Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্থমন্ত্রীর স্বপ্নের বাজেট আজ

| প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব রিপোর্ট : আয় নেই; অথচ রেকর্ড ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট। নির্বাচন ঘিরে জনতুষ্টি অর্জনে একদিকে খরচের লম্বা তালিকা; অন্যদিকে আয় বাড়াতে ব্যবসায়ি মহলের চরম অসন্তোষের মধ্যেও নতুন ভ্যাট আইন চালুর সাহসী পদক্ষেপ। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চান উচ্চ প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। কমাতে চান মূল্যস্ফীতি। অথচ নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হতে যাওয়ায় শঙ্কিত ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। এমন বিপরীতমুখি গোলকধাঁধার মধ্যেই ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী আজ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন তাঁর স্বপ্নের বাজেট।
বাজেট ঘোষণায় বিরল অভিজ্ঞতার মুখে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। টানা ৯ এবং ব্যক্তিগত ১১তম বাজেট ঘোষণা করে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন নতুন উচ্চতায়। সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশের স্বপ্নচারী মুহিত তাই বরাবরের মত বাজেট দিয়ে প্রতিবছরই রেকর্ড গড়ছেন। আবার নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙছেন। যদিও ঘোষিত বাজেটের বিশালত্ব আর খুঁজে পাওয়া যায় না বছর শেষে বাস্তবায়ন অদক্ষতায় কাটাছেড়ার পর।  যেমনটি হতে যাচ্ছে চলতি বাজেটে। না কাঙ্খিত আয় হলো, না ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারলেন। রাজস্ব আহরণ করতে চেয়েছিলেন জিডিপি’র ৩৪ শতাংশ হারে, অথচ করতে পারছেন ২০ শতাংশ। ভেবেছিলেন, বছর শেষে এক লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা উন্নয়ন খাতে খরচ করতে পারবেন। অথচ দশ মাসে পারলেন ৬৫ হাজার কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে মাত্র ৫৫ শতাংশ। তাহলে বাকি দুই মাসে কীভাবে খরচ করবেন বাকিটা? এ প্রশ্নের উত্তর যাই হোক, অর্থমন্ত্রী আবারও নিজের শ্রেষ্ঠ বাজেট দেয়ার দ্বারপ্রান্তে।
আসছে বাজেটেও তাই ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বড় অংকের ধারাবাহিকতা। রাজস্ব লক্ষ্য ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর’র মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্য ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ১২ হাজার ২শ কোটি টাকা যা জিডিপি’র ৫ দশমিক শূণ্য ৪ শতাংশ। বাড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অথচ কমবে মূল্যস্ফীতি। এটা কি নির্বাচন ঘিরে সহজ জনপ্রিয়তার কৌশল?
নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে যখন ব্যাপক অসন্তোষ; সমালোচন ও বিতর্ক যখন চরমে, তখনও অর্থমন্ত্রী ১৫ শতাংশের ভ্যাট হার কার্যকরে অটল। রাজস্বের জন্য ইতিবাচক হলেও এ সাহসী পদক্ষেপ ঘিরেও আছে চ্যালেঞ্জ। দেশ এগুচ্ছে। বড় হচ্ছে অর্থনীতি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণে বাড়ছে বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান। তাই বাড়ছে বড় বাজেটের চাহিদা। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধু বড় বাজেট নয়, দক্ষতা বাড়াতে হবে আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রেও। তাহলেই সফল হবে বড় বাজেট ঘোষণার লক্ষ্য।
তবে অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে যতদুর জানা গেছে, আজ বাজেট ঘোষণার আগে মন্ত্রীসভার বৈঠকে পরিবর্তন আসতে পারে ভ্যাট হারে। একক ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। তবে ভ্যাটের হার এক শতংশ কমানো হলেও টার্নওভার ট্যাক্স ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হতে পারে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং চাওয়া হয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। তবে প্রতিবন্ধী আয়করদাতাদের কিছুটা আর্থিক সুবিধা দেয়া হতে পারে।
আজ বেলা আড়াইটায় বাজেট পেশ করার আগে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটটি অনুমোদন করিয়ে নেবেন।
আজ ঘোষণা করতে যাওয়া নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি বাজেটের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি এবং চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ২৬ শতাংশ বেশি। চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবায়ন ব্যর্থতার কারণে এই বাজেটের আকার ২৩ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে তিনলাখ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা।
বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোসহ বেশকিছু জনবান্ধব উদ্যোগের ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া ব্যাংকে স্থায়ী আমানতে ওপর আবগারি শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করা হতে পারে। ব্যাংকের সুদের হার কমে যাওয়ার পর আবগারি শুল্ক দ্বিগুণ করার খবরে উদ্বেগের মধ্যে আছেন ব্যাংকে আমানতকারীরা। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল।
বর্তমানে সঙ্কুচিত ভিত্তিমূল্যে কিংবা ট্যারিফ মূল্যের ভিত্তিতে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট দেয়া বেশকিছু পণ্য ও সেবাকে ভ্যাট অব্যাহতি দিতে যাচ্ছে সরকার। বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত খাতের সঙ্গে শেষ সময়ে এসে কৃষি, খাদ্য, শিক্ষাসহ আরও দুই শতাধিক পণ্য ও সেবা ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। বিশেষত যেসব খাতের কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল, এমন বেশকিছু খাত ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায় আসতে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, ১৭০টি পণ্য বাদে বাকি এক হাজার ৩৪৯টি আমদানিকৃত পণ্যের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসছে সরকার। কিন্তু তা সত্তে¡ও জনমনে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা কাটছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্বের ১৬০টি দেশে ভ্যাট কার্যকর আছে। এর মধ্যে হাতে গোণা কয়টি দেশ বাদে সব দেশেই ভিন্ন ভিন্ন হারে ভ্যাট ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই নতুন ভ্যাট আইন পরিপালন করা সম্ভব নয়। ফলে একধরনের সংকট তৈরি হতে পারে।
বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হবে ২৭ হাজার ৫শ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ভর্তুকি বাবদ থাকছে নয় হাজার কোটি টাকা। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতন এবং সরকার কয়েক দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে নতুন অর্থবছরে ভর্তুকির পেছনে সরকারের অর্থ খরচ কম হবে।
প্রবৃদ্ধির হার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ দশমিক ৪ শতাংশের লক্ষ্য থাকছে বাজেটে। সাময়িক হিসাবে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর লক্ষ্য ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৪ ভাগ হয়েছে প্রবৃদ্ধি। আসছে বাজেটে বৈদেশিক ঋণ এবং অনুদানের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ থাকবে। সঞ্চয় উৎসাহিত এবং পেনশনারদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আপাতত সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানো হচ্ছে না। তবে বাজেটের পরে কমানোর ঘোষণা আসবে বলে জানা গেছে। জিনিসপত্রের দাম সহনীয় রাখতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে।
এবার এডিপির আকার ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। আসছে নতুন অর্থবছরে মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হওয়া শুরু করবে। এ জন্য জাতীয় অগ্রাধিকার বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখে নতুন অর্থবছরের এডিপির আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ফাস্ট ট্র্যাকের প্রকল্প সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে এবারের বাজেটে। এজন্য চলমান আট মেগা প্রকল্পের জন্য ৩৩ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বাড়ানো হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দও বাড়ছে। মাসিক ভাতার পরিমাণ একশ থেকে দুইশ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বছরে দুটি উৎসব ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত আসছে বাজেটে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।



 

Show all comments
  • রাজিব ১ জুন, ২০১৭, ২:৫০ এএম says : 0
    তার জন্য স্বপ্নের কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষের জন্য কী তা আল্লাহই ভালো জানেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Rahman Sadman ১ জুন, ২০১৭, ১:২৩ পিএম says : 0
    আপনার জন্য হয়তো তবে সাধারণ জনগণের জন্য নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraf Hossain ১ জুন, ২০১৭, ১:২৫ পিএম says : 0
    এক কথায় মানুষ মারার বাজেট।
    Total Reply(0) Reply
  • Sana Ullah ১ জুন, ২০১৭, ১:২৬ পিএম says : 0
    বাঁশ তো দিলেন সাধারন জনগণকে! আর কি বাকী আছে??
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Pasha Jafree ১ জুন, ২০১৭, ১:৩০ পিএম says : 0
    গরীব মারার বাজেট।বাজেট এ গরীব আরও গরীব হবে।ধনিরা আর ও ধনী হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • samanur ১ জুন, ২০১৭, ৪:২৬ পিএম says : 0
    puratai paglamo ate notun lutpat barbe
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজেট

১৩ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