পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাঠ্য নয়- এমন অন্তত ৩ হাজার টাইটেলের ৪০ হাজার কপি বই ও জার্নাল কিনছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কেনা হচ্ছে এসব বই। এরই মধ্যে ৫ কোটি টাকার বই ক্রয়ের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। আরও ১০ কোটি টাকার ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রয়োজনীয়তা থেকে নয়- বরং প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অর্থ লোপাটের উদ্দেশ্যেই বই ও জার্নালগুলো কেনা হচ্ছে-মর্মে অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর একটি নথি থেকে জানা গেছে এসব তথ্য। নথিতে ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন খাতে কেনাকাটার নামে অর্থ লোপাটের বিশদ বিবরণও রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় অন্যান্য ক্রয়ের সঙ্গে কেনা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বই ও জার্নাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, বইগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতেই নেই। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উচ্চ শিক্ষায় সাধারণত : জার্নাল বা বইয়ের সর্বশেষ সংস্করণ শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। কিন্তু এমন সব বই ক্রয়ের তালিকায় রাখা হয়েছে সেগুলো ৩০-৪০ বছর আগে পড়ানো হতো। এখন এগুলো গবেষণায় রেফারেন্স হিসেবে শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকের-কারোরই কোনো কাজেই আসবে না।
উল্লেখিত তথ্য মতে, ১৫ কোটি টাকার বই ও জার্নাল কেনার জন্য ২০২০ সালের ২৩ জুলাই পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ইজিপি) টেন্ডার (প্রপোজাল আইডি নং-৪৭৮৫৬১) আহ্বান করা হয়। ওই বছর ৩১ আগস্ট ছিল টেন্ডার খোলার তারিখ। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর)’র ৫৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী (যৌথ উদ্যোগ) (১) ক্রয়কারী, এককভাবে বা যৌথ উদ্যোগ গঠনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে কার্য ও ভৌতসেবা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাগতসেবা ক্রয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু পাবিপ্রবি’র প্রকল্পের আওতায় সরকারি অর্থে (পাবলিক ফান্ড) বই এবং জার্নালগুলো ‘গুডস’ বা ‘পণ্য’ হিসেবে কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৩ হাজার টাইটেলের অন্তত ৪০ হাজার কপি বই/জার্নাল কেনা হবে- মর্মে টেন্ডারে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই ক্রয় প্রক্রিয়ার কমিটিতে রাখা হয়নি কোনো লাইব্রেরিয়ানকে। যেসব জার্নাল এবং বই কেনা হচ্ছে- এগুলো পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে নেই। রেফারেন্স বই হিসেবেও কোনো কাজে আসবে না। বই এবং জার্নালগুলো ৩০ থেকে ৪০ বছরের পুরোনো।
বিজ্ঞানের উৎকর্ষ ও তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লবের এ যুগে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নিত্যনতুন আপডেট ভার্সনের পেছনে ছুটছেন। এমন বাস্তবতায় কেনা হচ্ছে পুরোনো বই। টেন্ডারে উল্লেখিত বই ও জার্নালগুলো বহু আগের বিধায় অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে ‘নির্ঝর এন্টারপ্রাইজ’ এবং ‘অরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল ইঙ্ক’র স্থানীয় দু’টি প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহে বেশ কিছু অবিক্রিত বইয়ের স্টক ছিল। কৌশলে সেই বই ও জার্নালগুলোই ‘খাওয়ানো’র চেষ্টা চলছে। এটি সরকারি অর্থ হরিলুটে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং প্রতিষ্ঠান দু’টির মালিকের গোপন সমঝোতায় যৌথ প্রয়াস বলে উল্লেখ রয়েছে নথিতে।
প্রতিষ্ঠান দু’টির বিরুদ্ধে বই সরবরাহ না করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া এবং পাইরেটেড বই সরবরাহ করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদক মামলা করেছে। একাধিক তদন্ত এবং অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ দু’টি প্রতিষ্ঠান কালোতালিকাভুক্ত। এ পরিস্থিতিতে ‘নির্ঝর এন্টারপ্রাইজ’ এবং ‘অরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল ইঙ্ক’র একজন সাবেক কর্মচারীর মাধ্যমে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বই ও জার্নাল ‘বিক্রি’র করছে। মূল উদ্দেশ্য, যেনতেন প্রকারে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ হাতিয়ে নেয়া। উদ্দেশ্য চরিতার্থে সূক্ষ্ম পরিকল্পনা অনুসারেই পাবিপ্রবি বই ও জার্নাল কেনার টেন্ডারটি সাজানো হয়।
