Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বীরেরা কখনো নিরীহদের হত্যা করে না, রক্ষা করে : ট্রাম্প

| প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জেরুজালেম পোস্ট : উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের প্রত্যেকটি দেশ এতে যোগ দেবে। একই দিনে এটি হচ্ছে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ যা বহুদিন ধরে মানুষ স্মরণ করবে। আমি উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) প্রশংসা করি যে তারা তাদের দেশগুলোকে সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের ভিত্তি হওয়া থেকে রোধ করেছেন এবং হেজবুল্লাহকে গত বছর একটি সন্ত্রাসী সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। হেজবুল্লাহর একজন অত্যন্ত সিনিয়র নেতাকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আনতে এ সপ্তাহে সউদী আরবও আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে। এখনো অনেক কিছু করার রয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে সততার সাথে ইসলামী উগ্রবাদ এবং যেসব ইসলামী সন্ত্রাসী গ্রæপকে তারা অনুপ্রাণিত করে, তাদের মোকাবেলা করা এবং এর অর্থ হচ্ছে নিরীহ মুসলিম হত্যার বিরুদ্ধে,নারী নিপীড়ন, ইহুদিদের প্রতি নির্যাতন এবং খ্রিস্টান হত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। ধর্মীয় নেতাদেরকে বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিষ্কার করতে হবেঃ বর্বরতা আপনাদের জন্য কোনো গৌরব বয়ে আনবে না, অশুভের সাথে সখ্যতা আপনাদের জন্য মর্যাদা বয়ে আনবে না, আপনার জীবন হবে সংক্ষিপ্ত এবং আপনার আত্মা হবে নিন্দিত। রাজনৈতিক নেতাদেরকেও একই বিষয় জোর দিয়ে বলতে হবে, বীরেরা কখনো নিরীহদের হত্যা করে না, বরং তারা তাদের রক্ষা করে। এখানে উপস্থিত বহু দেশই এই বার্তা উত্থাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। সউদী আরবের ভিশন-২০৩০ সহিষ্ণুতা, সম্মান, নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী ব্যবস্থা। সংযুক্ত আরব আমিরাতও মনপ্রাণ দিয়ে এ লড়াইয়ে নিয়োজিত এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অনলাইনে ঘৃণা ছড়ানো প্রতিরোধ করতে একটি কেন্দ্র চালু করেছে। বাহরাইনও উগ্রপন্থী নিয়োগ ও উগ্রপন্থা দমনে কাজ করছে। আমি উদ্বাস্তুদের আশ্রয়দানের জন্য জর্দান, তুরস্ক ও লেবাননের ভূমিকারও প্রশংসা করি। মধ্যপ্রাচ্যত্যাগী অভিবাসী ও উদ্বাস্তু মানব সম্পদশূূন্য করছে যা একটি স্থিতিশীল সমাজ ও অর্থনীতি নির্মাণে মূলধন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এ অঞ্চলকে প্রয়োজনীয় মানব সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার পরিবর্তে তরুণদেরকে তাদের স্ব স্ব দেশ ও অঞ্চলে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা দিতে পারে। এর অর্থ নারী, শিশু ও সকল ধর্মের অনুসারীদের যারা উন্নত জীবনের আশা করে তাদের আশা-আকাক্সক্ষা ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন। বহু আরব ও ইসলামী পন্ডিত আলঙ্কারিকভাবে যুক্তি দেখিয়েছেন যে, সমতা রক্ষা আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করে। বহু শতাব্দী ধরে মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা পাশাপাশি বাস করে আসছে। আমাদেরকে আরো একবার পরস্পরের প্রতি সম্মান ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে হবে এবং এ অঞ্চলকে এমন এক অঞ্চলে পরিণত করতে হবে যেখানে জাতি-গোষ্ঠি নির্বিশেষে প্রতিটি নারী ও পুরুষ মর্যাদা আশা নিয়ে জীবনযাপন করতে পারে। এ চেতনা থেকে রিয়াদ সফর সম্পন্ন করে আমি জেরুসালেম ও বেথলেহেম সফর করব এবং তারপর ভ্যাটিকানে যাব। এ তিন ধর্মের মানুষ যদি পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারে তাহলে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তিসহ বিশে^ শান্তি আসা সম্ভব। আমি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে সাক্ষাত করব। সন্ত্রাসীদের তাদের এলাকাচ্যুত করা, তাদের অর্থ আয় বন্ধ করা এবং তাদের হীন মতবাদের দ্বারা মানুষকে মিথ্যা প্রলোভিত করা হবে তাদের পরাজিত করার ভিত্তি। কিন্তু এ সন্ত্রাসীদের হুমকি নির্মূল করার কোনো চেষ্টাই সম্পন্ন হবে না যদি তাদের নিরাপদ আশ্রয়, আর্থিক সমর্থন ও যোদ্ধা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক সমর্থন বন্ধ করা না যায়। একটি শাসকগোষ্ঠি এ অঞ্চলে এত অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী। আমি অবশ্যই ইরানের কথা বলছি। লেবানন থেকে