Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্রিক মূর্তি অপসারণ

সিনিয়র আইনজীবীদের মতামতেই প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : গভীর রাত। হঠাৎ টেলিভিশনগুলোর স্কলে ব্রেকিং নিউজ। সুপ্রিম কোট এলাকা থেকে গ্রিক মূর্তি সরানো হচ্ছে। প্রথমে এক মন্ত্রীর ভাইয়ের মালিকানাধীন টেলিভিশন লাইফ প্রচার করে মূর্তি সরানোর দৃশ্যসহ খবর। দেখা যায় কয়েকজন শ্রমিক বিতর্কিত নারী মূর্তিটি তুলে ফেলার কাজ করছেন। পাশে একজন সিগারেট হাতে সেটা তদারকী করছেন। চ্যানেলের সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সনকে মূর্তির কাছাকাছি যেতে দেয়া হয়নি। তারা জাতীয় ঈদগা মাঠের প্রচীরের বাইরে থেকেই সরাসরি দৃশ্য দেখানোর পাশাপাশি ধারাভাষ্য দিচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর আরো দু’টি টিভি মূর্তি সরানোর লাইভ দৃশ্য দেখাতে থাকে। গভীর রাতে দেখা গেল গেইটের বাইরে কিছু যুবক মূর্তি সরানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে। তবে গতকাল দিনভর বিতর্কিত গ্রিক মূর্তি সরানোর পক্ষ্যে বিপক্ষ্যে মিছিল হয়েছে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এখন খবর হলো সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত বিতর্কিত গ্রিক নারী মূর্তি অপসারণ করা হয়েছে। গতকাল মধ্যরাতে শুরু হয়ে অপসারণ কাজ শেষ হয় ভোরে। এর আগে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা অ্যার্টনি জেনারেলসহ সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে এ ব্যাপারে তাদের মতামত জানতে চান। তারা পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিতর্কিত গ্রীক মূর্তি সরানোর পরামর্শ দেন। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ বলেছেন, ভাস্কর্য অপসারণের বিষয়টি করা হয়েছে পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্যই। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভাস্কর্য সরানো হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্য অপসারণের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের নিজস্ব বিষয়। তবে প্রধান বিচারপতি এর আগে আমাদের মতামত জানতে চান।
এ সময় ভাস্কর্য অপসারণের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বাম ছাত্রসংগনসহ কিছু সাংস্কৃতির কর্মী। গত বছর ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট মূল ভবনের লেডি জাস্টিস’ খ্যাত গ্রিক দেবীর বিতর্কিত মূতি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে দেশের আলেম সমাজ মূতি অপসারণের দাবি জানাচ্ছে। হেফাজত ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন বিতর্কিত এ মূর্তি’ অপসারণের দাবিতে একের পর এক কর্মসূচি পালন করছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেও হেফাজতের আমীর বিতর্কিত মূর্তিটি সরানোর অনুরোধ করে। সবশেষে দেশের আলেম সমাজ রমজান মাসে ওই মূর্তি মেনে নেয়া হবে না এবং ঈদের নামাজে ওই মূর্তিকে সামনে রেখে পড়া উচিত হবে না বলে মত দেয়। তারা মূর্তি অপসারণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বরাবর স্মারকলিপি দেয়। হেফাজতে ইসলামের এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আওয়ামী ওলামা লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন। সর্বশেষ গত ১৯ মে রমজানের আগে ভাস্কর্য অপসারণের সময়সীমাও দিয়েছিল হেফাজত। এছাড়াও পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগেই মূর্তিটি না সরালে হরতালের হুমকি দিয়ে আসছিল তারা। শুধু ইসলামী ধারার রাজনৈতিক দল নয়, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাও মূর্তি সরানোর দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছে। সুপ্রিম কোর্টের সামনে ‘মূর্তি’ স্থাপন সংবিধানের ১২ ও ২৩ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী উল্লেখ করে রিটও করেন একজন আইনজীবী। যা শুনানি অপেক্ষায় ছিল। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভাস্কর্য অপসারণের বিষয়টি সরকারের এখতিয়ারে নেই। এটি সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত। গত মাসে কওমি আলেমদের সঙ্গে বৈঠকে এই মূর্তি সরানোর পক্ষে মত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সেই থেকে মূর্তি সরানো না সরানো নিয়ে নানারকম গুঞ্জন ছিল। সব গুঞ্জনের অবসান করে শেষ পর্যন্ত রমজানের আগেই মূর্তিটি সরানো হলো।