পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর তুরাগে তিন শিশুকে শ্বাসরোধ করে হত্যার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসময় ওই শিশুদের মায়ের লাশও উদ্ধার করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, তিন শিশুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। আর মায়ের মৃত্যু রহস্যজনক। এ ঘটনায় গতরাত ৭ টা পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। নিহত রেহানার বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ। তিনি সমাজ বিজ্ঞানে মার্স্টাস পাস বলে জানিয়েছেন তার বোন রোজিনা। তাদের দাবী রেহানা ও তার তিন শিশু সন্তানকে পরিকল্পতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তুরাগের কালিয়াটেক বটতলা এলাকায় একটি বাসা থেকে তিন সন্তানসহ মায়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন, রেহানা পারভিন (মা)এবং তার বড় মেয়ে শান্তা (১৩), মেজো মেয়ে শেফা (৯) ও ছোট ছেলে মুসাম্মিম সাদ (১)।
চার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, শিশুদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। মায়ের মৃত্যু রহস্যজনক। তাই তাঁর ঘাড়ের টিস্যু পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবে খোদা ইনকিলাবকে বলেছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তিন শিশু ও মায়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল মা আত্মহত্যা করেছে। কিন্ত ময়নাতদন্তের রিপোটের পর ধারণা করা হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। নিহতের স্বামী মোস্তফা কামাল ও নিহতদের আত্মীয় স্বজনেরা লাশের সাথে আছে। পরর্বীতে মামলা দায়ের হবে। নিহত রেহানা পারভিনের স্বামীর বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, একই জেলায় তার স্ত্রীর বাপের বাড়ি।
ওসি মাহবুবে খোদা জানান, প্রাথমিক তদন্তের পর ঘটনাস্থলে তিন শিশুর গলায় শক্ত করে ওড়না বাঁধা দেখতে পাই। পাশেই সিলিং ফ্যানে মাকে ঝুলে থাকতে দেখি। ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা জানতে তদন্ত চলছে বলেও জানান ওসি মাহবুবে খোদা।
নিহত রেহানার স্বামী মোস্তফা কামাল বলেন, রাত ১টার দিকে বাসায় ফিরে এ চিত্র দেখতে পাই। পরে পুলিশ এসে তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সকলকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি তুরাগ এলাকায় একটি সমিতিতে স্বল্প বেতনে কাজ করেন।
নিহত রেহেনার ভাই মাহবুব আলম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, এই চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ, কালিয়ারটেকের বাড়িটি তাঁর ভগ্নিপতি (রেহেনার স্বামী) মোস্তফা কামালের পৈতৃক সম্পত্তি। তাঁদের সম্পত্তির একটি অংশ ১৭ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। কিন্তু এই টাকার অংশ মোস্তফা কামালকে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে রেহেনার সঙ্গে মোস্তফা কামালের মা, দেবর, ননদ ও ননদের স্বামীর সাথে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এরই জের ধরে রেহেনা ও তাঁর সন্তানদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
গতরাতে রেহেনার স্বামী মোস্তফা কামাল বলেন, তার সংসারে আগে স্বচ্ছলতা থাকলেও সম্প্রতি দুরবস্থা নেমে আসে। তিনি বলেন,চট্রগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় বড় পদে অনেক বেতনে চাকরি করতাম। পরে ফ্ল্যাটের ব্যবসা থেকে শুরু করে অনেক কিছু করেছি। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান দিয়ে কিছুদিন ধরে অনেক কষ্টে চলতে হচ্ছিল। তিনি বলেন,শান্তা কামারপাড়ায় পরশমনি ল্যাবরেটরি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত, শেফা পড়ত প্রথম শ্রেণিতে। ওদের স্কুলের বেতনও ঠিকমতো দিতে পারতাম না। এসব নিয়ে রেহেনা দুর্ভাবনায় ছিলেন জানিয়ে কামাল বলেন, হয়ত টেনশন থেকে সে এই কাজ করেছে।
জরুরি বিভাগের যেখানে কামাল ছিলেন, তার অদূরেই থাকা রেহেনার স্বজনরা বলেন ভিন্ন কথা। রেহেনার বোন রোজিনা সুলতানা বলেন, শাশুড়ি, ননদসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তদের হত্যা করেছে। ১৭ বছর তাদের বিবাহিত জীবন। কোনোদিন আমার বোনকে শান্তি দেয়নি তারা।
হত্যা কেন করবে- প্রশ্ন করা হলে পাশে থাকা আরেক বোনের মেয়ে আসমা আক্তার বলেন, কামারপাড়ার ওই বাসার জমিটি রেহেনার শ্বশুরের। ২০টি টিনশেড ঘর রয়েছে এবং তার ভাড়া তুলতেন রেহেনার শাশুড়ি মাফিয়া বেগম ও ননদ কোহিনুর। ভাড়া তোলা নিয়ে খালার (রেহানা) সঙ্গে তারা (শাশুড়ি ও ননদ) অনেক ঝগড়া করত।
তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তোলার সপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে আসমা বলেন, সেখানে পাশের ঘরে ননদ ও শাশুড়ি থাকে, কিন্তু দেখেন এত বড় ঘটনার পর তারা কেউ হাসপাতালে আসেনি।
মিরপুর-১ এ নম্বর এলাকায় বসবাসকারী নিহত রেহানার বোন রোজিনা বলেন, রাতে রেহেনার মৃত্যুর খবর আমাদের অন্য ভাড়াটিয়ারা দিয়েছে, কিন্তু শ্বশুরবাড়ির কেউ দেয়নি। এটা থেকে আপনারা (সাংবাদিক) বুঝে নেন। তিনি আরো বলেন,এত সুন্দর সন্তানকে কোনো মা এভাবে হত্যা করতে পারে না।
রোজিনা জানান, তারা ৬ বোন ৪ ভাইয়ের মধ্যে রেহেনা ছিলেন পঞ্চম। ২০০০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেছিলেন তিনি, পরে সমাজ কল্যাণে এমএ ডিগ্রি নেন। রোজিনা বলেন,শাশুড়ি ও ননদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য অনেক চাকরি খুঁজেছে, কিন্তু ভালো কোনো চাকরি পায়নি।
হত্যার অভিযোগের বিষয়ে রেহেনার স্বামী কামাল বলেন, দেখুন, আমার মরেছে তিনজন সন্তন আর তাদের মরেছে একজন। কষ্ট তো আমারই বেশি হচ্ছে, তাই না।
কামালের দাবি, তার মা (রেহেনার শাশুড়ি) তিন মাস ধরে তাদের বাসায়ই আসেন না। কামাল জানান, ২০টি ঘরের মধ্যে তিনি তিনটি ঘর নিয়ে থাকেন এবং তার বোন কোহিনুর তিনটি ঘর নিয়ে থাকেন। বাকি ১৪টি ঘর ভাড়া দেওয়া, যার টাকা তার মা নেন।
অন্য কেউ হত্যা করতে পারে কি না- জানতে চাইলে কামাল বলেন, স্থানীয় দুই প্রভাবশালীকে ৫০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম ডেসটিনির ব্যবসার জন্য। সেই টাকা তো আর পাইনি, তাদেরও হাত থাকতে পারে। তবে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির’ নাম বলেননি কামাল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।