Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুটপাতের ইফতারি গরীবের ভরসা

| প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীতে বিলাসবহুল ইফতারির অভাব নেই। উচ্চমানের হোটেল থেকে শুরু করে বিশেষ বিশেষ বাজার রেস্তোরায় রয়েছে ব্যয়বহুল ইফতারি। কিন্তু গরীবের ভরসা ফুটপাতের ইফতারি। বিলাসী ইফতারি আইটেমের নাম হয়তো এসব গরীব মানুষের শোনা হয়নি। দিনভর রোজা রেখে ফুটপথের ইফতারিতে তারা সন্তুষ্ট। ঢাকা শহরে গার্মেন্ট শ্রমিকের বাস। আছে কয়েক লাখ রিকসা চালক। দিনমজুরে সংখ্যা কয়েক লাখ। এর সাথে নির্মাণ শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিকসহ অন্যান্য নি¤œমানের পেশায় আছে হাজার হাজার মানুষ। বিশাল সংখ্যাক এই জনগোষ্টির জন্য রাজধানীর ফুটপথ হয়ে ওঠে ইফতারি বাজার।
মতিঝিলের রিকশা চালক রাজ্জাক বলেন, রোজা রেখে কষ্ট করে রিক্সা চালাই। যা আয় করি তা দিয়ে ভালো ইফতারি করলে বাড়িতে কি পাঠাবো। এজন্য ফুটপথ থেকে ছোলা-মুড়ি বা দু’একটা পিয়াজু-জিলাপি দিয়ে ইফতারি করি। সামনে ঈদ। বাড়িতে টাকা নিয়ে যেতে হবে। বাড়তি খরচ করলেতো টাকা থাকবে না।
রাজধানী ঢাকায় ৫০ লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে যাদের আয় সীমিত। এসব সীমিত আয়ের মানুষরা সাধারণ ইচ্চবিত্তের ইফতারি করতে পারে না। অত্যাধিক দাম হওয়ায় তারা দামি ইফতারি দিকে আগ্রহী হয় না। রোজা রাখার পর ইফতারিতে সামান্য কিছু নিয়েই তারা সন্তুষ্ট থাকে।
ফুটপথের ইফতারিতে সাধারণত পেয়াজু, জিলাপী, সিঙ্গাড়া, সমুজা, ছোলা বাজা, মুড়ি, বিভিন্ন আইটেমের চপ, বুরিন্না, রুটি, হালিমসহ নানা আইটেম পাওয়া যায়। এসব আইটেমের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় নিম্ব আয়ের মানুষের জন্য কিছুটা সাশ্রয়ী হয়। স্বল্প আয়ের মানুষেরা সেকারণে ফুটপথের ইফতারিতেই ভরসা রাখে।
রাজধানীর আব্দুল্লাপুর, উত্তরা, বাড্ডা, মহাখালি, গাবতলী, শ্যামলী, মিরপুর, ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন, মতিছিল, গুলিস্থান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, কমলাপুর, মুগদা, বঙ্গবাজারসহ প্রায় সব একালাতে বিকেল হলেই রাস্তার ধারে বসে ইফতারির দোকান। এসব দোকানের খরিদ্দার হয় স্বল্প আয়ের মানুষেরা।
বেশিরভাগ রিকশা চালক, দিনমজুর, গার্মেন্টকর্মীরা ফুটপাতের এসব দোকান থেকে ইফতারি কেনে। রিকশা চালকরা সাধারণত ইফতারি নিয়ে রিকশায় বসেই সেরে ফেলে ইফতারি। অনেকে আবার গ্রæপ গ্রæপ একত্রে রাস্তার পাশে বা কোন স্থানে বসে ইফতারি করে। গার্মেন্টস কর্মীদের বেশিরভাগ ইফতারি কিনে নিয়ে বাসায় যায়। ক্লান্ত শরীরে তারা বাসায় গিয়ে ইফতারি করে। দিনমুজুরাও ইফতারি করে ফুটপাতে। ফুটপাতের হকাররা ইফতারি করে নিজ নিজ ভাসমান দোকানে। তবে হকারদের মধ্যে গ্রæপ ভিত্তিক ইফতারিটা তুলনামূলক বেশি হয়।
ফার্মগেট এলাকার আব্দুল জলিল বলেন, বাসা মিরপুর। দোকান রেখে বাসায় গিয়ে ইফতারি করা সম্ভব না। তাই দোকানে ইফতার করি। আমরা তিনজন আছি দোকানে। তিনজন মিলে একত্রে ইফতার করি।
ঢাকা শহরে বসবাস করা ছিন্নমূলের মানুষের পক্ষে ফুটপাতের ইফতারিও কিনে খাওয়ার সাধ্য হয় না। বেশিরভাগ ছিন্নমূল মানুষকে নির্ভর করতে হয় অন্যের ফেলে দেয়া অতিরিক্ত খাবারের উপর। ছিন্নমূল শিশুরা ইফতারির সময় হলেই অন্যের ইফতারির দিকে অসহায় ভঙ্গিতে হাত বাড়াতে শুরু করে। অনেকে তাদের খাবারের অংশ বিশেষ এসব ছিন্নমূল শিশুদের তাতে তুলে দেয়। তাতেই খুশি থাকে এসব শিশুরা। বেশিরভাগ শিশুই পাওয়া খাবার টুকু নিয়ে আবার পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে।
গুলিস্থানের ছিন্নমূল শিশু রাকিব বলেন, মা ইফতারি বানায় না। মানুষে দেয় তাই দিয়ে আমরা সবাই খাই। তার মায়ের সাথে আরো এক ভাই রয়েছে। তার পাওয়া খাবার পরিবারে তিনজনে মিলে খায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইফতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