পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিয়ের বহুদিন পর কোন দম্পতি সন্তান সম্ভবা হলে ভবিষ্যতের স্বপ্ন সন্তানের আশায় যেমন আকুল থাকে, বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ তার চাইতেও অধির আগ্রহে একটি নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত ভাল নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে। যেকোন গণতান্ত্রিক সমাজ বা দেশে সব সময়ই নানা ধরনের নির্বাচন একটা নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কাছে জাতীয় নির্বাচন তেমন নয়, অনেক বেশি কাক্সিক্ষত। কী নাই আমাদের? বলতে গেলে সবই আছে। ভাগ্যবান উচ্চবিত্তের জীবনযাত্রা ধনী দেশের অনেক মানুষের চাইতেও উন্নত। লুটেপুটে যারা বিত্তের পাহাড় গড়েছে তাদের চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, খরচপত্র অনেক ধনী দেশের মানুষকেও হার মানায়। রাস্তাঘাট, দালানকোঠা, ব্যবসা-বাণিজ্য কী নেই? বলতে গেলে সবই আছে। তারপরও মানুষের মধ্যে শান্তি, স্বস্তি নেই। দেশের মালিক জনগণ, সিএস-আরএস তাদের নামে। মালিকানা আছে, কিন্তু দখল নেই। কেউ কারও কথা মানে না, শোনে না, শুনতে চায় না। আস্তে আস্তে সমাজ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এমন দুর্বল সমাজ ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করে। মানুষ যখন মূল্যহীন হয়, অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে তখন যেকোন অঘটন ঘটতে বা ঘটাতে পারে। সমাজের শক্ত নেতৃত্ব কর্তৃত্ব একটা দেশের জন্য সব থেকে বড় রক্ষাকবচ। সামাজিক গাঁথুনি ঠিক থাকলে অন্যসব দুর্বলতা সহজেই মোকাবেলা করা যায়। কিন্তু সমাজ ভেঙে গেলে ন্যায়-অন্যায়, প্রেম-প্রীতি-ভালবাসা, সত্য-মিথ্যা একাকার হয়ে গেলে যেকোন সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। কোন বিস্ফোরণই তেমন একটা সৃষ্টি করে না, বরং ধ্বংসই করে বেশি। আমরাও ঠিক তেমনি একটা ভয়াবহ অনিশ্চয়তা বা ধ্বংসের দিকে অসহায়ের মতো এগিয়ে চলেছি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি ভ‚মি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ যে দেশের মালিক সে ভাবনা থেকে তারা অনেক দূরে সরে গেছে। অমন নির্বাচনী প্রহসন উপেক্ষা কারো চিন্তায়ও ছিল না। পাকিস্তান কত নির্বাচনী প্রহসন করেছে। কিন্তু তারাও ভোট ও ভোটার ছাড়া অমন ন্যক্কারজনক নির্বাচনী প্রহসন করেনি। ’৭০ এর নির্বাচনে ইয়াহিয়া কত শর্ত দিয়েছিল, তার এলএফও মানে লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্কে আমাদের হাত-পা বাঁধা ছিল। তারপরও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে হয়েছে, ব্যালট পেপারে সিল দিতে হয়েছে। বিনা ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করেনি বা করতে পারেনি। কিন্তু ২০১৪ সালে সারা দেশ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। ৩০০ আসনের ১৫৩টিই অনির্বাচিত। বাকী ১৪৭ আসনেও কোন নির্বাচন হয়নি। ৪-৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচন কমিশন নিজেই স্বীকার করেছে, ৫০ কেন্দ্রে কোন ভোট পড়েনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন বলছেন, অংশগ্রহণ ছাড়া আর অমন প্রতিদ্ব›িদ্বতাহীন নির্বাচন তিনি চান না। তার মানে ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠিক ছিল না