ইরাক পর্যন্ত ইরান সন্ত্রাসী ও মিলিশিয়া এবং এ অঞ্চলে ধ্বংস ও গোলযোগ ছড়ানো অন্য উগ্রপন্থীদের অর্থায়ন, অস্ত্র প্রদান ও প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। কয়েক দশক ধরে ইরান গোষ্ঠিগত যুদ্ধ ও সন্ত্রাসে ইন্ধন যুগিয়ে চলেছে। এটি একটি সরকার যা গণহত্যা চায়, ইসরাইলকে ধ¦ংসের শপথ নেয় , আমেরিকার নিপাত চায় এবং এখানে উপস্থিত বহু নেতা ও দেশের পতন কামনা করে। ইরানের সর্বাপেক্ষা ট্র্যাজিক ও অস্থিতিশীল হস্তক্ষেপ ঘটেছে সিরিয়ায়। ইরানের দ্বারা বলিয়ান হয়ে বাশার আল আসাদ অবর্ণনীয় অপরাধ সংঘটন করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র বাশারের নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে ৫৯টি টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে কঠোর জবাব দিয়েছে। দায়িত্বশীল দেশগুলোকে সিরিয়ায় মানবিক সঙ্কট অবসান, আইএসকে নির্মূল ও এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে একসাথে কাজ করতে হবে। ইরানি শাসকদের দীর্ঘ নিপীড়নের শিকার তাদের নিজের জনগণ। ইরানের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি, কিন্তু ইরানের জনগণ তাদের শাসকদের সংঘাত ও সন্ত্রাসের বেপরোয়া নীতির কারণে কষ্ট ও হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ইরানি শাসকরা শান্তির অংশীদার হতে না চাইলে সকল সচেতন দেশকে ইরানকে বিচ্ছিন্ন করা, সন্ত্রাসের জন্য তার অর্থায়ন করতে না দেয়র জন্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে এবং সে দিনের জন্য প্রার্থনা করতে হবে যখন ইরানিরা একজন উপযুক্ত ও ন্যায়নিষ্ঠ সরকার পাবে যা তারা চাইছিল। বাদশাহ সালমান, ইতিাসের এ মুহূর্ত সৃষ্টির জন্য আমি এবং আমেরিকা, তার শিল্প এবং মার্কিনীদের কর্ম সংস্থানের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি । আমি বিশে^র এ অংশের ভবিষ্যতে বিনিয়োগে জন্যও আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। অসাধারণ সাফল্য লাভের জন্য এ ফলপ্রসূ অঞ্চলের সব কিছুই রয়েছে Ñ এক সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি , এক তরুণ ও স্পন্দনশীল জনগণ, বাণিজ্যের জন্য আগ্রহোদ্দীপক প্রেরণা। কিন্তু আপনি মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের জন্য এ সুযোগ তখনি উন্মোচন করতে পারবেন যখন আপনি তাদের উগ্রবাদ, সন্ত্রাস ও সহিংসতামুক্ত করতে পারবেন। এখানে উপস্থিতরা আমাদের জনগণের নেতা। তারা আমাদের কাছে জবাব চায় , কাজ চায়। এবং আমরা যখন তাদের মুখের দিকে তাকাই প্রতি জোড়া চোখের পিছনেই একটি আত্মা দেখতে পাই যে ন্যায় বিচারের জন্য কাঁদছে। আজ শত শত কোটি মুখ আমাদের দিকে চেয়ে আছে , আপেক্ষা করছে আমাদের সময়ের বিরাট প্রশ্নের ব্যাপারে আমাদের কাজের জন্য। আমরা কি অশুভ শক্তির উপস্থিতির ব্যাপারে উদাসীন থাকব? আমরা কি তাদের সহিংস মতবাদ থেকে আমাদের নাগরিকদের রক্ষা করব? আমরা কি এ বিষকে আমাদের সমাজে ছড়িয়ে পড়তে দেব? আমরা কি তাদের বিশে^র পবিত্র স্থানগুলো ধ্বংস করতে দেব? আমরা যদি এই প্রাণঘাতী সন্ত্রাসের মোকাবেলা না করি আমরা জানি ভবিষ্যতে তা আরো দুর্ভোগ ও হতাশা বয়ে আনবে। কিন্তু আমরা যদি কাজ করি, এখানে উপস্থিত সবাই সন্ত্রাস ও বিশে^র প্রতি হুমকি মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করি তাহলে আমাদের নাগরিকদের জন্য সীমাহীন বিপুল ভবিষ্যত অপেক্ষা করবে।সভ্যতার জন্মভূমি এক নতুন নবজাগরণ শুরুর অপেক্ষা করছে। বিজ্ঞান, শিল্পকলা, চিকিৎসা ও বাণিজ্যক্ষেত্রে গৌরবময় আবিষ্কার মানব সভ্যতাকে অনুপ্রাণিত করছে। বিধ্বস্ত শহরের উপরই বিশাল নগর নির্মিত হয়ে থাকে। নতুন কর্মসংস্থান ও শিল্প লাখ লাখ মানুষের ভাগ্যেন্নয়ন করে। আমরা চাই পিতামাতা তাদের সন্তানদের জন্য উদ্বিগ্ন হবেন না, পরিবারগুলো আর তাদের ভালোবাসার লোকের জন্য শোকার্ত হবেন না এবং ধর্মবিশ^াসীরা শেষপর্যন্ত নির্ভয়ে ধর্মপালন করবেন। এই হচ্ছে অগ্রগতি ও শান্তির আশির্বাদ। এ হচ্ছে সে ইচ্ছা যা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে সততার শিখা হয়ে জ¦লে। আর এই হচ্ছে আমাদের প্রিয় মানুষদের ন্যায্য দাবি। আমি আপনাদের আহবান জানাই আমার সাথে যোগ দিতে, ঐক্যবদ্ধ হতে, একসাথে কাজ করতে এবং একসাথে লড়াই করতে। কারণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা পরাজিত হব না। ধন্যবাদ। স্রষ্টা আপনাদের আশির্বাদ করুন। আপনাদের দেশের উপর স্রষ্টার আশির্বাদ পড়–ক। যুক্তরাষ্ট্রের উপর ¯্রষ্টার আশির্বাদ বর্ষিত হোক। সমাপ্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