Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা ঢিলেঢালা মাঠপর্যায়ে সিন্ডিকেট বেপরোয়া

| প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


মিজানুর রহমান তোতা : আইন আছে, বাস্তবে প্রয়োগ নেই। আইনটি হচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণ আইন। ওই আইন প্রয়োগ ও বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য জেলায় জেলায় মনিটরিং ব্যবস্থা চালু থাকার কথা। বাস্তবে নেই বললেই চলে। যার ফলে ভোক্তা সাধারণ নানাভাবে ঠকছে প্রতিনিয়ত। কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনকারীরাও একইভাবে ঠকছেন। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে আইনটির প্রয়োগ কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।  
বাজার কর্মকর্তারা বেশীরভাগ  ক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলার বাজারে গিয়ে মূল্য তালিকা টাঙানো হয়েছে কিনা, ক্রয় বিক্রয় রশীদ ব্যবহার হচ্ছে কিনা, কোন পণ্যের কত মূল্য-সাধারণত এটি দেখে থাকেন। মাঠপর্যায়ের একজন বাজার কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে এর বাইরে সাধারণ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের সুযোগ বাজার কর্মকর্তাদের নেই। তিনি রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যম্যূ লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেন, নবান্নে চালের মূল্য এতটা বৃদ্ধির কোন যৌক্তিকতা নেই। তার মতে, আমদানীকৃত চালের উপর ভ্যাট আরোপ, মজুতদার, মুনাফালোভী ও সিন্ডিকেটদের কারসাজি চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণ। দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাসহ বিভিন্নস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় মুনাফালোভীরা কোন নিয়ম নীতি মানে না। তারা যেটি মূল্য নির্ধারণ করবে সেটিই যেন আইন।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, ১৯৬৪ সালের এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেটস রেগুলেশন এ্যাক্ট ও ১৯৮৫ সালের সংশোধিত বাজার নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৬(১) ও ১৬(২) ধারামতে কৃষিজাত ও ভোগ্যপণ্যের ক্রয়মূল্য, বিক্রয়মূল্য ও মজুদ পরিস্থিতির তদারকির ক্ষমতা রয়েছে কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের বাজার কর্মকর্তাদের। কিন্তু বাস্তবে কোথাও আইনটির প্রয়োগ হতে দেখা যায় না। তাছাড়া ১৯৫৩ সালের মজুদবিরোধী আইন ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনেরও প্রয়োগ নেই। মুক্ত বাজার অর্থনীতির কোপানলে ওইসব আইন কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সেজন্য ক্রমাগতভাবে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বাজার। জেলায় জেলায় বাজার নিয়ন্ত্রণ কমিটি ও মনিটরিং সেল আছে। যশোরসহ কয়েকটি জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও কোন কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। ভোগ্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে হৈ চৈ হলে তখন তড়িঘড়ি বাজারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহড়া দেয়া হয়।
সুত্র জানায়, জেলা বাজার কর্মকর্তারা শুধু কোন জিনিসের কি মূল্য তার তালিকা করে সংশিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানোর রুটিনওয়ার্ক করে থাকেন। এর বাইরে কোন দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় না। কিভাবে এবং কেন মূল্য বৃদ্ধি হলো, তার কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন না বলে অভিযোগ। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, যশোরে সবজি উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে। এখানে মাঠে এক মূল্য আর বাজারে ২/৩ গুণ বেশী মূল্য গুণতে হচ্ছে ভোক্তাদের। জেলার শহর আশোশের ৮/১০ কিলোমিটারের মধ্যে সবজির সব মাঠ এবং পাইকারী হাট। কেউ কখনো গিয়ে তদারকি করার প্রয়োজনবোধ করেন না। খাদ্য অধিদপ্তর, বাজার কর্মকর্তা ও মনিটরিং সেল সূত্র জানায়, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। মাঝেমধ্যেই জেলা বাজার কমিটির বৈঠক হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে মাঠেও নামছেন কর্মকর্তারা। কিন্তু বাস্তবে মাঠপর্যায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে ঢিলেঢালা অবস্থা দেখে কোনভাবেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না ভোক্তসাাধারণ। একেক বাজারে একেক মূল্য হাকছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। মূল্যবৃদ্ধির জন্য তারা দোষারোপ করছেন পাইকারী ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের। যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়াসহ কয়েকেটি জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা মনিটরিং কমিটি নিয়ন্ত্রণ করার যতটুকু চেষ্টা করছে তা মূলত শহরকেন্দ্রিক। গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে খোঁজ নেয়ারও কেউ নেই। শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজার ও মুদি দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য আরো বেশী।
সামনে পবিত্র রমজান মাস। রমজান আসলেই মুনাফালোভীরা জিনিসের মুল্য বৃদ্ধি করে। এবারও এখন থেকেই পায়তারা শুরু হয়েছে। সবজিসহ ভোগ্যপণ্যের সিন্ডিকেটরা অতিমাত্রায় তৎপর একথা অকপটে স্বীকার করেছেন এই অঞ্চলের বেশ কযেকজন খাদ্য ও বাজার কর্মকর্তা। তাদের কথা বাজার মনিটরিং জোরদার করা হলে মুনাফালোভীরা সুবিধা করতে পারবে না। মোদ্দাকথা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনা মাঠপর্য়ায়ে মোটেও কার্যকর হচ্ছে না। জেলায় জেলায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আছে মনিটরিং সেল। মাঝেমধ্যে জোরদার মিটিং হয় ঠিকই। কিন্তু বাস্তবে কার্যকর ভুমিকা নেয়ার বিষয়টি অনুপস্থিত থাকছে। যার জন্য বাজার বিপদ নিয়ে ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা সবসময়। মাঠপর্যায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে দুর্বল অবস্থা দেখে কোনভাবেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না ভোক্তসাাধারণ। একইসাথে বাজারের ব্যাপারে সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবস্থার কথা উঠে আসছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজার মনিটরিং


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