পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : রাজধানীর কদমতলী থানার মদিনাবাগ এলাকার ঘটনা। ইমরান নামে এক যুবক গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর সময়ই পুলিশের সন্দেহ হয়। নিহত ইমরানের বৃদ্ধা মা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি সবারই দাবি- ছেলেটি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের চোখ আটকে যায় নিহত ইমরানের শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তাক্ত কাটা দাগে। এটা কি ¯্রফে আত্মহত্যা- নাকি খুন? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে ইমরানের অসম প্রেমের করুণ কাহিনী।
কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, নিহত ইমরানের ফেসবুকের আইডি ও মেসেঞ্জার থেকে কিছু তথ্য উদঘাটন করা হয়। এরপর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সব কাহিনী। মৃত্যুর আগে নিহত ইমরান তার মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ওপেন করে রেখেছিল। মোবাইলের অপর পাশে ছিল ইমরানের ভালোবাসার পাত্রী নুসরাত (ছদ্মনাম)। ভালবাসার পাত্রীকে দেখানোর জন্যই ছিল তার যতো আয়োজন। ওসি কাজী ওয়াজেদের ভাষায়, মৃত্যুর আগে ভিডিও কলদিয়ে ইমরান তার মৃত্যুর সকল আয়োজন নুসরাতকে দেখায়। তার প্রস্তুতি ছিল ওড়নার ফাঁসের গিটটা ঠিকমত হল কিনা, ওড়নার উপরের অংশ ফ্যানের হুকের সাথে ঠিকমতো বাঁধা হলো কিনা, এবং ঘরের দরজাটা ঠিকমত লাগানো হল কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। ইমরানের ধারনা ছিল, এতসব আয়োজন দেখে এবার নিশ্চয় বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে নুসরাত। সিগারেট আর মশার জলন্ত কয়েল নিজের শরীরে ঠেকিয়ে পোড়ানোর লাইভ দৃশ্য, ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ার লাইভ দৃশ্য আর বেøড দিয়ে নিজের বুক কেটে ফিনকি দিয়ে বের হওয়া বুকের তাজা রক্ত লাইভ দেখিয়ে নুসরাতের মন গলাতে চেয়েছিল ইমরান। তার সর্বশেষ ধারণা ছিল, এতোকিছুতেও মন গলাতে না পারলেও আতœহত্যার প্রস্তুতির লাইভ দৃশ্য দেখে নিশ্চয় মন গলে যাবে।
ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, এমনই বিশ্বাস নিয়ে মঞ্চ সাজানো শেষে খাটের উপর দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনের ডাটা অন করে ফেসবুক-এ ঢুকে সরাসরি নুসরাতের ইনবক্সে ভিডিও কল দেয় ইমরান। এর আগেও সে অনেকবার নুসরাতকে ইমোশনাল বøাকমেইল করার চেষ্টা করেছে। উদ্দেশ্য বিয়েতে রাজি করানো। ভিডিও কলে ক্যামেরা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্রথমে সে নুসরাতকে ফাঁসির মঞ্চসহ পুরো ঘরটা দেখায়। বহুবার এসব দেখে অভ্যস্ত নুসরাত ভিডিও কলে এসব না করতে সাধ্যমত বোঝায় ইমরানকে। কিন্তু ইমরানের একটিই কথা-অন্য কারো সাথে বিয়ে হোক তা দেখা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এভাবে কথোপকথনের একপর্যায়ে মোবাইলের চার্জ শেষ হওয়ায় অফ লাইনে চলে যায় নুসরাত। কিন্তু ফোন অন করে আত্মহত্যার পথে এগিয়ে যায় ইমরান। কদমতলী থানার ওসি বলেন, ইমরানের আত্মহত্যার ভিডিওটি আমরা উদ্ধার করেছি। একজন সুস্থ মানুষ ভিডিওটি দেখতে পারবে না। একটা মেয়ের জন্য কিভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় ছেলেটি। ভিডিওতে দেখা যায়, একহাতে মোবাইলের ক্যামেরা তাক