পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি কৃষি। দারিদ্র্য কমাতে অকৃষি খাতের তুলনায় কৃষি খাতের ভূমিকা তিন গুণ বেশী। বাংলাদেশে প্রায় ৬২ শতাংশ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন সেক্টরে। অথচ আনুপাতিক হারে বাজেটে কৃষি খাতের বরাদ্দ কমছেই। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে মোট ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট প্রস্তাবিত বাজেটের ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের (২০১৬-১৭) চেয়েও ৭৬ কোটি টাকা কম। গত বছর কৃষি খাতে মোট ১৩ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। অথচ ২০১২-১৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মোট বরাদ্দ সাড়ে ৮ শতাংশ বরাদ্দ ছিলো কৃষিতে। ২০১২-১৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ছিলো ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। আর প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজাটের আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার। গত ৫ বছরে জাতীয় বাজেটের আকার ফুলে-ফেঁপে যেখানে প্রায় আড়াই গুন বেড়েছে, তখন শতাংশের হিসেবে কৃষির বরাদ্দ কমেছে অর্ধেকের নিচে। আর এই ৫ বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বৃত্ত পেরুতে পারেনি কৃষি মন্ত্রনালয়।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষকের জনপ্রিয় কৃষি যন্ত্র ট্রাক্টরে এবার অর্থমন্ত্রী ২৪ শতাংশ ভ্যাট ও শুল্কারোপের প্রস্তাব রেখেছেন। যা গত অর্থ বছরের তুলনায় ১৯ শতাংশ বেশি। এটাকে এক ধরনের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বলছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ট্রাক্টরের মাধ্যমে ধান ও গম আবাদ করলে পাওয়ার টিলারের তুলনায় খরচ কম হয় প্রায় ৬৯-৮৪ শতাংশ। শ্রমিক সংকট ও সরকারের ভতর্‚কি সহায়তার কারনে গত কয়েক বছরে ট্রাক্টরের বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে প্রায় ৪০ শতাংশ হারে। এছাড়া ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রনালয় জানিয়েছে, আসছে বাজেটে এই ধারার খুব বেশি পরিবর্তন আসছে না। বিশেষ ভর্তুকির কথাও ভাবা হচ্ছেনা হাওড়ের হঠাৎ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্যে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাজেটে কৃষিকে পৃথকভাবে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন ছিলো। এটা না করলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকারের অঙ্গীকার তো ব্যাহত হবেই, পাশাপাশি এর মাধ্যমে কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করার ক্ষেত্রে সরকারের যে অঙ্গীকার তার সঙ্গেও প্রতারণা করা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র মতে, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরনের ফলে বাংলাদেশ ও এশিয়ার দেশগুলোর গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষির অবদান নানা প্রক্রিয়ায় বেড়েছে। ফসলের উৎপাদন, বিশেষ করে ধান ও ভুট্টার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল প্রযুক্তির ব্যবহার ভূমিকা রেখেছে। খাদ্যঘাটতি দূর করার পাশাপাশি কাজের সুযোগ সৃষ্টির এই বিষয়টিই কৃষিকে জাতীয় অর্থনীতি ও সমাজে এতটা গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। দেশের দারিদ্র্যের হার যে এত দ্রæত কমছে তার মূলেও এই কৃষি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সার্বিকভাবে এক শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়লে দারিদ্র্যের হার কমে শূণ্য দশমিক ১১ শতাংশ। আর কৃষি প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ বাড়লে দারিদ্র্যের হার কমে শূণ্য দশমিক ৩৯ শতাংশ। একই সঙ্গে দারিদ্র্য কমাতে অকৃষি খাতের তুলনায় কৃষি খাতের ভূমিকা তিন গুণ বেশী।
বর্তমান সরকার কৃষি ও কৃষকের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়ায় দ্রæত দারিদ্র্য নিরসন করতে সক্ষম হয়েছে। আর এক্ষেত্রে কৃষি উৎপাদনে যন্ত্রের ব্যবহার বড় ভূমিকা রেখেছে। বাজেট বিশ্লেষনে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে শুধুমাত্র কাস্টম ডিউটি হিসেবে ১ শতাংশ এবং এডভ্যান্স ট্রেড ভ্যাট হিসেবে ৪ শতাংশ আরোপ করা ছিলো। কিন্তু আগামী ২০১৭-১৮ বাজেটে তা পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে কাস্টম ডিউটি (সিডি) হিসেবে ১ শতাংশ এবং এ্যাডভ্যান্স ট্রেড ভ্যাট হিসেবে ৪ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে এর সঙ্গে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ এবং অগ্রিম কর ৩ শতাংশ আরোপ করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে এখন ট্রাক্টরের ওপর ২৪ শতাংশ শুল্কারোপ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তাই গত বছরের তুলনায় আগামী অর্থ বছরে আরো অতিরিক্ত ১৯ শতাংশ শুল্কারোপ করতে হবে। এতে প্রতিটি ট্রাক্টর প্রায় দুই লাখ টাকা বাড়তি মূল্য যোগ হবে। ফলে কৃষক বাড়তি দামের কারনে ট্রাক্টর কেনায় আগ্রহ হারাবে।
