পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সায়ীদ আবদুল মালিক : রমজানের শুরুতে তিব্র পানি সঙ্কটে পড়েছে রাজধানীবাসী। গ্রীষ্মের দাবদাহ ও রমজানের কারণে পানির অতিরিক্ত চাহিদা বেড়েছে। সে চাহিদার আলোকে পানির সরবরাহ বৃদ্ধির পরিবর্তে কমেছে। অনেক এলাকায় দৈনন্দিনের রান্না ও গোসলের কাজ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় মসজিদেও পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মুসল্লিরা অজু করতে গিয়ে পড়ছে বিপাকে। মহল্লায় মহল্লায় পানির জন্য হাহাকার চলছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও পাম্প ঘেরাও করছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওয়াসার একশ্রেণীর অসাধু কর্মচারীর বিরুদ্ধে পানি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এক গাড়ি পানির দাম ৫০০ টাকা হলেও দেড় হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে কোনো কোনো এলাকায়। পানি না পেয়ে অনেকে মিনারেল বোতলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অনেকেই গোসলসহ প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আসছেন আত্মীয়র বাসা থেকে। হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন পুকুর এবং লেকেও কাউকে কাউকে গোসল করতে দেখা গেছে।
পানির এমন সঙ্কটের কারণে রাজধানীবাসীর অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে। ঢাকা ওয়াসার কাছে পানি সঙ্কটের সমাধান না পেয়ে প্রায় প্রতিদিনই নগরীর কোন না কোন এলাকায় বিক্ষোভ, রাস্তা ও পানির পাম্প অবরোধ এবং ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে অনেক এলাকায় দিনে দু’একবার পানি সরবরাহ হলেও তাতে দুর্গন্ধ ও ময়লা থাকায় পান করা যাচ্ছে না। পানির এমন পরিস্থিতিতে অনেকে ডায়রিয়াসহ নানাবিধ পেটের পীড়ায় ভুগছেন। পানি নিয়ে এমন নাকাল অবস্থা চললেও সঙ্কট স্বীকার করতে রাজি নন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় বর্তমান সরবরাহ বেশি। দৈনিক রাজধানীতে চাহিদা ২৩০ কোটি লিটার। কিন্তু উৎপাদন সক্ষমতা ২৪৫ কোটি লিটার। লোডশেডিং, জেনারেটরের অকার্যকারিতা এবং পানির স্তর নেমে গেলে কখনও কখনও অবশ্য উৎপাদন কমে। তবে বর্তমানে উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশি। যেসব এলাকায় সঙ্কট সেখানে সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা আছে। তাই পানি যাচ্ছে না। তবে আমরা গাড়িতে করে পানি সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছি। তিনি এই সমস্যাকে সামান্য হিসেবে মনে করেন।
রাজধানীর উত্তরার ১১ নং সেক্টরের ২০ নং রোডের প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দা গত প্রায় ১৫ দিন ধরে রয়েছে পানির তিব্র সঙ্কটে। দৈনন্দিনের রান্না ও গোসলের কাজও সারতে হচ্ছে জার কিংবা মিনারেল পানি দিয়ে। পানির এ সমস্যা সমাধানে ওয়াসার হেড অফির ও স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করেও কোন সমাধান পাওয়া যায়নি।
ওই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম বলেন, গত প্রায় ১৫দিন ধরে আমরা পানির অভাবে গোসল পর্যন্ত করতে পারছি না। গত শুক্রবার জুমার নামাজের দিনও পানির অভাবে মানুষ গোসল করতে পারেনি। ওয়াসার বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানানো হলেও এখন পর্যন্ত এর কোন প্রতিকার লক্ষ্য করা যায়নি। তিনি বলেন, নগাদ টাকা দিয়ে এক ট্রাক পানি কিনতে চেয়েও আমরা পাইনি। এই রমজানেও যদি নগরবাসীকে এমন দর্ভোগ পোহাতে হয় তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এত প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কি লাভ হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর বাসাবো, কদমতলা, বৌদ্ধমন্দির, মায়াকাননসহ আশেপারে এলাকায় গত প্রায় ১০দিন ধরে ওয়াসার পানির তিব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ওই এলাকায়, বসবাসকারী প্রায় দুই লক্ষাধীক মানুষের পানি সঙ্কটে এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বাসাবোর বৌদ্ধমন্দির এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন কামাল বলেন, গত ১০ দিনের পানির অভাবে জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত অবস্থা। গোসল নাই, চুলায় রান্না-বান্না নাই। বাইর থেকে কতদিন আর কেনা পানি দিয়ে চলা যায়। পানির এ সমস্যা ওয়াসাকে জানানোর পরও এর কোন সমাধান নাই। এভাবেতো চলতে পারে না। এক ট্রাক পানি নগদ টাকায় কেনার জন্য চেয়ে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা ওয়াসার জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মোস্তফা তারিক বলেন, বাসাবোর বৌদ্ধমন্দির এলাকার পাম্পে সাময়ীক সমস্যা দেখা দেয়ার কারণে ওই এলাকায় পানি সাপ্লায়ে সামান্য বিঘিœত হয়েছে। অতি দ্রæত এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে তাপদাহের কারণে পানির চাহিদা বেড়েগেছে। লোডশেডিংয়ের কারণে নিয়মিত পানি উঠানো যাচ্ছে না। যে কারণে চাতিদামত পানি সরবরাহ করতে গিয়ে আমাদের একটু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে চাহিদার ৭৮ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ। বাকি ২২ শতাংশ পানি রাজধানীর পাশের বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদী থেকে নিয়ে শোধন করে কিছু কিছু এলাকায় সরবরাহ করা হয়। সায়েদাবাদ-১, সায়েদাবাদ-২ ও চাঁদনীঘাটে তিনটি শোধনাগার এবং ৭৩০টি গভীর নলকূপ দিয়ে মোট চাহিদার পানি উৎপাদন করা হয়। বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে নদী দুটির পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় দূষণের মাত্রা বেড়েছে। তাই শোধন করার ক্ষমতা কমেছে। বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে পানি উত্তোলনে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলনও কমেছে। ফলে চাহিদার সঙ্গে প্রাপ্তির বিশাল ব্যবধান তৈরি হয়েছে। যে কারণে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে।
তবে তার এই বক্তব্যের সঙ্গে খোদ ওয়াসার অন্য কর্মকর্তারাই একমত নন। নাম প্রকাশ না করে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ২৩০ কোটি লিটার পানির চাহিদা হলেও ২০৫ থেকে ২১০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে। বাকি ২০ কোটি লিটার পানির ঘাটতি আছে। এর সঙ্গে সিস্টেম লস যোগ করলে ঘাটতির পরিমাণ আরও বেশি।
মগবাজার এলাকার বাসিন্দারা মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন, গত কয়েক মাস ধরে মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় পানির সঙ্কট চরমে। পাইপ লাইনে যেটুকু পানি আসে তাও দূষিত। বিষয়টি ওয়াসা কর্তৃপক্ষের জানা থাকলেও স্থায়ী কোনো সমাধান নেয়া হচ্ছে না।
একই অবস্থা, রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরা মডেল টাউনের ১৩ ও ১৫ নম্বর সেক্টরেও। মিরপুরের মনিপুর এলাকাতেও পানির সমস্যা গত এক বছর ধরে। রাজধানীর গোড়ান, খিলগাঁও, কদমতলা, আহমেদবাগ, রাজারবাগ, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, তাঁতীবাজার, চাঁদনীঘাট, নারিন্দা, পানিটেলা, রামপুরা, বাড্ডা, শান্তিনগর, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, মাদারটেক, বাসাবো, কুসুমবাগ, মুগদাপাড়া, মানিকনগর, গোপীবাগ, জিয়ামাঠ, আজিমপুর ও নিউ ইস্কাটন, লালমাটিয়া, গণকটুলী, ওয়ারী, মৈশুটি, বনগ্রাম, আরমানিটোলা, ল²ীবাজার, বাংলাবাজার, শাঁখারীবাজার, বাড্ডা, নবাবপুর, ধোলাইখাল, ইসলামপুর, বংশাল, জোয়ারসাহারা, কুড়াতলী, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, মেম্বারবাড়ি মিরপুর-১, ২, পল্লবী, ইব্রাহীমপুর, মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ী রোড, শ্যামলী রিং রোডসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাতেও বিরাজ করছে পানির সঙ্কট।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বলেন, এই আসে এই যায়। এই হলো পানির অবস্থা। কখন আসবে আর কখন যাবে সেটা বলা মুশকিল। তাই দুটা ড্রাম কিনে সেগুলো ভর্তি করে রাখি। এর পরও অনেক সময় পানি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু পানি আসে না। কোনো অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
হাজারীবাগের বাসিন্দা হুমায়ুন আহমেদ মন্টু জানান, ১৫ দিন ধরে পানির সঙ্কটের কারণে ৫০ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এ অবস্থায় গতকাল কয়েকশ মানুষ কলসি-বালতি নিয়ে মিছিল বের করে। এটি হাজারীবাগ বোরহানপুর ১০নং গলি থেকে শুরু হয়ে হাজারীবাগ পার্কের পাম্প অফিস ঘেরাও করে। তিনি বলেন, ওই এলাকায় হাজারীবাগ ও কালুনগর পাম্প থেকে পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু উভয় পাম্পই বর্তমানে নষ্ট। এ কারণে হাজারীবাগের মনেশ্বর ২য় লেন, কাজীরবাগ, কুলাল মহল, বাড্ডা নগর লেন, কালুনগর, এনায়েতগঞ্জ, হাজারীবাগ রোড, নিলাম্বর সাহা রোড, ভাগলপুর এলাকায় ১৫ দিন যাবৎ পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে রাজধানীর অন্যান্য এলাকা থেকেও বাসিন্দারা টেলিফোনে পানির সঙ্কট নিয়ে নিজেদেও ক্ষোভ ও অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।