তার কথাতেই প্রমাণ হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের নির্দেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা সংসদ এবং সরকার পরিচালিত হবে। সংবিধানের ৬৫ পরিচ্ছেদের (২) অনুচ্ছেদ “একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিন শত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের (৩) দফার কার্যকরকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে লইয়া সংসদ গঠিত হইবে; সদস্যগণ সংসদ-সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন।” এই সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অনির্বাচিত। সেই অর্থে আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর, সংবিধান সম্মত না। কিন্তু তবু সংসদ আছে, সরকার আছে- এটাই বাস্তব। যখন যার নিয়ন্ত্রণে দেশ বা সমাজ থাকে, তখন সেই সব। যেমনটা এখন চলছে।
২০১৪ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে নানা সমস্যার কারণে এক সময় তত্ত¡াবধায়ক সরকার বাতিল করে নির্বাচিত বা যে সরকার থাকবেন সেই সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন কেউ মেনে নেয়নি, তবু নির্বাচনী প্রহসন হয়েছে। বিরোধী দল জনগণকে তেমন উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। বিরোধী দল বলতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি। এখন যে যাই বলুন করুন, বিএনপি মূল বিরোধী দল। স্বীকার করুন আর না করুন তাদের হাসি-কান্না সব দলের হাসি-কান্না। কিন্তু কেন যেন তারা কখনো প্রকৃত বিরোধী দলের ভ‚মিকা পালনে সফল হননি। ২০১৪ সালে বিরোধী দল বা বিএনপির ভোট বর্জন আমার চোখে পৃথিবীর ইতিহাসে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে সবচাইতে সফল প্রতিবাদ, নেতৃত্বের সফলতা। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভোট বর্জন করায় কেউ তাতে অংশ নেয়নি। সরকার তার জোট নিয়ে ভোট করেছে। অন্য কাউকে পায়নি। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বিনা অংশগ্রহণে আর কখনো কোন নির্বাচন হয়েছে কিনা সন্দেহ। ৩০০ আসনের ১৫৩ জনই বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় সংসদ গঠনের আগেই সে তার গ্রহণযোগ্যতা, সাংবিধানিক বৈধতা হারিয়েছে। তারপর যে অর্ধেক আসনে প্রহসন হয়েছে সেখানেও ভোটাররা অংশ নেয়নি। এত বড় সফলতা বিরোধী দল বা বিরোধী দলনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোন কাজে লাগাতে পারেননি। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত বড় দুর্বলতা বা ব্যর্থতা সফলতায় রূপ দিয়ে দিয়েছেন। তাহলে সফল নেতা কাকে বলবো? জননেত্রী শেখ হাসিনাকে, না খালেদা জিয়াকে? সরকারী দল থেকেও শেষ পর্যন্ত বলা হয়েছিল, এ নির্বাচন শুধু সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। সামনে সময় সুযোগ দেখে সবাই মিলেমিশে জাতীয় নির্বাচন করবো। সেটাও আদায় করতে পারেনি বিরোধী দল বিএনপি। আন্দোলন বিমুখবিরোধী দল যদি কিছু আদায় করতে না পারে সরকার তাকে কোন কিছু হাতে তুলে দেবে? তা কি কেউ কোন দিন দেয়? সরকার হারামকে প্রায় হালাল করে ফেলেছে। অথচ বিএনপি হালালকে হালাল করতে পারলো না। নির্বাচনের আগে সর্বদলীয় সরকার করা হলো। সংবিধানে যার কোন অনুমোদন বা স্বীকৃতি নেই। বিএনপিকেও মন্ত্রিত্ব দিতে চেয়েছিল। অংশ নিলে তাদেরকেও আসন ভাগ করে দেয়ার