Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ না করলে সমাজ সহিংসতায় নিমজ্জিত হবে : ট্রাম্প

| প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সারা বিশে^র মানুষ জর্দানের পেট্রার ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে হাঁটার স্বপ্ন দেখে। ইরাক হচ্ছে সভ্যতার দোলনা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত কাচ ও ইস্পাত নিয়ে এক অবিশ^াস্য উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং মাটি ও পানিকে দর্শনীয় শিল্পকর্মে পরিণত করেছে। গোটা অঞ্চলটি সুয়েজ খাল, লোহিত সাগর এবং হরমুজ প্রণালীর প্রধান জাহাজ চলাচলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এ অঞ্চলের সম্ভাবনা আর কখনো এত ব্যাপক ছিল না। এ অঞ্চলের জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে। অন্য সকল তরুণ ও তরুণীর মত তারা উজ্জ্বল ভবিষ্যত নির্মাণ করতে চায়, বিরাট জাতীয় প্রকল্পে যোগ দিতে চায় এবং নিজের পরিবারের জন্য একটি বাড়ি চায়। কিন্তু এই অনাহরিত সম্ভাবনা, আশাবাদের এ চমৎকার কারণ আজ রক্তের সাগর ও সন্ত্রাসের মধ্যে আটকা পড়েছে। সহিংসতা সাথে কোনো সহাবস্থান হতে পারে না। সন্ত্রাসকে বরদাশত করা, গ্রহণ করা , তাকে ক্ষমা করা এবং উপেক্ষা করা যেতে পারে না। প্রতিটি সময়ই একজন সন্ত্রাসী একজন নিরীহ ব্যক্তিকে হত্যা করে এবং সে মিথ্যা সৃষ্টিকর্তার নাম উচ্চারণ করে , এটা যে কোনো ধর্মবিশ^াসীর জন্য অপমানজনক হওয়া উচিত। সন্ত্রাসীরা কখনো সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করে না, তারা মৃত্যুর উপাসনা করে। আমরা যদি এ সংগঠিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ না করি, আমরা জানি তারপর কি ঘটবে। সন্ত্রাসবাদের জীবন ধ্বংস আরো বিস্তার লাভ করবে। শান্তিপূর্ণ সমাজ সহিংসতায় নিমজ্জিত হবে। এবং বহু প্রজন্মের ভবিষ্যত দুঃখজনকভাবে ধ্বংস হবে। আমরা যদি এ ধরনের হত্যাকান্ডের নিন্দায় ঐক্যবদ্ধ না হই তাহলে আমরা শুধু আমাদের নিজেদের লোকেরই বিচারের সম্মুখীন হব না, ইতিহাসের কাঠগড়ায়ই শুধু দাঁড়াব না, আমরা সৃষ্টিকর্তার বিচারেরও সম্মুখীন হব। এটা শুধু বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন গোষ্ঠি অথবা বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যকার লড়াই নয়। এটা হচ্ছে বর্বর অপরাধীদের মধ্যকার লড়াই যারা মানব জীবন এবং সকল ধর্মের যেসব সুন্দর লোক তাদের রক্ষা করতে চায় তাদের ধ্বংস করতে চায়। এটা হচ্ছে শুভ ও অশুভের মধ্যে দ্ব›দ্ব। যখন আমরা সন্ত্রাসের কারণে ধ্বংসের দৃশ্য দেখি তখন আমরা দেখি না যে যারা নিহত হল তারা ইহুদি বা খ্রিস্টান বা শিয়া বা সুন্নী। আমরা যখন দেখি প্রাচীন মাটি নিরীহ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় আমরা তখন নিহতের ধর্মবিশ^াস, গোষ্ঠি বা গোত্র দেখি না- আমরা শুধু দেখি তারা ¯্রষ্টার সন্তান যাদের মৃত্যু সেই পবিত্র সত্ত¡ার জন্য অপমান। আমাদের পক্ষে এই অশুভকে তখনি শুধু পরিহার করা সম্ভব যদি শুভ শক্তি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হয় এবং এখানে উপস্থিত প্রত্যেকেই তাদের স্ষ্ঠুু করণীয় করেন এবং ব্যয়ের নিজেদের অংশ প্রদান করেন। সন্ত্রাসবাদ বিশে^র সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু শান্তি পথের যাত্রা এখানেই শুরু হল , এই প্রাচীন ভূখন্ডে, এই পবিত্র ভূমিতে। আমেরিকা আপনার পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত - অভিন্ন স্বার্থ ও অভিন্ন নিরাপত্তার অভিযাত্রায়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের এই শত্রুর বিনাশের জন্য আমেরিকার শক্তির অপেক্ষা করতে পারে না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা তাদের জন্য, তাদের দেশের জন্য এবং তাদের সন্তানদের জন্য কি ধরনের ভবিষ্যত চায়। এটি হচ্ছে দু’ ভবিষ্যতের মধ্যে একটিকে বেছে নেয়া- এ পছন্দ আমেরিকা আপনাদের বেছে দিতে পারে না। একটি উন্নত ভবিষ্যত তখনি সম্ভব যদি আপনার দেশ সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদের বিতাড়িত করে। অতএব তাদের বিতাড়িত করুন।