বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
মীর আব্দুল আলীম
যানজটের ঢাকা শহর রমজান মাসে যেন একটু বেশিই স্থবির হয়ে পরে। গাড়ি চলতেই চায় না। বাড়ে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতিও। জনদুর্ভোগের যেন শেষ সীমা ছাড়ে। প্রতিবারের মতো এবারও তাই হয়েছে। বরং এবার যেন যানজট একটু বেশিই মনে হচ্ছে। যানজট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা চলছে, কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সিগনাল বাতির কৌশলেও ব্যর্থ হয়েছে সরকার। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, যানজট নিরসনের জন্য যখনই সেনাবাহিনী মাঠে নামানো হয় তখনই রাজধানী ঢাকা থেকে যানজট অনেকটা উধাও হয়ে যায়। প্রশ্ন হলো, সেনাবাহিনী যানজট নিরসন করতে পারে, তবে কেন ট্রাফিক পুলিশ পারে না? সেনাবাহিনীতো ভীন গ্রহরে বাহিনী নয়। ট্রাফিক পুলিশের মতো এ সরকারেরই একটি বাহিনী। সে যাই হউক রোজা আর ঈদকে নির্বিঘœ করতে ঢাকার যানজট যে কোনো মূল্যে কমাতে হবে। ট্রাফিক পুলিশ পারবে বলে মনে হয় না। তাই ঈদ উৎসবকে আনন্দময় করে তুলতে যানজট নিরসনে ঢাকায় সেনাবাহিনী নামানো জরুরি।
ঢাকাকে বলা হয় যানজটের শহর। রোজা আর ঈদ ছাড়াও বারমাসই এই শহরে যানজট লেগে থাকে। যানজটের কারণে ঢাকা আজ এক গুরুতর অসুস্থ নগরী। যানজট সমস্যার সমাধানের জন্য নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। এত কিছুর পরও যানজট সমস্যার সমাধানে কার্যকর অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। যানজট রাজধানী ঢাকার দেড় কোটি মানুষের মেগাসিটিকে স্থবির করে দিচ্ছে। প্রতিদিন যানজটে লাখ মানুষের হাজার হাজার কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। জ্বালানি অপচয় হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। রাজধানী ক্রমান্বয়ে অচল নগরীতে পরিণত হচ্ছে। জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তার স্বল্পতা এবং স্বল্পগতির অযান্ত্রিক যানবাহনের আধিক্যকে এ স্থবির অবস্থার জন্য দায়ী করা হয়। ট্রাফিক আইন না মানা, পরিকল্পনার অভাব, ফুটপাত দখল, প্রাইভেটকারের সংখ্যা স্পুটনিক গতিতে বৃদ্ধি পাওয়াও যানজটের অন্যতম কারণ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যানজটের কারণ হিসেবে ভাঙাচোরা রাস্তা এবং কারণে-অকারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িকেও দায়ী করা হচ্ছে। যেখানে সেখানে পার্কিং, ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো ইত্যাকার সমস্যা তো বহু পুরনো। কিছুতেই রাজধানীর যানজট সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। যানজট পরিস্থিতি দিনই দিনই জটিল হচ্ছে।
রাজধানীতে যানজটের কারণে বছরে বাণিজ্যিক ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতিদিন এর পরিমাণ ৮৩ কোটি। এছাড়া প্রতি কর্মদিবসে নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা যা একজন মানুষের ক্ষেত্রে তিন ঘণ্টা। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থেকে রাজস্ব গচ্চা যাচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকা। যানজটের কারণে রাজধানীতে পরিবহন প্রবেশ করতে না পারায় প্রতিদিন বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আয় নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা ১২ ঘণ্টায় রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনকে যানজটের কারণে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। যানবাহন এবং যানজট যে শহরের সচলতা শুধু কমিয়ে দিচ্ছে তাই নয়, আর্থিক ক্ষেত্রেও আঘাত হানছে। এখন যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা শহর সে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে এ শহর অসচল হয়ে পড়বে।
