মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গত শনিবার রাজধানী দিল্লীতে এ বছরের কৈলাস ও মানসরোবর তীর্থযাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছেন, যার ভর্তুকি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আসলে এই যাত্রার সূচনা হল এমন একটা সময়ে যখন ভারতে হিন্দুদের জন্য তীর্থে সরকারি ভর্তুকি বাড়ছে - কিন্তু মুসলিমদের জন্য হজ ভর্তুকি কমছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য যেখানে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের জন্য ভর্তুকি দ্বিগুণ করেছে, সেখানে এ বছর থেকে হজযাত্রীদের একটা বড় অংশকে বিমানের বদলে জাহাজে সউদী আরব পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার।
প্রতি বছর প্রায় হাজার দেড়েক ভারতীয় হিন্দু কৈলাস পর্বত ও মানসরোবর দর্শনে যান সরকারি ব্যবস্থাপনায় - যে তীর্থস্থানদুটি বর্তমানে চীনের তিব্বতের ভেতর পড়ছে। এই ভারতীয়দের মধ্যে বেশির ভাগই উত্তরপ্রদেশের। আড়াই মাস আগে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ওই রাজ্য থেকে যারা কৈলাস-মানসরোবর যাবেন তাদের জন্য মাথাপিছু সরকারি ভর্তুকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে এক লাখ রুপি করা হবে।
ওই তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে দিল্লীর উপকন্ঠে নয়ডা বা গাজিয়াবাদে একটি ভবন নির্মাণ করা হবে বলেও ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, যাতে তারা সেখান থেকে যাত্রা শুরু করতে পারেন।
উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও গুজরাটের মতো বেশ কয়েকটি বিজেপি-শাসিত রাজ্যও তাদের নিজ নিজ রাজ্যের বাসিন্দাদের কৈলাস-মানসরোবর যাত্রার জন্য বেশ কয়েক হাজার রুপি করে ভর্তুকি দিয়ে থাকে।
কৈলাস-মানসরোবর যাত্রীদের প্রত্যেকের গড়ে আড়াই লাখ রুপি করে খরচ করতে হয়। তবে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা হলে এখন তার চল্লিশ শতাংশ খরচই বহন করছে রাজ্য সরকার। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারও কিছু খরচ বহন করে থাকে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে কৈলাস-মানসরোবর তীর্থযাত্রীদের জন্য সরকারি ভর্তুকি যখন ধাপে ধাপে বেড়েছে, তখন মুসলিম হজযাত্রীদের জন্য ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমশই কমে চলেছে।
২০১২ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, যে মুসলিম হজ্জযাত্রীরা বিমানে চেপে হজে যান তাদের ক্ষেত্রে ভর্তুকির পরিমাণ পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। তখন ক্ষমতায় থাকা মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকার ও পরবর্তীতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার সেই নির্দেশ অনুযায়ীই কাজ করেছে এবং হজযাত্রীদের ভর্তুকি ক্রমশই কমছে।
এমনকি, হজে ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে সরকার প্রায় আঠারো বছর পর আবার জাহাজে করে যাত্রীদের সউদী পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে বিমানযাত্রার তুলনায় খরচ হয় প্রায় অর্ধেক।
এমভি আকবরি নামে একটি সরকারি জাহাজ বহু বছর ধরে হজযাত্রীদের নিয়ে মুম্বাই থেকে জেদ্দা পাড়ি দিত। কিন্তু ১৯৯৫ সালে জাহাজটি পুরনো ও বিকল হয়ে পড়ায় ভারত থেকে জাহাজে চেপে হজে যাওয়া বন্ধই হয়ে যায়। হজযাত্রীদের ভর্তুকি কমানোর চেষ্টায় সরকার এখন আবার মুম্বাই, কলকাতা বা কোচির মতো বন্দরগুলো থেকে নতুন করে হজযাত্রীদের জাহাজ চালু করতে চাইছে, সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি সে কথা স¤প্রতি নিশ্চিতও করেছেন।
ভারতের মুসলিম স¤প্রদায়ের অন্যতম নেতা ও আসাম থেকে নির্বাচিত এমপি সিরাজুদ্দিন আজমল এই নীতিকে ‘দ্বিচারিতা’ বলে বর্ণনা করে বলেছেন, ‘ভারত যদি নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে দাবি করে, তাহলে দুই ধর্মের মানুষের জন্য দুরকম নীতি কেন হবে? কৈলাস-মানসরোবর যাত্রায় ভর্তুকি বাড়ানো হলে হজযাত্রার ভর্তুকিও বাড়ানো উচিত’।
তবে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো সংগঠনগুলো মনে করছে, এত বছর ধরে হজযাত্রার জন্য ভারত সরকার যে শত শত কোটি রুপির ভর্তুকি দিয়ে এসেছে - তাদের ভাষায় সেই ‘সংখ্যালঘু তোষণ নীতি’-র একটা পাকাপাকি অবসান হওয়া দরকার।
পরিষদের মুখপাত্র বিজয় শঙ্কর তিওয়ারির কথায়, ‘প্রতি বছর কৈলাস মানসরোবরের জন্য মোট ভর্তুকির পরিমাণ বোধহয় এক কোটি রুপিও হবে না। সেই জায়গায় হজযাত্রার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে প্রতি বছর খরচ হচ্ছে আটশো কোটি রুপিরও বেশি। ফলে দুটোর মধ্যে তো কোনও তুলনাই হতে পারে না’! সূত্র : বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।