পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মামলার মোটিভ ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা : প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার আয়োজন চলছে -প্রফেসর ড. আমানউল্যাহ
ইনকিলাব রিপোর্ট : রাজধানীর বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার প্রকৃত অপরাধীদেরকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে। অভিযুক্ত ও গ্রেফতারকৃত আসামীরা ধরা পড়ার পরেও মামলার মোটিভ ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে হোটেল রেইনট্রিকে টার্গেট করে এর মালিকপক্ষকে নানাভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। এমনকি এই হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার একজন বিদেশি হওয়ার পরেও তাকে নানাভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের দুই কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের নামে ওই বিদেশিকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। বৈধ ওয়ার্ক পারমিট থাকার পরেও বার বার তাকে তলব, জিজ্ঞাসাবাদ ও কাগজপত্র দেখার নামে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এতে করে রেইনট্রি হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক ফরগেটসহ গুলশান-বনানীতে কর্মরত আরও শত শত বিদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর বিদেশিদের মধ্যে যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর করতে সরকারের বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। স্বস্তির পরিবেশ ফিরে আসতে না আসতেই ধর্ষণের ঘটনা বাদ দিয়ে কয়েক বোতল মদের ইস্যুতে রেইনট্রির জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক ফরগেটকে হয়রানি করা কোনোভাবেই উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর ড. এএসএম আমানউল্যাহ বলেন, একজন বিদেশিকে খামাখা বিরক্ত করলে বা হয়রানি করলে বিদেশি ইনভেস্টরদের কাছে অন্যরকম মেসেজ যাবে। তাতে করে আমাদের দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট হবে। তিনি বলেন, রেইনট্রি একটি প্রতিষ্ঠান। একটা প্রতিষ্ঠানে কোনো ঘটনা ঘটতেই পারে। আজ রেইনট্রিতে ঘটেছে কাল অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ঘটবে। আমি চাই এই ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি হোক। কিন্তু তাই বলে মূল ঘটনা বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠান নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, এখন যা কিছু করা হচ্ছে তা প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার আয়োজন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গতকাল এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, রেইনট্রির ম্যানেজার বিদেশি হলে তার ওয়ার্ক পারমিট আছে কি না দেখলেই চলে। কিন্তু তাই বলে বার বার তাকে তলব করা, জিজ্ঞাসাবাদের নামে হেনস্তা করা উচিত হবে না। তিনি বলেন, তার বৈধ কাগজপত্র থাকলে সে দেখাবে। এর বেশি কিছু হলে অবশ্যই ওই বিদেশি বিচার চাইতে পারবে। এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের প্রতিবেশি দেশের এরকম হাজার হাজার নাগরিক আছে। তাদেরকে দেখেও না দেখার ভান করলে- সেটা তো আলাদা জিনিস।
গত ৬ মে বনানী থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, গত ২৮ মার্চ জন্মদিনের আমন্ত্রণ জানিয়ে রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে তিনি এবং তার এক বান্ধবীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়েছে। এই ঘটনার পর পুলিশ একে একে মামলার অভিযুক্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এরা হলো, সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, বিল্লাল হোসেন, সাদমান ও সাকিফ। এর মধ্যে সাফাত আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে। মামলার পর পরই শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আপন জুয়েলার্সের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার জব্দ করেন। একই সাথে তারা রেইনট্রি হোটেলে অভিযান চালিয়ে কয়েক বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেন। সেই উদ্ধারকৃত কয়েক বোতল মদের উসিলায় ডাকা হয় রেইনট্রির মালিকপক্ষকে। মদ ছাড়াও ভ্যাট, আয়কর প্রসঙ্গে তাদের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া হয়। এরপর রেইনট্রির জেনালের ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক ফরগেটকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওয়ার্ক পারিমিটের কাগজপত্র দেখার নামেও তাকে জ্ঞিাসাবাদের নামে পরোক্ষভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, মূল ঘটনা পাশ কাটিয়ে আপন জুয়েলার্স ও রেইনট্রিকে নানাভাবে হেনস্তা করার ঘটনা মিডিয়ায় যাতে ফলাও করে প্রচার হয় সে ব্যবস্থাও পাকাপোক্ত করা হয়। অনেকের মতে, এতে করে স্বাভাবিকভাবেই মূল ঘটনা আড়াল হয়ে যাচ্ছে। অনেকেরই প্রশ্ন- শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগ কেনো শুধুই আপন জুয়েলার্স ও রেইনট্রিকেই চোখে দেখছে। তারা কেনো অন্য জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান বা অন্য হোটেলগুলোকে দেখছে না? সেগুলোতে কি মদ বিক্রি হয় না? কয়েকদিন আগে এনবিআর-্এর এক অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, শুধু রেইনট্রি নয়, গুলশান-বনানীর বহু হোটেলে এরকম মদ পাওয়া যাবে। অথচ শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের দুই কর্মকর্তা শুধু রেইনট্রি ও আপন জুয়েলার্স মিশন নিয়ে নেমেছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এএসএম আমানউল্যাহ বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার একটা পরিকল্পিত আয়োজন। কারন আমরা সবাই জানি, বনানীর ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতরা ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। প্রবীন এই সমাজ বিজ্ঞানী বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর বিদেশি যারা এখনও এদেশে আছেন তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া ও স্বস্তিতে কাজ করতে দেয়া আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু তা না করে শুল্ক ও গোয়েন্দারা যদি একজন বিদেশিকে বার বার জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি বা আতঙ্কের মধ্যে রাখে তবে সেটা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি বলেন, ওই বিদেশির যদি বৈধ ওয়ার্ক পারমিট থেকে থাকে তবে তাকে হেনস্তা করাও প্রকৃত ঘটনা ও প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা। শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা সেটা কেনো করতে যাবেন? তিনি বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ তাদের নিয়ম অনুযায়ি চলবে। তারা কোনো বিদেশিকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে বিদেশিরা এদেশে কাজ করতে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আর যারা এখনও কাজ করছে তারাও ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। সরকারের উচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা নেয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।