কি অবাক করা কথা! বিআরটিএতে প্রতিদিন গড়ে ২শ’ থেকে ৩শ’টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। এতে বোঝা যায়, প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় কতগুলো গাড়ি নামছে। কিন্তু প্রতিদিন কি ঢাকার রাস্তা বড় হচ্ছে? তবে গাড়ি যারা নামাচ্ছে তারা প্রয়োজনেই নামাচ্ছে। এগুলো ব্যবহার করছে। মানুষ এসব গাড়ি তাদের প্রয়োজনেই ব্যবহার করছে। এত গাড়ি আছে, প্রতিদিন এত নতুন নতুন গাড়ি নামছে, এরপরও পাবলিক বাসে মানুষ সিট পাচ্ছে না। ঠেলাঠেলি করে এমনকি গেটে ঝুলে অনেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এ নগরে চলাফেরা করছে।
আসলে আমাদের দেশটার কোন গতি নেই; আছে দুর্গতি। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৬৮ বছর। যানজটের যে অবস্থা তাতে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ঢাকার মানুষকে মোটমাট কত বছর রাস্তায় আটকে থাকতে হয়? এক হিসাবে তা প্রায় সাড়ে সাত বছর। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার যাত্রীরা যাতায়াতে সাপ্তাহিক ব্যয় করেন তিন ঘণ্টা ৩৭ মিনিট। ঢাকায় প্রতিদিনই লাগে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা।
আমাদের যতটুকু সড়কপথ আছে তাতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নানাবিধ পদক্ষেপ নিলে যানজট ৮০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা বিশ্বের বড় বড় শহর এমনকি হজকালীন সময় মক্কা মদিনা, অলিম্পিক গেমসহ নানা বড় আসরের সময় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সে সময় কত সহজেই না যানজট নিয়ন্ত্রণ করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। অলিম্পিকের মতো আসরে দিন গুনে জোড়-বেজোর নাম্বারের প্রাইভেট গাড়িগুলো চলাচল করতে দিচ্ছে। একদিন জোড় সংখ্যার গাড়িগুলো রাস্তায় চলার অনুমতি পাচ্ছে তো পরদিন পাচ্ছে বেজোড় সংখ্যার গাড়িগুলো। বিশেষ মুহূর্তগুলোতে বাইরের শহরের গাড়িগুলো শহরে ঢোকার অনুমোতি পাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে পূর্ব থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে পত্রপত্রিকায় ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে ফলে দুর্ভোগ হচ্ছে না, হচ্ছে না যানজটও। জোড়-বেজোড় গাড়িগুলো রাজধানীতে চলাচলের ক্ষেত্রে দিন গুনে চলাচল করতে দেওয়া যেতে পারে। ঢাকা মহানগীর যানজট, পার্কিং সমস্যা, পরিবেশ দূষণ ও জনদুর্ভোগের পরিপ্রেক্ষিতে আশু করণীয় হলো পার্কিং চাহিদা নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, বিনামূল্যে পার্কিং বন্ধ করা এবং অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করা, সর্বত্র জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে পার্কিং ফি নেয়া, পার্কিং থেকে প্রাপ্ত অর্থ পাবলিক পরিবহনের মানোন্নয়নে ব্যয় করা। নগরের ব্যস্ততম এলাকায় প্রাইভেট গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে কনজেশন চার্জ গ্রহণ করা, প্রাইভেটকারের লাইসেন্স সীমিত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে প্রাইভেট গাড়ির পরিবর্তে পাবলিক পরিবহনের ব্যবস্থা করা, প্রইভেট গাড়ি নির্ভর অবকাঠামো (ফ্লাইওভার, পার্কিংয়ের স্থান তৈরি) নির্মাণ না করা। পাবলিক পরিবহন, জ্বালানিমুক্ত যান ও পথচারীদের সুবিধা বৃদ্ধি করা। জায়গা ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা ও প্রাইভেট গাড়ির পার্কিং সমস্যা সমাধানে পার্কিংয়ের জন্য সময় ও স্থান অনুসারে অর্থ গ্রহণই যুক্তিযুক্ত।
