Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় সিরিয়ালের নায়িকাদেও থ্রি-পিস শাড়িতে বাজার দখল

জমে উঠেছে বৃহত্তর খুলনার ঈদ বাজার

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি : শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনায় জমে উঠেছে ঈদ বাজার। ভারতীয় সংস্কৃতির শাড়ি, থ্রি-পিস ও শিশু ড্রেস বাজার দখল করে নিয়েছে। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের জেলা শহরগুলোতে অভিন্ন চিত্র। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা সদরে প্রতিটি বিপণী বিতান, ফ্যাশন হাউস, ফুটপাতের দোকানসহ গোটা মহানগরীর ব্যস্ততা এখন চোঁখে পড়ার মতো। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিপণী বিতানগুলো মুখর হচ্ছে ক্রেতাদের পদভারে।
তবে এই মুহূর্তে শিশুদের পোশাক পরিচ্ছদ বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে মহিলাদের থ্রি-পিস ও শাড়ী আর ছেলেদের পাঞ্জাবী, শার্ট ও জিন্স প্যান্ট। তবে এবারের ঈদে খুলনার নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে শাড়ী। এছাড়া ভারতীয় সিরিয়ালের নায়িকাদের পরিহিত থ্রি-পিসও বাজার দখল করে নিয়েছে। আর তরুণরা ঝুঁকেছেন জিন্স আর গ্যাভার্ডিং প্যান্ট এবং সুতী পাঞ্জাবীর দিকে। কেনাকাটাও হচ্ছে আশানুরূপ। গত বছরের তুলনায় বেচাকেনাও বেশি আর দাম যাই হোক কিনছে সবাই দেদারছে। ২০ রমজানের পরে অবশ্য মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা বাজার দখল করে নিবে। তখন জমজমাট ঈদের বাজার নতুন মাত্রা পাবে। দোকানীরা জানান, প্রতিবছর মেয়েরা থ্রি-পিসের দিকে বেশি ঝুঁকে। এবারও ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। নারীরা গত বছরের তুলনায় থ্রি-পিস বেশিই কিনছে। সরজমিনে বাগেরহাট জেলা সদর ও সাতক্ষীরা জেলা সদরে গিয়ে জানা যায়, এবার আগে ভাগেই জমে উঠেছে ঈদ বাজার। তবে বাগেরহাটের চেয়ে সাতক্ষীরায় ভীড় ও বেচাকেনা বেশি। নারীরা এখানেও বেশি কিনছে। মার্কেটগুলোতে নারীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। এসব বিপণী বিতানগুলোতো নারীরা শাড়ী কিনছে বেশি। তবে এই শাড়িগুলো হচ্ছে ভারতীয় সিরিয়ালে নায়িকাদের পরিহিত শাড়ি। ক্রেতারা দোকানীদের সিরিয়াল এবং নায়িকাদের নাম বলে উল্লেখিত শাড়িগুলো চাইছেন। বিক্রেতারাও মজা করে ইনিয়ে বিনিয়ে তা বিক্রি করছেন। বলা যায় পাশ্ববর্তী দেশের সংস্কৃতি এখন বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে। আর উজ্জ্বল রং ও জমকালো ডিজাইন, ক্যানভাসজুড়ে কারচুপি, এমব্রয়ডারি কিংবা পাথরের কারুকাজ সম্পন্ন শাড়ির ও ভারতীয় থ্রি-পিসের দিকে নারীদের নজর বেশি। আর শিশুদের কাপড় ও জুতা স্যান্ডেল সর্বত্র বিক্রি হচ্ছে সমানতালে। ক্রেতারা বলছেন শিশুদের পোশাক পরিচ্ছদের দাম তুলনামুলকভাবে বেশি। অধিকাংশ জায়গায় শিশুদের ড্রেস ভীড়ের কারণে একদামে বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে, ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে প্রতি বছরের মতো এবারও খুলনা মহানগরীর খুলনা শপিং কমপ্লেক্স, সেফ এন্ড সেভ, নিউমার্কেট, রেলওয়ে মার্কেট, জলিল মার্কেট, আক্তার চেম্বার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, খানজাহান আলী হকার্স মার্কেট ও ফ্যাশন হাউসগুলো নতুন রূপে সেজেছে। রেলওয়ে মার্কেটের ভিতর বিভিন্ন অলিতে গলিতে বিভিন্ন ক্ষুদ্র চেম্বার ও মার্কেট হয়েছে। সেখানে আধুনিক ডিজাইনের দোকান ও শোরুমগুলোতে যথেষ্ট কেনাবেচা হচ্ছে। এসব দোকানে নারীদের পছন্দের জামদানি, বেনারশী, টিস্যু, মসলিন, টাঙ্গাইল চিত্রা, টাঙ্গাইল বুটিকস, টাঙ্গাইল বালুচুরি, টাঙ্গাইল সফট সিল্ক, মার্চ ¯¬াইচ কটন, খাদি, হাফ সিল্ক, সুতি, এন্টিকস, রাজশাহী সিল্ক, এন্ডি সিল্ক, এন্ডি কটন, টুয়েল কটন, কাতান অপেরা, জুট কাতান, কাটিয়াল ঝুট, জর্জেট বেনারশি, কাঞ্জিবনন ও বিভিন্ন ধরনের তাঁতের শাড়িসহ দেশি ও বিদেশী শাড়ীর সমাহার ঘটেছে। শিশুদের জন্য রাখি বন্ধন ড্রেস বেশ নজর কেড়েছে। এছাড়া মহানগরীর বড় বাজার এলাকায় যাকাতের শাড়ি লুঙ্গি বিক্রির হিড়িক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাইকারী দোকানগুলোতে যাকাতের শাড়ি লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে।
