পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে লোনা পানির কুমির এখন প্রায় দেখাই যায় না। প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বিপন্ন প্রাণীর একটি তালিকা করে, যা আইইউসিএন রেড লিস্ট নামে পরিচিত। ওই তালিকায় লোনা পানির কুমিরকে বাংলাদেশে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
সেই বিলুপ্তপ্রায় লোনা পানির এক কুমির মায়ের ৩৮টি ডিম ফুটে সোমবার ৩৮টি বাচ্চা ফুটেছে। কর্মকর্তা এবং প্রাণী বিশারদেরা বলছেন, বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীর একসঙ্গে এতগুলো ছানার জন্ম এদের বংশরক্ষায় ভূমিকা রাখবে। সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ইনকিউবেটরে এই লোনা পানির কুমির ছানাদের জন্ম। তাদের মা পিলপিল এই প্রজনন কেন্দ্রেই জন্ম নেয়া লোনা পানির কুমির। এই মুহূর্তে পিলপিলই সেখানে একমাত্র প্রজননক্ষম মেয়ে কুমির।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজাদ কবীর বিবিসিকে বলেছেন, পয়লা জুন প্রজনন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে ৩৮টি ডিম দেয় পিলপিল নামের মেয়ে কুমিরটি। এরপর সেগুলো সংগ্রহ করে ইনকিউবেটরে তা দেয়া হয়, এবং ইনকিউবেটরে রাখার ৮৩ দিনের মাথায় বাচ্চা ফুটেছে।
কবীর বলছিলেন, সাধারণত যত ডিমে তা দেয়া হয়, তার সবগুলো থেকে বাচ্চা ফুটে বেরোয় না। কিন্তু এবার সব কটি ডিম থেকেই বাচ্চা ফুটে বের হয়েছে। যেমন এর আগে ২০০০ সালে পিলপিলের দেয়া ৪৬টি ডিমের মধ্য থেকে মাত্র ৪টি বাচ্চা হয়েছিলো। এ নিয়ে মোট ১১বার পিলপিল ডিম দিয়েছে।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কেবল সুন্দরবন এলাকাতেই প্রাকৃতিক পরিবেশে লোনা পানির কুমির দেখা যায়। এর বাইরে দেশের অন্য জেলায় যেগুলো রয়েছে, তার অধিকাংশই চিড়িয়াখানাগুলোতে রয়েছে। বন কর্মকর্তা কবীর বলছিলেন, লোনা পানির কুমিরের এই প্রজাতির প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে না, বিশেষ করে প্রাকৃতিক পরিবেশে, যে কারণে ক্রমে এরা হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, মূলত দুইটি কারণে এই প্রজাতির বংশবৃদ্ধি হচ্ছে না।
প্রথমত এই প্রজাতির কুমির উঁচু জায়গায় ডিম পাড়ে এবং শুকনো ও উষ্ণ জায়গায় ডিমে তা দেয়। কিন্তু এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের বেশিরভাগ এলাকায় নদীতে পলি জমে পানির স্তর ওপরে উঠে গেছে। ফলে বাচ্চা ফোটার জন্য প্রয়োজনীয় শুষ্ক ও উষ্ণ জায়গা পায় না এই জাতের কুমির। আবার এই প্রজাতির কুমির গরমকালে মানে মে-জুন মাসে ডিম পাড়ে, কিন্তু ওই একই সময়ে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ফলে তাদের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার সাফল্য অনেক কম।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, সুন্দরবনের ভেতরে একেবারেই এই জাতের কুমিরের বংশবৃদ্ধি হচ্ছে না। বরং কোনভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশে বাচ্চা ফুটলেও তাদের টিকে থাকার হার খুব কম। কারণ কুমিরের ডিম এবং ছোট ছোট কুমিরের ছানা গুইসাপ বা অন্য প্রাণীর আহারে পরিণত হয়।