টেন্ডারের করিজেন্ডামে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০২০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ একবছর আগে টেন্ডারে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ৫ কোটি টাকা থাকতে হবে। পছন্দের সুনির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বই কিনতেই এমন সব শর্ত দেয়া হয় যাতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিতে না পারে। শর্ত মেনে ওই টেন্ডারে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে হাক্কানি পাবলিশার্স সর্বনিম্ন দরদাতা (১০ কোটি ৮১ লাখ ৭০ হাজার ৯৫০ টাকা) হয়। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হয় ‘নির্ঝর এন্টারপ্রাইজ’ (১০ কোটি ৮১ লাখ ৭২ হাজার, ৮৬ টাকা)।
কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। কেন কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি-এর কোনো ব্যাখ্যা প্রতিষ্ঠানটি দেয়নি। দ্বিতীয়বারের টেন্ডারেও হাক্কানি পাবলিশার্স সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। কিন্তু তাতেও কার্যাদেশ না দিয়ে তৃতীয়বারের মতো টেন্ডার করা হয়। তৃতীয়টিতে সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও কোনো ব্যাখ্যা ছাড়া চতুর্থবারের মতো টেন্ডার ডাকা হয়। ১৫ কোটি টাকার টেন্ডারকে ভেঙে তিনটি সিঙ্গেল লটে ৫ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়।
আর এই টেন্ডারে কার্যাদেশ দেয়া হয় ‘এ.এইচ. ডেভলপমেন্ট পাবলিশিং হাউজ’ নামক অখ্যাত একটি প্রতিষ্ঠানকে। মূলত : ‘নির্ঝর’ এবং ‘অরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল ইঙ্ক’র একটি বেনামি প্রতিষ্ঠান। টেন্ডারে যেসব শর্তজুড়ে দেয়া হয় তার কোনোটিই এই প্রতিষ্ঠানটির নেই। ভিসি-পিডি’র সঙ্গে গোপন আঁতাত করে জনৈক মঞ্জুরুল ইসলাম রাতারাতি জাল কাগজপত্র তৈরি করে টেন্ডারে অংশ নেয়। দরপত্রে উল্লেখিত শর্তপূরণ করা হয়েছে কি-না যাচাই-বাছাই না করে ক্ষমতার অপব্যহারের মাধ্যমে ‘এ.এইচ. ডেভলপমেন্ট পাবলিশিং হাউস’কে ৫ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়।
শর্তের মধ্যে ছিল বই ও জার্নাল সরবরাহে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ‘এ.এইচ. ডেভলপমেন্ট পাবলিশিং হাউস’র বয়সই ১৫ বছর হয়নি। গত ৫ বছরে সিঙ্গেল লটে ১০ কোটি টাকার বই সরবরাহ করতে হবে। ‘এ.এইচ. ডেভলপমেন্ট পাবলিশিং হাউস’ এ সংক্রান্ত যে কাগজপত্র দেয় সেসব সম্পূর্ণ ভুয়া। শর্তে ‘পাইরেটেড’ এবং ‘ফটোকপি’ গ্রহণযোগ্য নয়- মর্মে উল্লেখ করা হলেও উল্লেখিত বইগুলোর অধিকাংশেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই পাইরেটেড ও ফটোকপি সরবরাহ করতে হবে। কিংবা কোনো ধরনের সরবরাহ না করেই প্রকল্পের ‘রিসিভ কমিটি’ বই-জার্নাল সরবরাহ করা হয়েছে- মর্মে বিল পরিশোধের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
টেন্ডারে উল্লেখিত বই ও জার্নালের মধ্যে রয়েছে : (১) Mechanical Eng.: Tubal Cain, Hardening, Tempering and Heat Treatment (Workshop Practice), Special Interest Model Books, Latest বইটির লেখক Hardening, Tempering and Heat Treatment (Workshop).. এর প্রকাশক ট্রান্স আটলান্টিক পাবলিকেশন। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ সালে। বাজারে এখন বইটির কোনো অস্তিত্ব নেই। আরেকটি বই হচ্ছে : Salesmanship|। বইটির লেখক C.A. Kirkptrick এটি প্রকাশ করে সাউথ-ওয়েস্টার্ণ পাব: কোং। প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে। এই বইটিরও অরিজিনাল কোনো কপি বাজারে নেই। (৩) Sales Management-Concepts & Cases বইটির লেখক Douglas J. Dalrymple & William L. Cron.. লেখক Wiley প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। এটিও একটি দুর্লভ বই। (৪) The Theory of Financial Decisions নামক বইটির লেখক Charles W Haley Lawrence D. Schall প্রকাশক- McGraw-Hill Inc প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। এটিও বাজারে পাওয়া যায় না। এরকম অন্তত : ২০টি দুর্লভ বই রয়েছে যেগুলোর পাবিপ্রবি’তে পড়ানোই হয় না।
অতিরিক্ত লাইব্রেরিয়ান মো: হাফিজুর রহমান বলেন, বই কেনা হচ্ছে প্রকল্পের আওতায়। ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানগণ যেসব বই-জার্নাল কেনা প্রয়োজন মনে করেছেন সেগুলোরই তালিকা দিয়েছেন। এর বেশি আমি কিছু জানি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এম. রোস্তম আলী বলেন, শিক্ষকেরা যে চাহিদাপত্র দিয়েছেন তার ভিত্তিতেই বই কেনা হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় বই-জার্নাল ক্রয়ের অভিযোগ সত্য নয়। আপনারা (সংবাদ মাধ্যম) এসবে কান দেবেন না।
অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক জিএম আজিজুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের অফিসে এসে কথা বলুন। টেলিফোনে কিছু বলব না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।