যানজট রাজধানীর নগরজীবনকেই শুধু বিপযর্স্ত করে তুলছে তা নয়, ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য নগরী হিসেবেও পরিচিতি এনে দিয়েছে। যানজট সমস্যার সমাধানে আরও বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে। এ নির্মাণ কাজের জন্য ব্যস্ত সড়কের একাংশ ব্যবহৃত হওয়ায় ধারেকাছের সব সড়কে যানজট অনিবার্য হয়ে উঠছে। নির্মাণ কাজের শম্বুকগতি মানুষের ভোগান্তিকে দীর্ঘস্থায়ী করছে। যানজটে এমনই অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে যে, আধা ঘণ্টা দূরত্বের সড়ক অতিক্রম করতে গড়ে সাত-আটগুণ পর্যন্ত সময় লাগছে। রাজধানীর যানজটের জন্য প্রাইভেটকারের মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যা বৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, রিকশার পাশাপাশি প্রাইভেট কারের আধিক্য অচলাবস্থার সৃষ্টি করছে। তবে অভিজ্ঞজনদের মন্তব্য, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা যানজটের জন্য প্রধানত দায়ী। ঢাকার রাজপথের এক বড় অংশ অবৈধ দখলকারীদের দখলে চলে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই অবৈধ দখলদারিত্বের সঙ্গে রাজনৈতিক টাউট, পাড়া-মহল্লার মাস্তান এবং পুলিশের সম্পর্ক থাকায় রাজধানীর সড়কগুলো দখলমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
রাজধানীর যানজট সহনীয় মাত্রায় আনতে স্বল্প গতির যানবাহন ও প্রাইভেটকারের সংখ্যাধিক্যের দিকে নজর দেয়া দরকার। ট্রাফিক আইন যাতে সব ক্ষেত্রে কড়াকড়িভাবে মানা হয় সে ব্যাপারেও যতœবান হতে হবে। ফুটপাত থেকে দোকানপাট উঠিয়ে দেয়া, যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং দিনের ব্যস্ত সময়ে প্রাইভেটকার চলাচল কমিয়ে আনার কথাও ভাবতে হবে। রাজধানীতে জনসংখ্যার তুলনায় সড়কের সংখ্যা এমনিতেই কম। তারপরও রয়েছে স্বল্পগতির রিকশা ও প্রাইভেটকারের আধিক্য। ফুটপাত দখল করে দোকানপাট চালানো কিংবা রাস্তায় যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং এ মেগাসিটিতে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ হলো প্রাইভেট গাড়ির অপরিকল্পিত পার্কিং। ঢাকার প্রায় সব সড়কেই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে গাড়ি পার্কিং। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচলের জায়গা কমে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আবার পার্কিংয়ে কোন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারে আরও উৎসাহিত হচ্ছে। গাড়ি বাড়ছে, বাড়ছে পার্কিং সমস্যাও। পার্কিং সমস্যা নিরসনে ইতিপূর্বে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও সমাধান মেলেনি। যানজট নিয়ন্ত্রণ, সম্পদ ও জায়গার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পার্কিং সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বের করা জরুরি। রাজধানীর যানজট নিরসনে সঠিক পরিকল্পনা এবং সঠিক সিদ্ধান্তের অভাব দেখা যায়। পার্কিং সমস্যা নিরসনে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প কিছু নেই। ঢাকার রাস্তা, ফুটপাত, খেলার মাঠ, পার্ক সর্বত্রই প্রাইভেটকার পার্কিংয়ের জন্য নামমাত্র মূল্যে বা বিনামূল্যে জায়গা বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া ভবনে আবশ্যিকভাবে কার পার্কিংয়ের জন্য জায়গা রাখা ও পার্কিংয়ের জন্য ভবন নির্মাণ করে শহরে প্রাইভেটকারকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। মতিঝিল এলাকায় নির্মিণাধীন সিটি সেন্টারে ৫০০ প্রাইভেটকার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে ১০টি ফ্লোর বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় প্রতিটি ভবনে প্রাইভেটকারের পার্কিং সুবিধা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যার ফলে ভবিষ্যতে প্রাইভেটকার বৃদ্ধি পাবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের হিসাব মতে মতিঝিল-দিলকুশা এলাকায় প্রতিদিন প্রায় চার হাজার প্রাইভেটকার পার্কিং করা হয়। প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ না করা হলে এবং সেই সঙ্গে বিকল্প পরিবহন সুবিধা দিতে না পারলে শুধু পার্কিং সুবিধা বৃদ্ধি করে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
যানজটের কবল থেকে ঢাকাকে রক্ষা করতে ঘন ঘন মেট্রো ট্রেন সার্ভিস, পাতাল রেল, ট্রানজিট সুবিধা, পার্কিং মিটার, দ্বিতল বাস সার্ভিস চালুর বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন জরুরি। অন্যথায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে না। এছাড়া প্রাইভেটকার, রিকশা, বেবিট্যাক্সিসহ বিভিন্ন পরিবহনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। মতিঝিলকে বাণিজ্যিক জোন ঘোষণা করে বাস ছাড়া সকল পরিবহন বন্ধ করে দিতে হবে। রাজধানী ঢাকার মোট আয়তনের ৬/৭ ভাগ রাস্তা। আনর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী রাস্তা ২৫/৩০ ভাগ থাকার কথা থাকলেও ঢাকায় তা নেই। যেটুকু রাস্তা আছে এর অনেকাংশই দখলে। ফেরিওয়ালা, যত্রতত্র পার্কিংসহ অবৈধ স্থাপনার দখলে চলে গেছে রাজধানীর অনেক রাস্তাই। এছাড়া প্রায় ৩০ ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন যার প্রত্যেকটির গড় গতিবেগ আলাদা হলেও ঢাকার রাস্তার একসঙ্গে চলে। যানজটের পেছনে এটি একটি অন্যতম কারণ। সিটি করপোরেশন থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশার সংখ্যা বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে পাঁচ লাখের বেশি। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকায় প্রকৃত অর্থে পরিবহনের সংখ্যা কত তা নির্ধারণ করা কঠিন। এছাড়া যানজট নিরসন ও জনপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ডকে (ডিটিসিবি) আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
যানজট নিরসনের কথা ভাবার আগে প্রশ্ন এসে যায়, রাজধানীতে কত মানুষের নাগরিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব? ঢাকা শহরের আয়তন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০ লাখ মানুষ বসবাস করতে পারে। অর্থাৎ এই শহরে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ মানুষকে নাগরিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব। তাহলে ঢাকায় জনসংখ্যা কত? এ নিয়ে আছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ২০৩০ সালে রাজধানীতে জনসংখ্যা হবে দুই কোটি। ঢাকা সিটি করপোরেশন বলছে সোয়া কোটি। জাতিসংঘের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ২২ লাখ ২১ হাজার। আর ঢাকায় লোকসংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখ। ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছয় শতাংশ। ১২ বছর পর ঢাকার জনসংখ্যা হবে প্রায় আড়াই কোটি। বিশ্বব্যাংকের মতে রাজধানীর বর্তমান পরিস্থিতিতে যানজট নিরসন অসম্ভব। তাহলে ঢাকাবাসীর কী হবে? যানজটেই আটকে থাকবে ঢাকাবাসী? না এই দুঃসহ যানজট থেকে ঢাকাবাসীকে মুক্ত করতেই হবে। বিশেষ করে রোজা আর ঈদকে নিবিঘœ করতে যানজট মুক্ত ঢাকা চাই আমরা। আর এ জন্য প্রয়োজনে ঢাকার রাস্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।