কথা ছিল। মনে হয় এ যেন কোরবানীর গোশত ইচ্ছে করলেই ভাগ দেয়া যায়। রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় কে বসবে সেটা নির্ধারণ করবেন দেশের মালিক জনগণ। মানুষের চাইতে দলীয় শক্তি বেশি হলে যা হয় আমাদের দেশে তাই হয়েছে। ভোটাররা কাকে কোন আসন দিবে সেটা নয়, জননেত্রী হাসিনা বা বেগম খালেদা জিয়া কাকে ক’টা আসন দিবেন সেটাই এখন বড় বিবেচ্য। এটা মোটেই শুভ নয়, ঠিক নয়। অনেকেই ভাবছে, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ভুল করেছে। যারা অংশগ্রহণ করেনি, তারাও কেউ কেউ অমনটা ভাবছে। তাই হয়তো সামনের নির্বাচনে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। দলীয় সংগঠন এবং জনগণের সমর্থন না থাকলে সে হুমড়িতে কতটা কী হবে তা তারাই জানেন। তবে অবিশ্বাসের কালো ছায়ায় দেশ ঢেকে আছে। আমাদের খুব বেশি কিছু অভাব মনে হয় নাÑ যতটা আস্থার অভাব। তাই সবার আগে রাজনীতির উপর মানুষের আস্থা কী করে আসবে সেটা দেখতে হবে। দারোগা-পুলিশ, আমলা-ফইলা থাকায় সরকারী দল মারাত্মক দাপটে আছে। কিন্তু তারা কি কখনো পিছু ফিরে দেখে তাদের সম্মান কতটা? আগে সাধারণ পিয়ন-চাপরাশিদের যে সম্মান ছিল, তার থেকেও এখন অনেকের সম্মান কম- এসব কেউ কখনো কি ভেবে দেখেন? কেউ ভাবেন না। রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। রাজনীতি এখন ব্যবসায়ীদের হাতে। রাজনীতি এখন আর কোন সেবা নয়, রাজনীতি এখন ব্যবসা। সেখান থেকে জনতার রাজনীতি, জনতার দেশ কি করে জনতার হাতে ফিরে আসবে সেটা ভাবতে হবে।
সামনে একটি সুন্দর গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচন না হলে সেটা হবে দেশের জন্য মারাত্মক অমঙ্গল। তাই জাতিগতভাবে সামনের নির্বাচন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় বিরোধীদের চাইতে অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু সবার গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন সরকারী দলের জন্য বেশি জরুরী। যে যাই বলুন, আওয়ামী লীগ বর্তমানে যেভাবে আছে একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে ভাবিকালে নিজেকে প্রমাণ করতে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিএনপির চাইতে আওয়ামী লীগের বেশি প্রয়োজন। আবার সিল মেরে ক্ষমতায় গিয়ে আরো ২-৪ বছর নিশ্চয়ই থাকা যেতে পারে। কিন্তু সেটা কোন কাজ হবে না। কলঙ্ক হবে আয়ুব-ইয়াহিয়ার চাইতেও বেশি। এক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিপদ সব থেকে বেশি। একে তো তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, দেশের জন্য গণতন্ত্রের জন্যে বঙ্গবন্ধু তার জীবন দিয়েছেন। আমরা মুখে যতই বলি, আমাদের কোন চাওয়া-পাওয়া নেই, দেশের জন্য উৎসর্গকৃত প্রাণ- এসব কোনটাই পুরোপুরি সত্য নয়, আংশিক সত্য। আসল কথা সাধারণ মানুষ নেত্রী বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কীভাবে। নিশ্চয়ই রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক দক্ষতায় জননেত্রী শেখ হাসিনা এখন সবার উপরে। ১০০ বছর পর তিনি কি এমনটা থাকবেন? কত সম্রাট কত শাসক এসেছে, গেছে। জীবিতকালে যারা শুধুই জয় নিনাদ শোনেন তারাও- না তাদের জীবন অবসানে কত অপবাদী হয়ে আছেন। আমি নেত্রীর ক্ষেত্রে তেমন চাই না। আমি সবার জন্য শুভ চাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।