মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ী মহলে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মার্কিন কয়লা উৎপাদকরা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও হতাশা প্রকাশ করেছে শিল্প, করপোরেশন ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের পর হোয়াইট হাউজের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তাদের। আমেরিকা ফার্স্ট শ্লোগানের অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প। সংগ্রামরত শিল্পগুলোয় মার্কিন কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এ প্রচারাভিযান হাতে নিয়েছেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের এ পদক্ষেপে সমালোচনা তৈরি হয়েছে ব্যবসায়িক মহলে। শিল্প নির্বাহীদের মতে, এ সিদ্ধান্ত বিদেশে মার্কিন কোম্পানিগুলোর দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত করবে ও উদ্ভাবনকে দমিয়ে দেবে। এদিকে প্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের খবরে ওয়াল স্ট্রিটের ডাও জোনস সূচক দশমিক ৬ শতাংশ ঊর্ধ্বগতি দিয়ে শেষ হয়েছে। প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করার আগেই বেশ কয়েকটি প্রধান কোম্পানি চুক্তিতে থাকার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহŸান জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে। সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর হতাশা প্রকাশ করেছে কোম্পানিগুলো। মার্কিন বহুজাতিক কনগেøামারেট করপোরেশন জেনারেল ইলেকট্রিকের প্রধান নির্বাহী জেফ ইমেল্ট টুইটারে এক বার্তায় জানান, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বাস্তব ঘটনা। এ মূহূর্তে শিল্পকে নেতৃত্ব দিতে হবে। সরকারের ওপর নির্ভরশীল থাকা যাবে না। এদিকে হোয়াইট হাউজের উপদেষ্টা পদ ছেড়ে দিচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান এলন মাস্ক। টুইটারে তিনি প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল ছাড়ছেন বলে বার্তা দিয়েছেন। ইমেল্টের মতো জলবায়ু পরিবর্তন প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে তিনি জানান, প্যারিস চুক্তি প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্র বা বিশ্বের জন্য ভালো কিছু হবে না। বিনোদন জগতের অন্যতম উদ্যোক্তা ওয়াল্ট ডিজনির প্রধান নির্বাহী রবার্ট ইগলারও উপদেষ্টার পদ ছাড়ছেন বলে জানিয়েছেন। মরগান স্ট্যানলি, ইউনিলিভার, ইন্টেল ও অ্যাপলের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসহ দেশটির আরো বেশকিছু কোম্পানি ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম তেল-গ্যাস কোম্পানি এক্সনমবিল ও শেভরনসহ বেশকিছু জ্বালানি কোম্পানিও চুক্তিতে থাকার জন্য মার্কিন প্রশাসনকে চাপ দিয়ে আসছিল। ব্যবসায়িক মহলের পাশাপাশি ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ ক’টি অঙ্গরাজ্য ও শহর। এসব শহর স্বতন্ত্রভাবে পরিবেশ চুক্তি মেনে চলার কথা জনিয়েছে। গত বৃহস্পতিবারের ঘোষণায় ট্রাম্প জানান, তিনি পিটসবার্গকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, প্যারিসকে নয়। এর তাত্ক্ষণিক জবাব হিসেবে ডেমোক্রেট সদস্য বিল পেডুটো বলেন, পিটসবার্গের মেয়র হিসেবে আমি এটা নিশ্চিত করছি যে, আমাদের জনগণ, আমাদের অর্থনীতি ও ভবিষ্যতের জন্য আমরা প্যারিস চুক্তির রূপরেখা মেনে চলব। পিটসবার্গের পাশাপাশি ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটন প্যারিস চুক্তি মেনে চলার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের প্রায় ১৫ শতাংশ অবদান রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৫ সাল নাগাদ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের হার ২৬-২৮ শতাংশ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়া দরিদ্র দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘের তহবিলে ৩০০ কোটি ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত বৃহস্পতিবারের ঘোষণায় ট্রাম্প জানান, প্যারিস চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে অসুবিধায় ফেলেছে। তবে শর্ত পরিবর্তন হলে তিনি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখতে চান বলে জানিয়েছেন। নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করে, তখন পুরো বিশ্ব একে স্বাগত জানিয়েছে। এ চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক বড় অর্থনৈতিক অসুবিধার মধ্যে ফেলে দেয়ায় তারা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিল। একই সঙ্গে ট্রাম্প মার্কিন স্বার্থকে সবার আগে পূরণের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বিশ্ব আমেরিকাকে সবার আগে রাখেনি। কিন্তু তিনি তা করেছেন এবং সর্বদাই সেটা করে যাবেন। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মার্কিন কয়লা উত্পাদকরা। তাদের জন্য এ ঘোষণা বড় জয় হিসেবে হাজির হয়েছে। ওহাইয়োভিত্তিক কয়লা খনি কোম্পানি মারে এনার্জি এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। একই সঙ্গে এ সিদ্ধান্তকে ট্রাম্প প্রশাসনের বৃহত্তর পরিবেশ কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে উল্লেখ করেছে। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রবার্ট মারে বলেন, প্রতিশ্রুতি রক্ষার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অদম্য মূল্যবোধকে সমর্থন করছেন। পাশাপাশি কয়লা-সংশ্লিষ্ট কর্মসংস্থান রক্ষা এবং আমেরিকা ও সারা বিশ্বের জন্য স্বল্প খরচে নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছেন। পূর্ববর্তী ওবামা প্রশাসনের প্রতিষ্ঠিত মানদন্ড অত্যন্ত কঠোর ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আমেরিকান কোয়ালিশন ফর ক্লিন কোল ইলেকট্রিসিটির প্রেসিডেন্ট পল বেইলি। পাশাপাশি ট্রাম্পের প্যারিস চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবারের ঘোষণার পর সার্বিক বাজারের পাশাপাশি এক্সনমবিল ও শেভরনসহ তেলের শেয়ারে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ এবং নাসডাক সূচক নতুন উচ্চতায় শেষ হয়েছে। এএফপি, বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।