশিরভাগ আলোর মুখ দেখেনি। ব্যবস্থা নেয়া হয়নি পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে। নির্বিচারে পাহাড় কাটা কারণে একদিকে যেমন পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে ঘটছে পাহাড় ধস।
২০০৭ সালের ১১ জুন একদিনের রেকর্ড ভারী বর্ষণে (৪২২ মিলিমিটার) চট্টগ্রামসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে ১২৯ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আর তখনই এ ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যু বন্ধে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। চট্টগ্রামসহ এ অঞ্চলের ৫ জেলার ২২০টি স্পটে পাহাড় কাটার সাথে জড়িত শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
ওই ঘটনার পর চট্টগ্রামের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার এম এন সিদ্দিকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিও পাহাড় ধস প্রতিরোধে বেশকিছু সুপারিশ করেছিল। পাহাড় সুরক্ষায় সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। এর ফলে বন্ধ হয়নি পাহাড় ধ্বংস। পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুরা একের পর এক পাহাড় উজাড় করেই চলেছে। এ কারণে প্রতিবারই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে, আর পাহাড় কেটে ভূমিদস্যুরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তদন্ত কমিটি পাহাড় কাটার জন্য পাহাড় সুরক্ষা যাদের দায়িত্ব সেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও দায়ী করেছিল। পরিবেশ অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠে। আবার এসব সংস্থার বিরুদ্ধে পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুদের সহযোগিতারও অভিযোগ রয়েছে। মহানগরীর ৩১টি পাহাড়ে এখনো লক্ষাধিক মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছে। এসব পাহাড় দখল করে ভূমিদস্যুরা বসতঘর তৈরি করছে। এসব অবৈধ বসতঘরে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগও দেয়া হয়েছে। শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এক মাস আগে এসব সংযোগ বিচ্ছিন্নে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর কিছু বসতবাড়িতে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও সে অভিযান মাঝপথে থেমে যায়।
এক হিসেবে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরী ও আশপাশে অর্ধশতাধিক পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। এখন উপজেলা পর্যায়ে এমনকি দুর্গম গ্রামেও পাহাড় নিধন চলছে। আর এ কারণে শহরের পাশাপাশি গ্রামেও পাহাড় ধস হচ্ছে। গতকাল রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম অঞ্চলে একদিনে ১২৯ জনের মৃত্যু হয়। এর পরের বছর ১৮ আগস্ট নগরীর এ কে খান এলাকায় পাহাড় ধসে ১২ জনের মৃত্যু হয়। ২০১১ সালের ১ জুন নগরীর বাটালি হিলে পাহাড় ধসে মারা যায় ১৭ জন। ২০১৩ সালের ২৫-২৬ জুন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-বান্দরবান-রাঙ্গামাটি ও সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যায় ৯৪ জন। ২০১৫ সালের ২৬ ও ২৭ জুন কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে প্রাণ হারায় আরও ১৯ জুন। সর্বশেষ গতকাল একদিনের পাহাড় ধসে চট্টগ্রাম-বান্দরবান ও রাঙামাটিতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মহানগরী ও আশপাশের অর্ধশতাধিক পাহাড়ে এখনো লাখো মানুষের বসতি রয়েছে। ধস আতঙ্কে কিছু লোককে সরিয়ে নেয়া হলেও মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে অসংখ্য মানুষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।