Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইরানের তীব্র ও কঠোর সমালোচনা

ট্রাম্প এখন সুন্নী আরব বিশে^র আলিঙ্গনে

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মেনাফন-জর্দান টাইমস : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সউদি আরব সফর তার বিকাশমান পররাষ্ট্র কর্মসূচি সম্পর্কে দৃষ্টি দেয়ার বিরল সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
এখন এটা নিশ্চিত যে ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশী নেতাদের আর তাদের দেশে গণতন্ত্রের ঘাটতি নিয়ে বক্তৃতা শোনাবে না। আর মানবাধিকার উন্নয়নের বিষয়টি অন্যান্য অগ্রাধিকারের সাথে পিছনে চলে যাবে।
১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে উৎসাহিত করার চেষ্টা এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান  বিরল বিষয় এবং বিশেষ করে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির আমলে এটা বিশেষ ভাবে সত্য।
একজন ব্যবসায়িক অংশীদার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রীতিনীতি পালন করেন কিনা তা এ প্রশাসনের কাছে অপ্রাসঙ্গিক। তবে ট্রাম্পের সফরের আসল খবর হল যে তিনি এখন সুন্নী আরব বিশ^কে সম্পূর্ণরূপে আলিঙ্গন করেছেন, তাদের বিরোধী ইরানের জন্য কিছুই রাখেননি।
রিয়াদে সুন্নী মুসলিম নেতাদের এক সমাবেশে বক্তৃতায় ট্রাম্প ইরানের প্রতি তীব্র ও কঠোর ভাষায় দেশটির সাম্প্রতিক নির্বাচনসহ তার বিভিন্ন বিষয়ে তিরস্কার করেন। তার মন্তব্যগুলো সুন্নী আরব নেতাদের কানে সঙ্গীত বলে মনে হয়েছে যারা ইরানকে অশুভ কর্মের মূল এবং ইরাকে শিয়া সশস্ত্র তৎপরতার উৎস বলে মনে করেন। ইসরাইলে ট্রাম্প ইরানি বিপদ বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দেন এবং প্রকাশ করেন যে কেন ইরান তার চিন্তার কেন্দ্রীয় বিষয়।
ট্রাম্পের বিশ^াস যে ইরানের সাথে মনস্তাত্তি¡ক লড়াইয়ে ইসরাইল ও সুন্নী আরব দেশগুলো আসলে মিত্র এবং ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের মত বিষয়গুলোতে বিচ্ছিন্ন না থেকে তাদের এ স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
ট্রাম্প হয়ত মনে করেন যে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটের গভীরে এ ধরনের অন্তর্র্দৃষ্টি  ফেলা একটি সমাধানে রূপ নিতে পারে যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে চূড়ান্তভাবে শান্তি আসবে অথবা কমপক্ষে ইরানের মোকাবেলায় এ অঞ্চলকে জোটবদ্ধ করবে।
ট্রাম্প যখন সউদি আরবের পথে ছিলেন তখন ইরানি ভোটদাতারা তাদের মধ্যপন্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত করেন এবং তাকে জরুরী প্রয়োজনীয় সংস্কার করার ক্ষমতা প্রদান করেন। ইরানের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে এবং তার ভালো কারণ রয়েছে।
ইসলামী জুরিদের নিয়ে অনির্বাচিত দি গার্ডিয়ান কাউন্সিল প্রত্যেক প্রার্থীকে যাচাই করে এবং বিপ্লবী গার্ড নির্বাচন দেখভাল করে। তা সত্তে¡ও রুহানি ও তার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী ইবরাহিম রইসির মধ্যে তুমুল প্রচারণা এ কথাই বলে যে নির্বাচনটি প্রহসন ছিল না। রুহানি ও রইসি দু’জনের প্রতিই ব্যাপক জনসমর্থন ছিল।
একজন কট্টরপন্থী ধর্মনেতা ও পাশ্চাত্য বিরোধী মনোভাবের মানুষ হিসেবে সাবেক প্রসিকিউটর রইসির ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তিনি যদি নির্বাচিত হতেন তাহলে পি৫+১ ( জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্য ও জার্মানি)-এর সাথে ইরানের পারমাণবিক চুক্তির ভবিষ্যত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারত।
ভোটে ভোটারদের উচ্চ হারে ভোট প্রদান , ৭৫ শতাংশেরও বেশী, এ কথাই বলে যে ইরানিরা পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসতে চায় না।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ধীর গতির কারণে যখন অধিকাংশ পরিবার এর সুবিধা পায়নি এবং বেকারত্ব এখনো উচ্চ পর্যায়ে, এ অবস্থায় ইরানি ভোটদাতারা সাধারণ ইরানিদের জীবনযাত্রা উন্নয়নে রুহানির আশ^াসের উপর আস্থা রাখতে চেয়েছে।
তবে ইরানিদের যে সংস্কার প্রয়োজন তার জন্য চাপ সৃষ্টি করার বিষয় ইরানিদের উপর নির্ভর করে। এটা সুস্পষ্ট যে সুন্নী আরব বিশ^ বা বর্তমান মার্কিন সরকার কেউই রুহানির সাফল্যের ব্যাপারে আগ্রহ পোষণ করে না। সাম্প্রতিক ইতিহাসে মার্কিন-ইরান সম্পর্ক বিশেষভাবে শঙ্কাপূর্ণ।
