Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দুর্বল বাজার মনিটরিং

| প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


০ দক্ষিন-পশ্চিমে রমজানে ঠকছেন ভোক্তা সাধারণ
০ এবার মোটা চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে
০ মাঠে ১৮টাকা আর ঢাকায় ৮০টাকা কেজি বেগুন


মিজানুর রহমান তোতা : ‘রমজান আসলেই মুনাফালোভীরা জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করে। এবারও তার ব্যতয় ঘটেনি। চালের মূল্য তো কমলো না, বরং উর্ধ্বমুখী। সবজি, মসলার মূল্যও বাড়ছে। শুনে থাকি বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়। কোথায় হয়। বাজার কর্মকর্তারা বলেন মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই। তাহলে হয় বলা হয় কিভাবে’-কথাগুলো প্রশ্নের সুরে বললেন যশোরের শিল্পশহর নওয়াপাড়ার প্রাইভেট চাকুরীজীবী খুলনার ডুমুরিয়ার আজিজুর রহমান। তিনি বললেন খোঁজ নেন, ‘স্মরণকালের মধ্যে এবারই প্রথম চাল উঠার সময় মোটা চালের মূল্য প্রতিকেজি ৪৪/৪৫টাকা উঠেছে। খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের সীমা নেই’। শুধু কান কথা নয়, একই ধরণের কথা ভোক্তা সাধারণের। বাস্তবে যশোর ও খুলনাসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাট-বাজারে দ্রব্যমূল্যের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। মাঝেমধ্যে কোথাও কোথাও বাজার পরিদর্শন করতে দেখা যায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। ঘরে আসার পর খুচরা ব্যবসায়ীরা মন্তব্য ছোড়েন ‘পাইকার, মজুদদার, মুনাফাখোর, সিন্ডিকেটদের লাগাম টানতে পারে না, ঘুরে ঘুরে শুধু আমাদের টানাহেচড়া করেন। আর বাজার কর্মকর্তারা আছেন শুধু প্রতিদিন বাজার দর লিখে নিয়ে যান আর উপরে পাঠান, এর বাইরে তাদের কোন কাজ নেই। কেন দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, কারা বৃদ্ধির মূলে এসব টাচও করেন না।
যশোরসহ এই অঞ্চল থেকে সবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চালান হয় বরাবরই। এ অঞ্চলে সারাদেশের মোট চাহিদার ৬৫ভাগ সবজি উৎপাদন হয়। রমজানের আগে মাঠের মূল্য ছিল এক কেজি বেগুন ১০/১২টাকা। এখন মাঠের মূল্য ১৮/২০টাকা। যশোরের বাজারে ৪০টাকা আর ঢাকার বাজারে ৮০/৯০টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মোটা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪/৪৫টাকা। মিনিকেট ৫১/৫২ টাকা, ২৮ চাল ৪৮/৫০টাকা, চিড়া প্রতি কেজি রোজার আগে ৩৮টাকা এখন ৫২টাকা, মসলা বিশেষ করে এলাচ কেজি প্রতি ২শ’টাকা থেকে আড়াইশো টাকা বেড়ে গেছে। চিনিসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের মূল্যও উর্ধ্বমুখী। সবজিসহ ভোগ্যপণ্যেও সিন্ডিকেটরা অতিমাত্রায় তৎপর একথা অকপটে স্বীকার করেছেন এই অঞ্চলের বেশ কয়েকজন খাদ্য ও বাজার কর্মকর্তা। মোদ্দাকথা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনা মাঠপর্য়ায়ে মোটেও কার্যকর হচ্ছে না। জেলায় জেলায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আছে  মনিটরিং সেল। মাঝেমধ্যে জোরদার মিটিং হয় ঠিকই। কিন্তু বাস্তবে কার্যকর ভূমিকা নেয়ার বিষয়টি অনুপস্থিত থাকছে। যার জন্য বাজার বিপদ নিয়ে ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা সবসময়। মাঠপর্যায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে দুর্বল অবস্থা দেখে কোনভাবেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না ভোক্তসাধারণ। একইসাথে বাজারের ব্যাপারে সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবস্থার কথা উঠে আসছে।
বাজার নিয়ন্ত্রলের ব্যাপারে আইন আছে, বাস্তবে প্রয়োগ নেই। এতে ভোক্তা সাধারণ নানাভাবে ঠকছেন প্রতিনিয়ত। কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনকারীরাও একইভাবে ঠকছেন। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে আইনটির প্রয়োগ কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় মুনাফালোভীরা কোন নিয়ম নীতি মানে না। তারা যেটি মূল্য নির্ধারণ করবে সেটিই যেন আইন। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালের এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেটস রেগুলেশন এ্যাক্ট ও ১৯৮৫ সালের সংশোধিত বাজার নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৬(১) ও ১৬(২) ধারামতে কৃষিজাত ও ভোগ্যপণ্যের ক্রয়মূল্য, বিক্রয়মূল্য ও মজুদ পরিস্থিতির তদারকির ক্ষমতা রয়েছে কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের বাজার কর্মকর্তাদের। কিন্তু বাস্তবে কোথাও আইনটির প্রয়োগ হতে দেখা যায় না। তাছাড়া ১৯৫৩ সালের মজুদবিরোধী আইন ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনেরও প্রয়োগ নেই। মুক্ত বাজার অর্থনীতির কোপানলে ওইসব আইন কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সেজন্য ক্রমাগতভাবে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বাজার। সুত্র জানায়, জেলা বাজার কর্মকর্তারা শুধু কোন জিনিসের কি মূল্য তার তালিকা করে সংশ্লি­ষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানোর রুটিনওয়ার্ক করে থাকেন। কিভাবে এবং কেন মূল্য বৃদ্ধি হলো, তার কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন না বলে অভিযোগ।
খাদ্য অধিদপ্তর, বাজার কর্মকর্তা ও মনিটরিং সেল সূত্র জানায়, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মাঠপর্যায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে ঢিলেঢালা অবস্থা। একেক বাজারে একেক মূল্য হাকছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। মূল্যবৃদ্ধির জন্য তারা দোষারোপ করছেন পাইকারী ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের। যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, নাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা মনিটরিং কমিটি নিয়ন্ত্রণ করার যতটুকু চেষ্টা করছে তা মূলত শহরকেন্দ্রিক। গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে খোঁজ নেয়ারও কেউ নেই। শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজার ও মুদি দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য আরো বেশী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজার মনিটরিং


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