এই মুহূর্তে দেশে প্রায় ৩০০র মত লোনা পানির কুমির আছে, এগুলো প্রধানত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে জন্মেছে। এর মধ্যে ১৮০টি কুমির সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জের বিভিন্ন নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয়েছে। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কবীর বলেন, সাধারণত প্রজনন কেন্দ্রে জন্মানো কুমিরের বয়স ৭ বা ৮ বছর হলে এদের দৈর্ঘ্য যখন দুই মিটারের বেশি হয়, তখন তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করা হয়।
দুই হাজার তের সাল থেকে লোনা পানির কুমির অবমুক্ত করা শুরু করে বন বিভাগ। তবে অধ্যাপক আহসান বলেছেন, বনে অবমুক্ত করা এই কুমিরের টিকে থাকার হার অনেক কম। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে এ প্রজাতির কুমির সংরক্ষিত। এ জাতের তাই কুমির শিকার, হত্যা অথবা এর ক্ষতি করা বাংলাদেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।
মূলত বিলুপ্ত প্রায় লোনা পানির এ কুমিরের প্রজাতি সংরক্ষণ, প্রজনন ও বংশ বিস্তারের উদ্দেশ্যে ২০০০ সালে সুন্দরবনের করমজলে কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। শুরুতে রেমিও ও জুলিয়েট নামে দুইটি কুমির দিয়ে শুরু হয়েছিলো প্রজনন কেন্দ্রের কার্যক্রম, যারা পিলপিলের বাবা ও মা। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে এই মুহূর্তে জীবিত সরীসৃপ গোত্রের প্রাণীর মধ্যে লোনা পানির কুমিরই দৈর্ঘ্যে সবচেয়ে বড়।
সাধারণত উপকূলীয় এলাকার অল্প লবণাক্ত পানি এবং নদী মোহনায় এদের বসবাস। বাংলাদেশে সুন্দরবনের নদীগুলোর লোনা পানি এসব কুমিরের একমাত্র আবাসস্থল। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যায় এই কুমির। বাংলাদেশের লোনা পানির একেকটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ কুমিরের দৈর্ঘ্য ৫-৭ মিটার পর্যন্ত হয়। ওজন হয় সাধারণত ৪০০ থেকে ১০০০ কেজি পর্যন্ত। তবে অতিরিক্ত ওজনের কুমির কেবল ক্যাপটিভ বা বন্দি অবস্থায় মানে চিড়িয়াখানা বা প্রজনন কেন্দ্রে থাকা কুমিরের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
মেয়ে কুমিরের দৈর্ঘ্য হয় চার থেকে পাঁচ মিটারের মত। এই জাতের কুমিরের জীবনকাল সাধারণত ২৫ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত হয়। তবে ১০০ বছর বেঁচে একটি কুমির রেকর্ড করেছিল। শরীরের রং ধূসর বা কালো-ঘেঁষা ধূসর হয়ে থাকে। চোয়াল চওড়া এবং শক্তিশালী হয়। এরা মাংসাশী প্রাণী। মাছ, সাপ, বিভিন্ন উভচর প্রাণী, বানর, হরিণ, এমনকি মানুষও শিকার করতে পারে।
এই কুমির নিজেদের আবাসস্থল কঠিনভাবে পাহারা দেয়, অর্থাৎ এরা নিজেদের এলাকায় অন্য অপরিচিত কুমির বা অন্য প্রাণীকে ঢুকতে দেয় না। সাধারণত আট বছর বয়সে এ কুমির প্রজননক্ষম হয়। তবে প্রাপ্তবয়স্ক হতে পুরুষ কুমিরের ১৬ বছর এবং মেয়ে কুমিরের অন্তত ১২ বছর সময় লাগে। একেকবারে একটি কুমির ৩০ থেকে ৪০টি ডিম দেয়। বাচ্চা ফুটে বের হতে প্রায় তিন মাস অর্থাৎ ৮০ থেকে ৯০ দিনের মত সময় লাগে। বাচ্চা ফোটাতে ন্যূনতম ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বেশি তাপমাত্রা পায় যে ডিম, সেটি থেকে ছেলে কুমির জন্ম নেয়, এবং কম তাপ পাওয়া ডিম থেকে মেয়ে কুমির ছানা বের হয়। লোনা পানির কুমির মিঠা পানিতে টিকে থাকতে পারে। মিঠা পানির কুমিরের চাইতে এরা হিংস্র এবং আক্রমণাত্মক হয়। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।