১৯৭৯ সালে ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভী ও তার ভীতিকর গুপ্ত পুলিশ বাহিনী সাভাকের বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থান ঘটে। ইরানি জনতা আমেরিকান দূতাবাস অবরোধ করে। তারা আমেরিকান কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনে ও ৪৪৪ দিন আটক করে রাখে। এক দীর্ঘ ও কঠিন আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত জিম্মিরা প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের অভিষেকের দিন মুক্তি লাভ করে।
তারপর থেকে এ পর্যন্ত ইরান জিম্মি অধ্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেনি এবং যুক্তরাষ্ট্রও ইরানকে ক্ষমা করেনি।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাকে আগ্রাসন চালায়,  বিশেষ করে আরব বিশে^ বহু পর্যবেক্ষক মনে করতেন যে সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন সুন্নী সংখ্যালঘু সরকারের অপসারণ এ অঞ্চলে ইরানের অবস্থান শক্তিশালী করবে।
ইরাক আগ্রাসনের পর শিয়া ইরাকি মিলিশিয়াদের ইরান অর্থায়ন ও আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত করে যারা নিয়মিতভাবে মার্কিন সৈন্যদের উপর হামলা চালায়। এই মিলিশিয়াদের সাহায্য করত বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর স্পেশাল ফোর্সেস ইউনিট যাদের পরিচালনা করেন ইরানের ধর্মীয় নেতৃত্ব।
ইরান কখনোই ইরাকে মার্কিন বাহিনীর উপর হামলার সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেনি। এটা বিস্ময়কর নয় যে ইরানের প্রতি বহু ঊর্ধ্বতন মার্কিন সামরিক নেতার দৃষ্টিভঙ্গিই এই বর্বর সময়কাল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটিয়ে ইসরাইলের টিকে থাকার অধিকারকেই শুধু চ্যালেঞ্জ করেননি, সুন্নী আরব নেতারা দীর্ঘদিন ধরে যে বিষয়ে শুধু চাপাবাজিই করেছেন, তিনি ইহুদি হত্যাকান্ডকে এক তামাশা ঘোষণা করে তার দেশকে আরো আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যান।
অতি সম্প্রতি ইরান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন প্রদান করে চলেছে, লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া হেজবুল্লাহকে দীর্ঘস্থায়ী সমর্থন প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
ইরানের প্রতি করণীয় নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যখন বিতর্কে লিপ্ত, এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে ইরানের সাথে করা পারমাণবিক চুক্তি সহজে পরিবর্তন করা যাবে না।
ট্রাম্প যখন মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন তখন সিরিয়াতে হস্তক্ষেপ  অব্যাহত রাখার কারণে ইরানকে শাস্তি দিতে মার্কিন কংগ্রেস আরেক দফা অবরোধ আরোপের কথা বিবেচনা করতে শুরু করে। ইরানের সমর্থনের কারণে যে সব গ্রæপ তার সমর্থন পাচ্ছে তারা সন্ত্রাসীর তকমা পেতে যাচ্ছেÑ যেমন হেজবুল্লাহ।
ইরানের তিক্ত অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বলে যে তারা হয়ত পরিবর্তনের কিনারায় এসেছে। কিন্ত দেশটির অন্ধকার উত্তরাধিকার, ১৯৭৯ সালের মার্কিন জিম্মি সংকট থেকে আজ সিরিয়ায় তার সম্পৃক্ততার প্রেক্ষিতে বহ মার্কিন নীিিত প্রণেতাই তাৎক্ষণিকভাবে ইরানকে ক্ষমা করা ও তার অতীতকে ভুলবেন না।
বাকি বিশে^র সাথে তার সম্পর্ক গড়তে ইরানের বহু কিছু করার আছে।
কিন্তু যদি সংস্কার সমূহ বাস্তবায়িত হয় ও টিকে থাকে এবং পারমাণবিক চুক্তিকে যদি কট্টরপন্থীদের কাছ থেকে সংরক্ষণ করা যায় তাহলে ইরান তার অতীত মুছে ফেলতে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একজন স্বাভাবিক সদস্য হতে পারবে।      
*নিবন্ধকার পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সাবেক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ডেনভার ইউনিভার্সিটির করবেল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ডিন এবং আউটপোস্ট ডট প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ২০১৭-র একজন লেখক।



 

Show all comments
  • ওয়াদুদ ৪ জুন, ২০১৭, ৩:২৯ এএম says : 0
    ট্রাম্পকে বিশ্বাস করা মুসলীম বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় বোকামি হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