পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : সুপ্রিম কোটের সম্মুখ থেকে তুলে পিছনে অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের সামনে প্রতিস্থাপিত গ্রিক দেবীর মূর্তি বালু-পাথর-সিমেন্ট-লোহার রডে নির্মিত। প্রাণহীন ওই বিতর্কিত মূর্তির প্রাণ থাকলে বুঝতে পারতো বিদেশ ভূঁইয়ে তাকে নিয়ে কত মায়াকান্না! সুপ্রিম কোটের সম্মুখ থেকে তুলে দেয়ার প্রতিবাদে কত বিক্ষোভ কত হৈচৈ; মিডিয়ার খবরে তোলপাড়। গেলো রে গেলো রে দেশের শিল্প-কৃষ্টি-কালচার রসাতলে গেলো রে! আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভী-মাওলানাদের ভোটের লোভে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী (!) সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের সৌহাদ্য-সম্পৃতি ধূলিস্মাৎ করলো রে? গ্রিক দেবীর মূর্তি প্রেমী এরা কারা? এদের কী পরিচয়? মুক্তিযুদ্ধে এদের কতজন অংশ গ্রহণ করেছে? দেশ গড়তে এদের অবদান কী? এদের দাবি দাওয়া চিন্তা-চেতনা ৯২ ভাগ মুসলমানের এই দেশের মাটি মানুষের চিন্তা চেতনার সঙ্গে যায় কী? এদের চেতনার সঙ্গে দেশের মাটি ও মানুষের কোনো সম্পর্ক আছে কী? দেশের আমজনতা এদের সঙ্গে কখনোই ছিল না; কিন্তু প্রশাসনে এদের অনেক শক্তি। প্রশাসনের লোকজনকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এই সংঘবদ্ধ ব্যাক্তিরা সর্বত্রই বিরাজমান। সংস্কৃতি চর্চা আর চেতনার নামে সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানোই যেন এদের কাজ।
১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন বাংলাদেশের অবিসম্বাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান। ওই সম্মেলনে যোগদানের আগে বঙ্গবন্ধু এদের বাঁধার মুখে পড়েছিলেন। তাঁকে পাকিস্তানে না যাওয়ার পরামর্শ দেন দেশের এই মুখচেনা পরমুখাপেক্ষী ভিনদেশী সংস্কৃতিসেবীরা। সিদ্ধান্তে অনড় বঙ্গবন্ধু সব বাধা উপেক্ষা করে ওআইসি সম্মেলনে লাহোর যান। ‘লাহোর গেলে দিল্লী নাখোশ হবে’ এই পরমুখাপেক্ষী বুদ্ধিজীবীরা এমন কথা বলে বোঝানোর চেস্টা করলে বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তা নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি পরের হাতের তামুক খাই না’। রাজনীতির সেই মহানায়ক পিতার সুযোগ্য কন্যার মতোই নিজস্ব চিন্তায় এগিয়ে চলছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্তবকদের কথা শুনলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সব কথায় কান দেন না। চার দশক আগের ওআইসি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর যোগদানের সিদ্ধান্ত বিতর্কিত গ্রিক নারী মূর্তি সুপ্রিম কোট প্রাঙ্গণ থেকে পিছনে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত সে স্মৃতিই স্মরণ করে দেয়।
সুপ্রিম কোর্টের সম্মুখ থেকে গ্রিক নারীর বিতর্কিত মূর্তি সরিয়ে পিছনে বসানো হয়েছে। মূর্তি সরানোর আগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘ওখানে বসানো আমারও পছন্দ নয়’ এবং প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের খবর সবার জানা। কিন্তু মূর্তির কারিগর মৃনাল হক দেশবাসীর সামনে চাতুর্যপূর্ণ আচরণ রহস্যজনক। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মূর্তি সরিয়ে ইসলাম ধর্মসহ সব ধর্মের মানুষের প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মূর্তি সরানোর সিদ্ধান্ত হাইকোট কর্তৃপক্ষ্যের। বিএনপির নেতা ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদও একই মন্তব্য করেছেন। বিতর্কিত মূর্তিটি সরানোর পর দেশের আলেম সমাজ প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে মিছিল করা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে অ্যানেক্স বিল্ডিংপের সামনে বসানোয় বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু কিছু ব্যাক্তি গ্রিক নারী মূর্তি সরানোর প্রতিবাদ করছেন। ওই মূর্তির ভিতরেই যেন দেশের শান্তি-শৃংখলা-সৌহাদ্য-সম্পৃীতি-১৬ কোটি মানুষের আশা-আখাঙ্কা বিরাজমান। তাদের কেউ কেউ আবার মূর্তি সরানোকে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত’ প্রচার করেন। প্রশ্ন হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি সুপ্রিম কোর্টের সম্মুখে গ্রিক দেবীর বিতর্কিত মূর্তির মধ্যে নিহীত? ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। এই তিনটি চেতনার কোনটি প্রতিষ্ঠায় গ্রিক মূর্তি প্রেমী এই লোকগুলো ভূমিকা আছে? এদের কাজই কী দেশে শুধু বিরোধ-বিশৃংখলা সৃষ্টি করা; দেশের মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে একে অন্যের পিছনে লেলিয়ে দেয়া? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধোঁয়া তুলে সমাজের পরতে পরতে হিংসা বিদ্বেষ ছড়ানোই কী এদের চেতনা-নীতি? ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে এরা শতকরা কত জন মানুষের চিন্তা-চেতনা ও মতামত লালন করেন? এদের সঙ্গে কী গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের কোনো সম্পর্ক রয়েছে? এদের মুখে কী কখনো মা-মাটি-মানুষের কথা শোনা গেছে? হাওরে যে বন্যা হলো এদের ক’জন দুর্গতদের সেবায় সেখানে ছুটে গিয়েছিল? আর গ্রিক মূর্তির কারিগর মৃণাল হকের চাতুর্যের হেতু কী? সুপ্রিম কোট কর্তৃপক্ষ মৃনাল হককে আগেই জানিয়েছিল মূর্তিটি সুপ্রিম কোটের সম্মুখ থেকে তুলে পিছনে অ্যানেক্স বিল্ডিয়ের সম্মুখে বসানো হবে। এটা জানার পরও তিনি দেশবাসীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এতো নাটক করলেন কেন? সংস্কৃতিসেবী সিন্ডিকেটকে উষ্কে দিলেন কেন? আর চারু শিল্পবোদ্ধাদের মতামত না নিয়ে ওই বিতর্কিত মূর্তি কী সুপ্রিম কোটের সামনে বসালেন কেন? ওই মূর্তি কী সুপ্রিম কোর্টের সৌন্দর্যহানি করেনি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ডীন চারুশিল্পী নেছার হোসেন বলেছেন, অপরিকল্পিত ভাবে নির্মাণ করায় অনেক ভাষ্কর্য ঢাকা শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে; সেগুলো সরিয়ে ফেলা উচিত। বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মনিরুজ্জামান বলেছেন, ঢাকা শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কোথায় কি ধরণের ভাষ্কর্য নির্মাণ করা যায় তা গবেষণা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। মৃনাল হক ঢাকা শহরের যেখানেই ভাষ্কর্য নির্মাণ করেছেন সেটা নিয়েই বিতর্ক হয়। সুপ্রিম কোটের সম্মুখের ভাষ্কর্য সরানো যথার্থই। প্রফেসর সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, সুপ্রিম কোট বিল্ডিং একই অন্যন্য ভাষ্কর্য। তার সম্মুখে গ্রিক মূর্তি বসিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিল্ডিং এর সৌন্দর্য নষ্ট করা হয়েছে। ওখানে গ্রিক ভাষ্কর্য বসানো উচিত হয়নি। যারা ওই ভাস্কর্য সরানোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে এদেশের জনগণ থাকবে না।
প্রশ্ন হলো সুপ্রিম কোটের সম্মুখে গ্রিক মূর্তিটি কতটা সঙ্গতিপূর্ণ? সৌন্দর্যের কথা বিবেচনা করে নির্মাণকাজ শুরুর আগে চারুকলা বা সংশ্লিষ্ট কারো মতামত নেয়া যেত। স্ত্রী-সন্তানসহ আমেরিকার নাগরিকত্বধারী শিল্পী মৃণাল হকের সবশেষ প্রজেক্টটি গ্রীক দেবী থেমিস না বাঙ্গালী নারী তা নিয়ে স্ব-বিরোধী বক্তব্য আছে। এর আগে এয়ারপোর্ট এলাকায় তার নির্মিত ‘লালন’ ভাস্কর্যটি বিতর্কের কারণে সরিয়ে ফেলা হয়। দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগ-বিএনপি) অনেক ব্যর্থতা আছে: তাদের গোয়াতুর্মি জনদুর্ভোগের কারণ জনগণ কষ্ট পাচ্ছে। তারপরও ৫ বছর পর পর ভোটের জন্য তাদের গণমানুষের কাছে যেতে হয়। সে জন্যই তারা দে আদর্শই লালন-পালন করুক আমজনতার চিন্তা-চেতনা তাদের ধারণ করতেই হয়। সে কারণেই হয়তো বিতর্কিত গ্রিক মূর্তি স্থানান্তর ইস্যুতে আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নীতি নির্ধারকদের একই সুরে কথা বলতে দেখি। কিন্তু যারা মূর্তি স্থানান্তরে দেশের সম্প্রীতি ধ্বংস সৌহাদ্য গেল ‘রব’ তুলছেন; তারা কী সমাজে হিংসা বিদ্বেষ ছড়ানোর ‘কারিগর’ নয়? এরা কী দেশের মানুষের চিন্তা-চেতনা লালন করেন? মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো, পহেলা বৈশাখে ৫০ টাকার পান্তা ইলিশ ৫শ টাকায় কিনে খাওয়া, মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে অশূর-প্যাচা-ময়ূর-হাতি নিয়ে মিছিল করা কী ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশের সৌহাদ্য সম্পৃতির চেতনার সঙ্গে যায়? মসজিদের ঢাকা শহরে সন্ধ্যায় মঙ্গল প্রদীপ কী মানানসই? শাহবাগে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে তারা কার ঘর আলোকিত করেন? গ্রিক নারী মূর্তি প্রেমীরা কাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ? বিতর্কিত গ্রিক মূর্তি সরানোয় এরা সুপ্রিম কোটের পবিত্রতা নষ্টের অভিযোগ তুলেছেন। আসলে কী তাই? সুপ্রিম কোট প্রাঙ্গনে কী তারা কম ভাংচুর করেছে? বাম চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী স্পষ্টভাষী ব্যাক্তিত্ব প্রফেসর সুলিমুল্লাহ খান তো বলছেন সর্বচ্চো আদালতের সাম্মুখে ভাষ্কর্য বসিয়ে সুপ্রিম কোটের সৌন্দর্যহানিই শুধু নয়; সর্বচ্চো আদালতের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে। জনাব খান অবশ্য এই বুদ্ধিজীবীদের বিবেক বন্ধক রাখা দলদাস মনে করেন।
বিতর্কিত মূর্তি স্থানান্তরের প্রতিবাদকারী এই ব্যাক্তিরা সাংগঠনিকভাবে সংঘবন্ধ। দেশের জনগণের সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমজনতার খোঁজ খবর রাখা ও চিন্তা চেতনা ধারণ করার গরজবোধ করেন না। তবে সংস্কৃতির নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে এরা প্রতিবেশি দেশের তাবেদারী করেন। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের রাজনীতির বিরোধিতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খান। প্রশাসনে এই চেতনাধারীর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাদের কাজে লাগিয়ে অর্থবৃত্তের মালিক হচ্ছেন। বিভিন্ন কর্মসূচির নামে চাঁদাবাজী করেন, প্রশাসনে লোকজন থাকায় টেন্ডারবাজীতে মধ্যস্বত্ত¡ভোগীর দায়িত্ব পালন করে অর্থবৃত্ত কামান। প্রশাসনে লোক নিয়োগে ব্রোকারী করেন; সংস্কৃতি চর্চার নামে বিদেশে যাতায়াতের সুবিধা নেন। আর যাদের চেতনা লালন করেন তাদের মাসোহারা ‘দাওয়া’ তো রয়েছেই। কিছু মিডিয়ায় আছে এদের প্রচন্ড দাপট। সন্ধ্যায় এদের একশ ব্যাক্তি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালালে কিছু মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়ে সে খবর প্রচারের জন্য। টিভির টকশো-বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে ওই ব্যাক্তিদের আত্মপ্রচারণায় কিছু মিডিয়া যথেষ্ট ভুমিকা রাখছে। এরা যখন তখন শাহবাগে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ করে মিটিং-মিছিল করে। পাশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে রোগীদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে কষ্ট দিলেও রোগীদের যন্ত্রণা এদের বিবেক দংশন করে না। এরা যখন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের চারুকলার বকুল তলায় গিয়ে নেচে গেয়ে উৎসব করে। এরা কারা? এদের মুখো উন্মোচন করা কী জরুরী নয়?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।