খুলনা সরোওয়ার্দী মার্কেটে শাড়ী কিনতে আসা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তমা সাকীর বলেন, প্রতিবছর ঈদে থ্রি-পিস কিনে থাকি। কিন্তু এবারের ঈদে থ্রি-পিসের পরিবর্তে শাড়ী কিনেছি। শখ করে এবার ইন্ডিয়ান জর্জেটের কাজ করা শাড়ি কিনলাম। বয়রার গৃহবধু আসমা আজগর বলেন, ঈদের সময় মার্কেটে এসে কেনা কাটা আমার শখ। বাজারে ইন্ডিয়ান থ্রি-পিস আর বাহারি শাড়িতে ভরপুর। বম্বে বুটিকসের থ্রি-পিস নজর কেড়েছে। তবে আমি কিনেছি ভারতের কোটার শাড়ি। আগেরদিন কিনেছিলাম জর্জেট। অন্য ঈদের চেয়ে এবার অনেক সুন্দর সুন্দর শাড়ি এসেছে। নাসিমা খাতুন বলেন, গ্রামের আত্মীয় স্বজনদের পছন্দ শাড়ী। তাদের জন্য প্রতি ঈদেই শাড়ী কিনতে হয়। এবার দাম বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন। খুলনা শপিং কমপ্লেক্সের শাড়ি হাউসের মালিক জি এম বাবুল ইনকিলাবকে জানান, আবারও শাড়ীর কদর ফিরে এসেছে। বিশেষ করে এবার জামদানি, বেনারশী, টিস্যু, মসলিন, টাঙ্গাইল, রাজশাহী সিল্ক, কাতানসহ বিভিন্ন তাঁতের শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফ্যাশন সচেতন নারীরা রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রং ও জমকালো ডিজাইন, ক্যানভাসজুড়ে কারচুপি, এমব্রয়ডারি কিংবা পাথরের কারুকাজ করা শাড়ি কিনছেন। এসব শাড়ী সর্বনিম্ন ২ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা মূল্যের শাড়ী বিক্রির পরিমান বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গৃহসুখন ফ্যাশান হাউজের মালিক সালমা রহমান বলেন, মোমবাটিক, টাইডাই বাটিক, টাঙ্গাইলের নীল কমল, জামদানি, সফুরার সিল্ক, টিস্যু, রাজশাহী সিল্কসহ নকশা করা হাতের কাজের বিভিন্ন শাড়ির প্রতি এবারের ঈদে নারীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বস্ত্র মেলার ম্যানেজার সন্তু লস্কর বলেন, মোটামুটি দামের মধ্যে টাঙ্গাইল বুটিকস, বøক প্রিন্ট, সুতির শাড়ী বেশি বিক্রি হচ্ছে। তার দোকানে বাহা ১৫শ’ টাকা, ধুপিয়ান সিল্ক ১৫শ’ থেকে ৮হাজার টাকা, দেশি টাঙ্গাইল ১৫শ’ থেকে ৭ হাজার টাকা, জুট কাতান ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা, লেহেঙ্গা সিস্টেম শাড়ি ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, এবারের ঈদে তরুণদের নজর সুতি পাঞ্জাবির দিকে। বিশেষ করে, সিল্ক, সুতি, খাদি কাপড়ের শর্ট পাঞ্জাবির দিকে ঝোঁক বেশি। নগরীর খুলনা শপিং কমপ্লেক্স, সেফ এন্ড সেভ, নিউমার্কেট, রেলওয়ে মার্কেট, জলিল মার্কেট, আক্তার চেম্বার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, খানজাহান আলী হকার্স মার্কেট ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে পাঞ্জাবির পসরা সাজানো হয়েছে। কাটছাঁট রং আর বৈচিত্রের পাঞ্জাবিতে রয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া। এবারের ঈদে উজ্জ্বল রঙের পাঞ্জাবির প্রাধান্য থাকছে। লাল, খয়েরি, কমলা, নীল, কালা, সাদা, ছাই, হালকা সবুজ বেগুনি ইত্যাদি রঙের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে মার্কেটগুলোতে।
পাঞ্জাবি কিনতে আসা খুলনা বি এল কলেজের ইংরেজি ডিসিপ্লিনের ছাত্র মাসুদ রানা জানান, সবাই চায় একটু ভিন্ন ভিন্ন রং আর ঢঙয়ের বৈচিত্রের পাঞ্জাবি। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) যন্ত্র কৌশল অনুষদের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদ উৎসবকে যেন আরও আনন্দময় করে তোলে নতুন পাঞ্জাবি। তাই পাঞ্জাবি ছাড়া ছেলেদের ঈদ ভাবাই যায় না। তিনি জানান, ঈদের নামাজ ছাড়াও আজকাল ঈদ পুণর্মিলনী, ঈদের সন্ধ্যায় ও রাতের পার্টিতে শর্ট পাঞ্জাবি পরিধান করছে ছেলেরা। তরুণের পাশাপাশি, শিশু-কিশোর বৃদ্ধরাসহ সব বয়সের ছেলেরাই ঈদে পাঞ্জাবি পরেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতীয়


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