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে মূর্তি (ভাস্কর্য) সরানোয় দেশবাসী ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের তিন নম্বর ফটকের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা এ সন্তুষ্টির কথা জানান। তারা প্রধানমন্ত্রীর ও প্রধান বিচারপতিতে অভিনন্দন জানান। অন্যদিকে বিশিষ্টরা নাগরিকদের মধ্যে কয়েকজন বলেছেন, মূর্তি (তাদের ভাষায় ভাঙ্কয) সরানোর সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের আপসকামিতার রাজনীতি। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেছেন, ভাষ্কর্য সরানো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী সিদ্ধান্ত। তাদের মতে প্রথমত, সরকারের সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ন্ত্রণ করার ধারাবাহিক চেষ্টার একটি বহিঃপ্রকাশ। দ্বিতীয়ত, সরকার তথাকথিত ধর্মীয় ভোটের কাছে ক্রমাগত নতি স্বীকার করার আরেকটা বহিঃপ্রকাশ।
মূর্তি সরানোর সিদ্ধান্ত
হেফাজতে ইসলামসহ দেশের আলেম ওলামাদের দাবিতে সরকার প্রধানও সায় দেওয়ার পর আইনজীবীদের মতামত নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের মূল প্রাঙ্গণ থেকে বিতর্কিত গ্রীক নারী মূর্তি সরানোর সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মূর্তি অপসারণের কাজ শুরুর আগে দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদকদের ডেকেছিলেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকে থাকা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এটি সরানোর পক্ষে মত আসে। দুপুরে আদালতের মধ্যাহ্ন বিরতির সময় আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান বিচারপতি। এতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি জয়নাল আবেদীন ছাড়া সাবেক সভাপতিদের মধ্যে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও খন্দকার মাহবুব হোসেন, বর্তমান সম্পাদক ব্যারিষ্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাবেক সম্পাদক এম আমিন উদ্দিন, মাহবুব আলী ও স ম রেজাউল করিম। এসময় উপস্থিত সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে চিফ জাস্টিস আমাদের ডেকেছিলেন। ভাস্কর্যের বিষয়ে তিনি বলেন, এই যে একটা ভাস্কর্য, এটা নিয়ে কথা উঠেছে; কী করা যায়? প্রধান বিচারপতির এই কথার পর কেউ কোনো কথা বলছিল না। প্রথম নীরবতা ভাঙেন আমিনউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘স্যার এটা নিয়ে কথা উঠেছে, যদি হাইকোটের্র সামনে গন্ডগোল হয়, তাহলে কোর্টের ইমেজ নষ্ট হবে, এটা সরিয়ে দেন। আমিউদ্দিনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে মাহবুব আলীও ‘আপাতত ঝামেলা’ এড়ানোর পরামর্শ দেন বলে সাবেক ওই সাধারণ সম্পাদক জানান। আমিন উদ্দিন বলেন, যেহেতু এটা নিয়ে (ভাস্কর্য) নিয়ে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাই আমরা একটা অনুরোধ উনাদের (প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন) করেছিলাম, ভাস্কর্যটা অপসারণ নয়, স্থানান্তর করার জন্য। এটা কিন্তু অপসারণ করা হয়নি, স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে।
ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে মিছিল
মূর্তি তুলে ফেলার সময় রাতেই দেখা গেছে কিছু তরুণ প্রচীরের বাইরে মূর্তি সরানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে যাচ্ছিল ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন নেতাকার্মী। পথে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মাজার গেইট দিয়ে তারা সুুপ্রিম কোটে ভিতরে প্রবেশ করার চেস্টা করলে পুলিশ তাঁদের লক্ষ্য করে রঙিন পানি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, হাইকোর্টের সামনে কেউ বিক্ষোভ করতে পারেন না। নিরাপত্তার স্বার্থে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে গরম পানি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করার কথা স্বীকার করেন তিনি। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলেন, এই চারজনের একজন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী। পুলিশের বাধায় অন্তত পাঁচজন আহত হওয়ার দাবি জানান তাঁরা। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিক থেকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
উদ্দেশ্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো
বিতর্কিত গ্রীক নারী মূর্তি (ভাস্কর্য) অপসারণ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ বলেছিলেন, ভাস্কর্য অপসারণের বিষয়টি করা হয়েছে পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্যই। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভাস্কর্য সরানো হয়েছে। তবে এই ভাস্কর্য এখন কোথায় বসানো হবে বা তা দিয়ে আদৌ কী করা হবে, এসব বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের এই কর্মকর্তা।
অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য
ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্য অপসারণের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের নিজস্ব বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম। শুক্রবার দুপুরে মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এটি সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়। তারা জানে। এটা কোথায় রাখবে, এটা তাদের ব্যাপার। এ ব্যাপারে নিজের কোনো মন্তব্য নেই বলেও জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে শুরু করে ভোরের আগেই মূর্তি সরানোর কাজ শেষ করা হয়। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট চত্বর ও এর আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভাস্কর্য সরানোর খবর পাওয়ার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে সর্বোচ্চ আদালতের সামনে ছুটে আসেন বিক্ষুব্ধরা। দুইটার দিকে বেশ কিছু তরুণ সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকের বাইরে ¯েøাগান দিতে থাকেন। রাত ২টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের সামনের রাস্তায় সমবেত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চের একদল কর্মী। পরে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের নেতাকর্মীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। ন্যায়বিচারের প্রতীক এই ভাস্কর্য আদালত প্রাাঙ্গণ থেকে অপসারণের প্রতিবাদ জানান তারা। এসময় তারা ন্যায়বিচারের ভাস্কর্য অপসারণ করা যাবে না’ মৌলবাদের আস্তনা, ভেঙে দাও জ্বালিয়ে দাও’ শেখ হাসিনা সরকার মৌলবাদের পাহারাদার’, যে সরকার ভাস্কর্য সরায়, সেই সরকার চাই না’, ‘একাত্তরে বাংলায় হেফাজতের ঠাঁই নাই’ প্রভৃতি ¯েøাগান দিতে থাকেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি রাজু ভাস্কর্য থেকে রাত দেড়টার দিকে ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকে যায়। রাত আড়াইটার দিকে সুপ্রিম কোর্টের সামনের সড়কের একপাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে তারা সুপ্রিম কোর্টের ফটক ধরে ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে হ্যাজবল খুলে যায়। পরে পুলিশ ভেতরে থেকে গেইটে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ বাদে শাহবাগ থানা থেকে দুই ভ্যান পুলিশ এসে অবস্থান নেয় ফটকের বাইরে। পরে রাত ৩টার দিকে মূর্তি (ভাস্কর্য) সরানোর কাজ কিছুক্ষণ বন্ধ রেখে আশপাশের বাতিগুলো নিভিয়ে দেয়া হয়। এইভাবে চলতে থাকে ভাস্কর্য অপসারণের কাজ। এরপর ভোর ৪টার দিকে ভাস্কর্যটি ক্রেইনের সাহায্যে ট্রাকটিতে তুলে নেয়া হয়। মূর্তিটি কাপড় মুড়িয়ে অ্যানেক্স ভবনের ভেতরে পানির পাম্পের পাশে নিয়ে রাখা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
কাদের নির্দেশে মূর্তিটি সরানো হল, সে বিষয়ে স্পষ্ট ভাষ্য মেলেনি কোনো কর্তৃপক্ষের। রোজা শুরুর তিন দিন আগে আকস্মিকভাবে এক দল শ্রমিককে ভাস্কর্যটি অপসারণের কাজ শুরু কিছু সময় পর ভাস্কর্যটির শিল্পী মৃণাল হককেও সেখানে দেখা যায়। পরে মৃনাল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমি কিছু জানি না, উপরের পেসারে সরাতে হচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে সরাতে, চাপ দেয়া হয়েছে। কারা চাপ দিয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকের অনেক রকম ক্ষমতা আছে। আমি বানিয়েছিলাম, আমাকে সরাতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমার হাত-মুখ বাঁধা। মাফ চাই, আমি কিছু বলতে পারব না। অন্যরা সরালে ভার্স্কযটি ভেঙে কিংবা নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে নিজেই সরাতে এসেছেন বলে জানান মৃণাল হক। তিনি বলেন, ভাস্কর্যটি সরিয়ে সম্ভবত সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের পাশে কোথাও বসানো হতে পারে।
সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে হেফাজত
সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য সরানোয় দেশবাসী ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর শাখা। শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের তিন নম্বর ফটকের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা এ দাবি জানান। একই সঙ্গে তারা সারা দেশে স্থাপিত সব ‘মূর্তি’ সরানোর দাবি জানান। হেফাজতের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, মূর্তি অপসারণ করা হয়েছে, এ জন্য আল্লাহর পাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। সঙ্গে সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানাই। তিনি এই দ্বীনি চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এটি অপসারণ করেছেন। এ দেশ তৌহিদি জনতার দেশ। এই দেশে মূর্তি সংস্কৃতি চলবে না। এ দেশের তৌহিদি জনতা কোনো অবস্থাতেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে মূর্তি স্থাপন করা কখনো মেনে নেবে না। কাজেই যত মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, সমস্ত অপসারণ করা হোক।
খেলাফত আন্দোলনের মিছিল: ভাস্কর্য অপসারণ করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে খেলাফত আন্দোলন একটি মিছিল বের করে। এ সময় মুফতি রেদওয়ানুল বারি সিরাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবার আবেদন ছিল যেন ঈদের আগে মূর্তিটি সরানো হয়। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, আশ্বাস রেখেছেন। আমরা চাই, বাংলাদেশ থেকে যত মূর্তি আছে সব অপসারণ করা হোক।



 

Show all comments
  • S. Anwar ২৭ মে, ২০১৭, ৬:৩১ এএম says : 0
    এটি কোন ধর্মীয় মুর্তি হলে সেই ধর্মীয় মন্দিরে স্থাপন করলেও কারো কোন আপত্তি থাকতো না। এখন দেশের কোথাও এই মুর্তি স্থাপন করলে আমাদের আপত্তি আছে। এই মুর্তির সাথে আমাদের দেশ, জাতি, সংস্কৃতি, ধর্ম, ঐতিহ্য কোন কিছুরই সম্পর্ক নেই। তাই এই মুর্তিতে আমাদের কোন কাজও নেই। অতএব একে গুঁড়িয়ে ফেলা হোক্ কিংবা এর স্বপ্নদ্রষ্টা বা নির্মাতার ঘরে নিয়ে স্থাপন করা হোক অথবা পোষাক পরিবর্তন করে গ্রীসের দেবী গ্রীসেই রপ্তানি করে দেওয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • খাইরুল ইসলাম ২৭ মে, ২০১৭, ১:৩৭ পিএম says : 0
    এই আন্দোলনে পাশে থাকায় দৈনিক ইনকিলাবকে অসংখ্য মোবারকবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • Quazi ২৭ মে, ২০১৭, ৩:১৯ পিএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ । যারা এ মূর্তি অপসরণের সাথে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ । সকলের জানা উচিৎ, ইসলামে মূর্তি/ ভাস্কর্য স্থাপন নিষিদ্ধ । আমাদের শিশুদের ইসলামী শিক্ষায় অনুপ্রেরণা জোগাতে অভিভাবকদের অনুরোধ জানাচ্ছি ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৭ মে, ২০১৭, ৭:৩৮ পিএম says : 0
    মুক্তিযুদ্ধ ও ভাস্কর্য এই দুইটার মধ্যে কি সম্পর্ক আমার বোধগম্য হোলনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আমি মনে করি বাঙ্গালী জাতীয়তাবোধ ও ধর্মনিরপেক্ষতা এর সাথে মূর্তী বা ভাস্করের কি যে সম্পর্ক এটা বুঝা গেল না। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেছেন, ভাষ্কর্য সরানো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী সিদ্ধান্ত!!! তাদের মতে প্রথমত, সরকারের সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ন্ত্রণ করার ধারাবাহিক চেষ্টার একটি বহিঃপ্রকাশ। দ্বিতীয়ত, সরকার তথাকথিত ধর্মীয় ভোটের কাছে ক্রমাগত নতি স্বীকার করার আরেকটা বহিঃপ্রকাশ। আমার প্রশ্ন শাহরিয়ার সাহেবের কাছে তিনি কি মূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই কি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন??? আমি একজন মুক্তিযুদ্ধা হয়েও জানতাম না যে, মূর্তি প্রতিষ্ঠা মুক্তি যুদ্ধের চেতনা!!! আমি বুঝতেই পারলাম না কোন যায়গায় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ন্ত্রন করেছে এখানে বলা হচ্ছে মূর্তির বিষয় এখানে প্রধানমন্ত্রী সরানোর জন্য আনুরোধ করার পরও প্রধান বিচারপতি শুনেন নি। পরে রমজানের আগে না সড়ানো হলে হেফাজতের হুমকি দেয়ার পর তিনি বয়জৈষ্ঠ আইন জীবিদের মতামতের উপর ভিত্তি করেই প্রধান বিচারপতি মূর্তি সড়ালেন। তিনি নিজেই বসিয়েছেন এবং নিজেই সড়িয়েছেন কাজেই এখানে নিয়ন্ত্রনের কি হয়েছে বুঝাগেল না। সভাপতি সাহেব দ্বিতীয় উদাহরণ দিতেগিয়ে বলেছেন “তথাকথিত ধর্মীয় ভোটার” তিনি কি এতই বোকা যে, মূর্খ ইসলাম বিরোধীদের মত করে বলে দিলেন “তথাকথিত ধর্মীয় ভোটার”। তাহলে আমি বলতে জানতে চাই তিনি কি মুসলমান??? তিনি ঘোষনা দিয়ে দিন যে, তিনি মুসলমান নন তাহলে আমি তার কথা সেভাবে নেব। তার কথা শুনে আমার মনে হয় পরিচিত এক বুদ্ধিজীবী লোক যিনি ধর্ম নিয়ে এরকম কথা বলেন তিনি নিজেই একজন তথাকথিত বুদ্ধিজীবী এটা কি মিথ্যা বলেছি??? আল্লাহ্‌ আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদেরকে ধর্মীয় জ্ঞান দান করেন এবং তাদেরকে সংখ্যা গরিষ্ট লোকদের বুঝার ক্ষমতা দিন এবং সম্মান করারও শক্তি দিন। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