Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাবনায় মুড়ি বিক্রি করে স্বাবলম্বী ৫ গ্রামের মানুষ

প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ৩ জুন, ২০১৭

মুরশাদ সুবহানী, পাবনা থেকে : মুড়ি বিক্রি করে পাবনার ৫ গ্রামের নারী-পুরুষ স্বাবলম্বী-স্বাছন্দ্য জীবন-যাপন করছেন।  তারে সংসারে অভাব দূর হয়ে বইছে সুবাতাস। এই গ্রামগুলো জেলার মধ্যে আর্দশ গ্রামে পরিনত হয়েছে। পারিবারিক বিরোধ , কোন হানাহানি, ঝগড়া- বিবাদ নেই। সবাই কর্মব্যস্ত। কর্মজীবী এই গ্রামের মানুষ কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ততা থাকেন মুড়ি তৈরী ও বিক্রির কাজে। এমনি দিনের চেয়ে পবিত্র মাহে রমজান মাসে  তাদের  ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়। তাদের দীর্ঘদিনের শ্রম ও সাধনায় মুড়ি তৈরি এই অঞ্চলে শিল্পের রূপ নিয়েছে। পাবনার ‘মুড়ি গ্রাম’নামে পরিচিত এ গ্রাম গুলো হলো, পাবনা শহর থেকে প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের মাহমুদপুর, শ্যামপুর, বিলকোলা, গোপীনাথপুর, ভবানীপুর ও রাঘবপুর। কয়েক যুগধরে বংশ পরম্পরায় এসব গ্রামের মানুষদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন মুড়ি তৈরি ও বিক্রি করা। এ গ্রামের হাতে তৈরী কেমিক্যাল মুক্ত মুড়ির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। রোজাদারদের কাছে ইফতারের আকর্ষণ মুড়ি। ছোলা মুড়ি ছাড়া ইফতার অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ভেজাল মুড়ি চাপে বেজালমুক্ত দেশী  মুড়ির স্বাদ বুলতে বসেছেন অনেকেই।  
এই গ্রামগুলোতে কেমিক্যাল মুক্ত মুড়ি ভাজা  হয়। এই মুড়ির চাহিদা বেড়েছে। হাতে তৈরি এ মুড়ি ভাঁজতে  ব্যস্ত সময় পার করছেন মুড়ি গ্রামের নারী-পুরুষ। পাবনা শহর মুক্তিযুদ্ধের আগে এই গ্রামে প্রথম মুড়ি তৈরি শুরু করেন এই গ্রামের বাসিন্দা  হাসান আলী। সেই থেকে শুরু। কালক্রমে মুড়ি ভাঁজার কাজ মাহমুদপুর  পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী শ্যামপুর, বিলকোলা, গোপীনাথপুর, ভবানীপুর, রাঘবপুর সহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রামে। এখনও সবাই বাপ-দাদার পেশা হিসেবে মুড়ি উৎপাদনকে ধরে রেখেছেন।
এই সব গ্রামের  প্রতিটি বাড়িতেই চলছে মুড়ি তৈরির কাজ। শ্যামপুর গ্রামের আলী হোসেন জানান, শৈশব থেকেই তিনি মুড়ি তৈরি ও বিক্রির সাথে  সঙ্গে জড়িত। তিনি আরো জানান, গ্রামের পুরুষরা হাট থেকে ধান কেনা, ধান ভাঙ্গানো এবং উৎপাদিত মুড়ি বাজারে বিক্রি আর বাড়ির নারীরা ধান সেদ্ধ, শুকানো, মুড়ি তৈরি সহ নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন।
এই গ্রামের  মুড়ি তৈরি কাজে নিয়োজিত সুফিয়া খাতুন জানান, মূলত স্বর্ণা, বিআর ১১, বিআর ২৯, এবং আউশ ধান থেকে তারা মুড়ি তৈরি করেন। এর মধ্যে আউশ ধানের মুড়ির স্বাদ ভালো হওয়ায় বাজারে তার চাহিদা সবচেয়ে বেশি।  মুড়ি ভাজতে কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। এক মন ধান থেকে ২২ থেকে ২৪ কেজি মুড়ি তৈরি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে এক মন ধানের মুড়ি বিক্রি করে হাতে লাভ থাকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
এব্যাপারে পাবনা বিসিকের শিল্পনগরীর উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জে.এন পাল সাংবাদিকদের জানান, মাহমুদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মুড়ি তৈরির বিষয়টি তাদের  জানা। তারা কেমিক্যালমুক্ত মুড়ি তৈরি করেন এটা খুবই ভাল। এ সমস্ত কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। তিনি মুড়ি তৈরী সাথে নিয়োজিত এই গ্রামের লোকজনদের  বিসিক কার্যালয়ে যোগাযোগ  করলে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়ার ব্যস্ততা করা হবে। তিনি আরো জানান, বিসিক বাওয়ালী ও শুধু চাষীদের উপর ঋণ সুবিধা প্রদান করে আসছে। কুটির শিল্পকে উৎসাহিত করতে বিসিকের এই কার্যক্রম শুধু শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং  এর সাথে জড়িতদের সাবলম্বী করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাবনা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