শীর্ষস্থানীয় ট্রক্টর আমদানিকারক ও বিপননকারী প্রতিষ্ঠান দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, সার্বিকভাবে কৃষিতে শ্রমিকসংকট ও উৎপাদন বাড়াতে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকার দাম কমিয়ে আনতে নগদ প্রনোদনাসহ নানান উদ্যোগ গ্রহন করেছে। শ্রম ও সময় সাশ্রয়ের জন্য কৃষকের কাছে খুব জনপ্রিয় এখন ট্রাক্টর। তবে ২৪ শতাংশ ভ্যাট ও নানান ধরনের শূল্কারোপ করা হয় তাহলে দাম বৃদ্ধি পাবে। যা কৃষকের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই কৃষকের স্বার্থে ও শস্য উৎপাদনে দিকটি বিবেচনায় নিয়ে এটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন তিনি।
জানা গেছে, চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার উৎপাদন খরচ কমানো ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে ট্রাক্টর। পাওয়ার টিলারের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর ট্রাক্টর। একটি পাওয়ার টিলার পরিচালনা করে দিনে খরচ হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা। কৃষকের আয় হয় ৩ হাজার টাকা। ফলে তার নীট আয় থাকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। অন্যদিকে একজন কৃষক ট্রাক্টর পরিচালনা করলে তার খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। সে আয় করতে পারে প্রায় ১২ হাজার টাকা। ফলে তার নীট আয় থাকে ৬ হাজার টাকা।
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের যৌথ জরিপ থেকে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩৫ হাজারের বেশি ট্রাক্টর চালু রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের নিকট থেকে নগদ প্রনোদনা ও নীতি সহায়তার কারনে ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ট্রাক্টরের বাজার ৩৫-৪০ শতাংশ হারে সম্প্রসারণ হয়েছে। ২০১২ সালে ৪ হাজার ৬০০ ট্রাক্টর আমদানি করা হয় যার বাজার মূল্য ছিলো প্রায় ৪১৪ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ টি ট্রাক আমদানি হয়েছে। ট্রাক্টর আমদানি ও বিপনেন নেতৃত্ব দিচ্ছে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ট্যাফে ব্র্যান্ড, কর্ণফ‚লী লিমিটেডের মাহিন্দ্র, মেটাল প্লাসের আইসার, পারফরমেন্স মোটরসের স্বরাজ, গেটকোর নিউ হল্যান্ড এবং এসিআই মোটরসের সোনালিকা ট্রাক্টর। তবে ভ্যাট ও শূল্করোপের কারনে খাত সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই শ্রমিক সংকটের কারনে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরনের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। এজন্য কৃষি যন্ত্রপাতির দাম কৃষকের নাগালের মধ্যে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। নগদ প্রনোদনা, দেশীয় শিল্পের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি উৎপাদনসহ অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বাজেটের শুল্কারোপ ও ভ্যাট আরোপের বিষয়েটি এখনও তাদের নজরে আসেনি। তবে কৃষকের স্বার্থে এ ধরনের শুল্কারোপ কিংবা দাম বাড়তে পারে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে কৃষি আর কৃষকের কল্যাণে বরাদ্দ দেওয়া ভতুর্কির ব্যবহার নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। সদ্য শেষ হতে যাওয়া বছরের কৃষি ভর্তুকির পরিমান ছিলো ৯ হাজার কোটি টাকা। তবে সেই ভর্তুকির ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ই করতে পারেনি কৃষি মন্ত্রনালয়। অর্থন্ত্রনালয়ের দাবি, কৃষি মন্ত্রনালয়ের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে অর্থ ছাড়ের পরিকল্পনা করা হয়। অর্থবছরের শেষ ভাগে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলার অকাল বন্যায় তলিয়ে যায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির কাঁচাপাকা ধান। যার আর্থিক মূল্য সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। নষ্ট হয়েছে প্রায় ২২০ টন মাছ। আর সার্বিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রধানমন্ত্রীর হাওড় অঞ্চল সফরে, ক্ষতি পুষিয়ে নেবার আগ পর্যন্ত কৃষকদের ঋণের ব্যবস্থার কথা বললেও বাজেটে যে পরিমাণ অর্থ কৃষিখাতে বরাদ্দ করা হয়েছে তা দিয়ে কিভাবে তা সম্ভব সে বিষয়েও বিস্তর সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।