Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদকে ঘিরে রূপগঞ্জের জামদানি পল্লীতে ব্যস্ততা

| প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার(রূপগঞ্জ)নারায়ণগঞ্জ থেকে : সংসারের অভাব তাড়াতে এক সময় বিদেশ পাড়ি দিয়েও অর্থনৈতিক মুক্তি না পেয়ে ফের দেশে ফিরেছেন মিনারা নামের এক নারী শ্রমিক। প্রথমে গার্মেন্টেস কাজ করে কোনমতে সংসার চালাতে শুরু করেন। পরে নিজের বাড়ির পাশে ৫ বছর পূর্বে কয়েকটি জামদানী শাড়ীর কারখানার শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর লাভজনক অবস্থান দেখে ঝুঁকে পড়েন এ পেশায়।
স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে কয়েকটি তাঁত গড়ে তুলেন নিজের বাসায়। সেই থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হলো না মিনারার। বিগত ৫ বছরে শুন্য হাতের শ্রমিক এখন লাখপতি বনে গেছেন। এ ব্যবসায় এসে বদলে গেছে তার ভাগ্য। পরের চাকুরী বাদ দিয়ে নিজেই এখন খাটাচ্ছেন প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। কেউ কারিগর কেউ বাজার নিয়ন্ত্রক। এভাবে রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার বিসিক শিল্পনগরী খ্যাত নোয়াপাড়া বাজার এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে একটি পল্লী। এ পল্লীর বাইরেও বাসা বাড়িতে মাটি খুড়ে গ্রামে গ্রামে রয়েছে আরো অসংখ্য জামদানী তৈরির তাঁত। মিনারার ন্যায় রয়েছে ৫শতাধিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তাদের সবাই এখন সাবলম্বী। প্রতি উৎসবকে ঘিরে এ জামদানী পল্লীর ব্যস্ততা ক্রমেই বেড়ে যায়। বাঙ্গালী নারীর ভূষণে শাড়ীর প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে এক সময়ের মসলিন শাড়ীর আদলে রেশমী সুতার নকশা ও কারুকাজে খচিত সুতি সুতার মাঝেই কারিগরের সুই সুতার ব্যস্ততা। শৈল্পিক গুণ সমূদ্ধ একেকজন কারিগর দীর্ঘদিন মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি জামদানী শাড়ীগুলো দিয়েই তাদের জীবিকার হাল ধরেছেন। তাই জামদানী এখন দেশের গÐি ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রতিবেশী দেশের বাসিন্দাদের পছন্দের তালিকায়।
ঈদ, পূর্জাসহ নানা উৎসব এলেই নতুন অর্ডারের পাশাপাশি প্রিয়জনের জন্য একটু বিলাসবহুল শাড়ী উপহার দেয়ার রীতিটুকু যেন সাড়া হয় এ জামদানী শাড়ী দিয়েই। কেউ বা বসের মন জয় করতে তাদের পতœীকে পাঠিয়ে দেন এ দামী শাড়ী। সব মিলিয়ে জামদানী শাড়ী এখন ফ্যাশনের পাশাপাশি নারী ভূষণের অন্যতম পছন্দের পণ্যে রূপ নিয়েছে। তাই জামদানী কারিগর ও ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো অবস্থা দেখা গেছে। সরেজমিন ঘুরে আরো দেখা যায়, লাল রেশমি সুতায় বাহারী জড়ি,বাদলাই ও পাথর ব্যবহার করে কারিগরের শৈল্পিক নকশা বুনন করছে একেকটি জামদানী। শাড়ীর পাড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যতিক্রম সব কারুকাজ। যা নজর কাড়ে যে কোন বিলাসি ক্রেতার। তবে সাধারণ ক্রেতারা বাদ যায় না এ ঐতিহ্যের ছোঁয়া থেকে। কারণ তাদের জন্যও রয়েছে জামদানীর রকমভেদে বাহারী বস্ত্র তৈরির মূল্যভেদী শাড়ী। মাত্র দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকা দামী শাড়ীও তৈরি করছেন তারা। তাদের ব্যবহৃত কাঁচামালের মূল্য,আমদানী ব্যয়, কারিগরের নকশা ও তাদের মুজুরী ব্যয় ও সময় ব্যয়ের উপর এ মূল্য হয় কম বেশি। তাই মানভেদে এ শাড়ীর নি¤œ মধ্যবিত্ত¡ থেকে শুরু করে উচ্চ শ্রেণীর ক্রেতারা আগ্রহী হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই অর্ডার করেন। পেয়ে যান মনের মত নকশা আঁকা মনের মাধুরী মেশানো শখের শাড়ি।
তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়ার জামদানী কারিগত বিল্লাল হোসেন জানান, তাদের একেকটি শাড়ী তৈরিতে ১ সপ্তাহ থেকে ৩ মাসের বেশি সময় ব্যয় হয়। এসব শাড়ীগুলো স্থানীয় বিসিক শিল্প নগরীর হাট ছাড়াও পাইকারী ভাবে দেশের বৃহত্তম শপিং মলের কাপড় ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়। তাদের কেউ কেউ মহাজনী কায়দায় ঋণ দিয়ে এ পল্লীতেই গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। তাদের দৌড়াতেœ স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মাঝে মাঝে উচিত মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগও কোন ব্যবস্থা নেন না বলে জানান।
সুরিয়াব এলাকার ফকির জাহিদুল ইসলাম জানান, দেশের মসলিন কাপড়ের পর জামদানী শাড়ির কদর এখন বেশ।
প্রতি উৎসবেই এ শাড়ীর উৎপাদন ও ক্রয় বিক্রয় ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ জামদানী শাড়ী তৈরির জন্য আধুনিক ইলেট্রিক কোন ব্যবস্থা থাকলে এ পেশায় আশা লোকজন আরো লাভবান হতে পারতেন। একেকটি শাড়ী তৈরিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করায় এর দাম নেয়া হচ্ছে বেশি। তাই বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করে এ শাড়ী প্রস্তুত করার জন্য বিসিক কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ব্যবস্থা নিলে এ শিল্পটি সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসত।
জামদানী সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবি, যে ক্রেতারা জামদানী সম্পর্কে জানেন, তারা সরাসরি তাঁত থেকে কম দামেই এসব শাড়ী কিনতে পারেন। কারণ হিসেবে তারা জানান, এসব শাড়ীর মধ্যে যে শাড়ীটির উৎপাদন খরচ হাজার সে শাড়ী তাঁত থেকে ক্রয় করলে কেবল ৭হাজার টাকায় কিনতে পারেন। তবে একই শাড়ী কাপড় শপিংমলে গেলে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কিনতে হয় ক্রেতাদের। তাই জামদানী পল্লী থেকেই এ শাড়ী কেনার পরামর্শ দেন তারা।
স্থানীয় সাংবাদিক মাহবুব আলম প্রিয় বলেন,তারাব পৌরসভার পাশাপাশি রূপগঞ্জে উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামেই এখন এ জামদানী তাঁত গড়ে তোলা হয়েছে। এসব তাঁতে প্রায় দেড় হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬ হাজার কারিগর কাজ করছেন। এখানকার তৈরি তাঁতের জামদানী শাড়ী দেশের বাইরেও যাচ্ছে। যা এ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করে তুলছে। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতা বাড়ালে এ শিল্পের প্রসার আরো বাড়বে। ক্রেতারাও কমদামেই এ শাড়ী কিনতে পারবেন। প্রতি উৎসব ছাড়াও এখান কার দোকানগুলোতে থাকে সব রকম শাড়ী । ক্রেতারা পছন্দ করে এখান থেকে সরাসরি কিনছেন তাদের প্রিয় জনের জন্য।
এ বিষয়ে তারার পৌর মেয়র মিসেস হাছিনা গাজী বলেন, রূপগঞ্জের জামদানী পল্লীতে আসা পাইকারদের সুবিধা দিতে এ বছর ১০৯ কোটি টাকার বাজেট হতে একটি অংশ এর উন্নয়নে রাখা হয়েছে। এখানকার জামদানী ব্যবসায়ীদের হাট সম্প্রসারন করা হয়েছে। এখানকার নোয়াপাড়ার জামদানী পল্লীর সকল আধুনিক সুবিধা আদায়ের জন্য বিশেষ মহলের সহযোগীতায় উন্নয়নের কাজ চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদকে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