আপনাদের মসজিদ থেকে তাদের বিতাড়িত করুন। আপনাদের সমাজ থেকে তাদের বিতাড়িত করুন। আপনাদের পবিত্র ভূমি থেকে তাদের বিতাড়িত করুন এবং এ বিশ^ থেকে তাদের বিতাড়িত করুন। আমাদের পক্ষ থেকে আমেরিকা উদ্ভূত হুমকি ও নতুন ঘটনা মোকাবেলায় তার কৌশল সমন্বয় করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা সে সব কৌশল বাতিল করব যা কাজ করেনি এবং অভিজ্ঞতা ও বিচার দ্বারা তথ্যায়িত নতুন পথ অবলম্বন করব। আমরা অভিন্ন মূল্যবোধ ও স্বার্থের ভিত্তিতে নীতিগত বাস্তবতা অবলম্বন করব। আমাদের বন্ধুরা আমাদের সমর্থন নিয়ে কখনো প্রশ্ন তুলবে না, আমাদের শত্রুরা আমাদের আমাদের দৃঢ়তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করবে না। আমাদের অংশীদারিত্ব স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা এগিয়ে নেবে, চরম বিচ্ছিন্নতার মধ্য দিয়ে নয়। আমরা বাস্তব-বিশ^ ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব, অনমনীয় মতবাদের ভিত্তিতে নয়। আমরা অভিজ্ঞতার শিক্ষা দ্বারা চালিত হব , নিরাপস চিন্তার সীমাবদ্ধতা দিয়ে নয়। এবং যেখানে সম্ভব আমরা ধীরে ধীরে সংস্কার চাইব, হঠাৎ হস্তক্ষেপ নয়। আমরা অবশ্যই অংশীদার চাইব, উৎকর্ষ নয় এবং যারা আমাদের সাথে অভিন্ন লক্ষ্য, তাদের সবাই মিত্র হবে। সর্বোপরি আমেরিকা শান্তি চায়, যুদ্ধ নয়। আমরা যদি সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করতে চাই এবং তাদের দুষ্ট মতবাদকে বিস্মৃতির অতলে পাঠাতে চাই তাহলে মুসলিম দেশগুলোকে ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হতে হবে। এ যৌথ প্রচেষ্টায় আপনাদের দেশের প্রথম কাজ হবে অশুভ শক্তির যোদ্ধাদের জন্য সকল ভূখন্ড নিষিদ্ধ করা। এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি দেশকে এটা নিশ্চিত করা বিশেষ দায়িত্ব যাতে সন্ত্রাসীরা তাদের মাটিতে কোনো আশ্রয় না পায়। অনেকেই আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছেন।সিরিয়া ও ইরাকে আইএস-র বিুদ্ধে লড়াইয়ে জর্দানের বৈমানিকরা গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সউদি আরব ও একটি আঞ্চলিক জোট ইয়েমেনে হুছি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। লেবাননের সেনাবাহিনী সেদেশে অনুপ্রবেশকারী আইএস সদস্যদের খুঁজে ফিরছে। আমিরাতি সৈন্যরা আমাদের আফগান অংশীদারদের সমর্থন দিচ্ছে। মসুলে আমেরিকান সৈন্যরা কুর্দি, শিয়া ও সুন্নীদের তাদের মাতৃভূমির জন্য ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের ঘাঁটি কাতার এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। কুয়েত ও বাহরাইনের সাথে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্ব এ অঞ্চলে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে। এবং সাহসী আফগান সৈন্যরা তালিবান ও অন্যদের বিরুদ্ধে তাদের দেশের জন্য লড়াইয়ে অসাধারণ ত্যাগের পরিচয় দিচ্ছে। আমরা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো কর্তৃক কোনো এলাকা বা জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা স্বীকার করি না, আমাদেরকে তাদের অর্থ সংগ্রহ করা বন্ধ করতে হবে। আমাদেরকে সে আর্থিক চ্যানেল বন্ধ করতে হবে যার মাধ্যমে আইএস তেল বিক্রি করে , তাদের যোদ্ধাদের পাওনা দেয় এবং সন্ত্রাসীদের শক্তিবৃদ্ধির সুযোগ প্রদান করে। আমি এ ঘোষণা করে গর্বিত যে এখানে উপস্থিত দেশগুলো সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন রোধে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে যার নাম সন্ত্রাসবাদ অর্থায়ন টার্গেটিং সেন্টার যার কো- চেয়ার যুক্তরাষ্ট্র ও সউদি আরব। [চলবে]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