করে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় ফাঁসির মঞ্চের দিকে। ভিডিও রেকর্ড হওয়া অবস্থায়ই গলায় ঢুকিয়ে ফেলে ওড়নার ফাঁস। যমদূতকে নিজেই আমন্ত্রণ জানায় প্রেমের পাগল ইমরান। এক তরফা ভালবাসার জন্য বৃদ্ধা মায়ের কথাও ভুলে যায় সে। মাত্র কয়েক মিনিটেই তছনছ হয়ে যায় ওর অসুস্থ বিধবা মায়ের সব স্বপ্ন। ফাঁসের টানে গলা ধরে আসলে হাত থেকে পড়ে যায় ফোন। কিছুক্ষণ মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করার পর নিথর হয়ে যায় ইমরানের ঝুলন্ত দেহ।
তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইমরানের মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগেই মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় নুসরাতের অজানা থেকে যায় অনেক কিছু। পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা ইমরানের ফেসবুক খুলে ইমরান সেজে নুসরাতের সাথে চ্যাটিংয়ে অংশ নেয়। তখন নুসরাত আবারও জানায়, সামাজিকতা ও পারিবারিক কারণে ইমরানকে তার বিয়ে করা সম্ভব নয়। পুলিশ তখন নিশ্চিয় হয় ইমরানের একতরফা প্রেমের বিষয়টি।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত বছরের আগষ্টে ফেসবুকে পরিচয় ইমরান ও নুসরাতের। এরপর ইনবক্সে কথা চালাচালি। ক’দিনের মধ্যেই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এক রেস্টুরেন্টে দুজনের সাক্ষাত। এরপর ভালো লাগা, ভালোবাসা। দেখা সাক্ষাতের দু’চার দিনের মধ্যেই অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী নুসরাত বুঝে যায় ইমরান খুববেশি লেখাপড়া জানে না। এমনকি মাধ্যমিকের গন্ডিও পাড়ি দিতে পারেনি। কিন্তু বেসামাল প্রেমে পাগল নাছোড়বান্দা ইমরান শিক্ষার চেয়ে তার ভালবাসাকেই বড় করে দেখতে চায়। নুসরাতকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে সে। নুসরাত তাতে রাজি হয় না। পুলিশ জানায়, নুসরাতের বাবা একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা। বাবার সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করেই নুসরাত ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। এরপর থেকেই ইমরান বিভিন্ন কায়দায় নুসরাতকে রাজি করানোর চেষ্টা চালায়। বিয়ের দাবিতে সে নুসরাতকে ভিডিও কল করে কখনও বেøড দিয়ে বুক কাটে, কখনও ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে দেখায়, আবার কখনও জলন্ত সিগারেটের ছ্যাকা দেয় নিজের শরীর পোড়ায়।
কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, অসম প্রেমের এই কাহিনী চলে কিছুদিন। বেসামাল অবস্থায় চলতে চলতে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকলেও অবুঝ প্রাণ দু’টিকে কাউন্সিলিং করার জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ। অসময়ে ঝরে যায় ইমরানের প্রাণ। শেষ হয় অসম প্রেমের করুণ পরিণতি। কদমতলী থানার মদিনাবাগ এলাকায় ইমরানের বাবার বাড়ি আছে। সে বাড়ি ভাড়া থেকে আয়ের অর্থ দিয়ে চলতো ইমরানের বিধবা মায়ের সংসার। ইমরানের মৃত্যুর পর তার মা এখন একা। প্রায় এক মাস আগে ইমরানের মৃত্যু হলেও অসম প্রেমের করুণ পরিণতির কথা শুনে প্রতিদিনই মানুষ আসে ইমরানদের বাড়িতে। বৃদ্ধ মায়ের মুখে একমাত্র ছেলে ইমরানের গল্প শুনে চোখ মুছতে মুছতে তারা বেরিয়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।