পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : নানা হাক ডাকে জমে উঠেছে রাজধানীর পুরান ঢাকার ইফতার বাজারগুলো। গতকাল রোববার প্রথম রোযায় ইফতারির বাজারে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। পুরো রাজধানীজুড়েই ফুটপাত আর রাস্তায় ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছিল মৌসুমি দোকানীরা। বিকালে বসে মাগরিবের আগেই বেচাবিক্রি শেষ করে তারা ঘরে ফিরে গেছে। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেচাকেনা বেশি হলেও ইফতারি সামগ্রীতে ভেজালের পরিমাণও থাকে বেশি। অল্প সময়ে মানুষ কেনে বলে কেউ ভেজাল নিয়ে প্রশ্ন তোলে না।
বরং ভেজালমিশ্রিত আকর্ষনীয় সামগ্রীই মানুষের বেশি পছন্দ। অন্যদিকে, রমজান উপলক্ষে জোরদার হচ্ছে ভেজালবিরোধী অভিযান। ভেজালবিরোধী অভিযানের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, কমপক্ষে ৩০টি খাদ্য ও পণ্য সামগ্রীকে টার্গেট করে পরিচালিত হবে অভিযান। এর মধ্যে ইফতারি সামগ্রীও রয়েছে। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রমজানে ইফতার সামগ্রীর মধ্যে বেশি বিক্রি হয় ছোলা, পিঁয়াজু, বেগুনী, চপ ও জিলাপী। তেলে ভাজা এসব খাদ্য সামগ্রীকে আকর্ষনীয় করতে মেশানো হয় কাপড়ের রঙ বা টেক্সটাইল কালার।
কম খরচে বেশি লাভের আশায় এক শ্রেণির লোভী ইফতার বিক্রেতা কাপড়ে ব্যবহারের রঙ ইফতার সামগ্রীতে ব্যবহার করছে। এর কারণ, এক কেজি টেক্সটাইল কালারের বর্তমান বাজার মূল্য সাড়ে তিনশ’ টাকা বা তার কিছু বেশি। সেখানে এক কেজি ফুড কালারের মূল্য প্রায় দশ হাজার টাকা। আবার মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে ভেজাল চিনি। এর রাসায়নিক নাম সোডিয়াম সাইক্লামেট। ক্রেতাদের কাছে আকর্ষনীয় করাসহ মিষ্টি জাতীয় দ্রব্যকে অধিকতর মিষ্টি করতে ব্যবহৃত হচ্ছে স্যাকারিন, সুকরালেস ইত্যাদি। বিক্রেতারা জানান, রমজানে মসলার বাজারও জমে ওঠে। এই সুযোগে মশলায় ভেজালের পরিমাণও বেড়ে যায়। ইটের গুঁড়া, কাঠের ভুসি, গরুর গোবর, টেক্সটাইল কালারসহ খাওয়ার অযোগ্য নানা দ্রব্য মেশানো হয় মসলায়। বেসনে মেশানো হচ্ছে আটা। আটায় হলুদ রঙ ব্যবহার করায় তা বেসনের রঙ ধারণ করছে। বিক্রি বেশি তার পরেও কেনো ভেজাল মেশানো হয় জানতে চাইলে চকবাজারের এক বিক্রেতা বলেন, ক্রেতারা সব সময় কালারফুল জিনিস কেনে। আমরা ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্যই রঙ মিশিয়ে কালারফুল করি। যদি রঙ ছাড়া বিক্রি করা যেতো তাহলে কেউই খাবারের মধ্যে রঙ মেশাতো না।
সুস্বাদু ইফতারি সামগ্রী তৈরীতে তেল একটি অপরিহার্য পণ্য। এ কারণে ইফতারি নসামগ্রী তৈরিতে দু’রকমের ভেজাল তেল ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথমত অনেকবার ব্যবহৃত পুরনো ভোজ্যতেল, দ্বিতীয়ত তেলের নাম করে পোড়া মবিল কিংবা ভেজালমিশ্রিত সরিষা-সয়াবিন তেল। বিশেষজ্ঞদের মতে, একই তেল বার বার ব্যবহারে সেটি উচ্চ তাপমাত্রায় থেকে পারঅক্সাইড ও ট্রান্সফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। এই তেল বদহজম ও পেটে পীড়া, লিভারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নষ্ট করে। আর ভোজ্য তেলে ভেজালের কথা তো সবারই জানা। সরিষার তেলে মেশানো হয় সয়াবিন বা পাম অয়েল। কখনও কখনও খাবার উপযোগী পাম অয়েলের পরিবর্তে সাবান তৈরির পাম অয়েল বা পাম স্টিয়ারিন মেশানো হয়। পাম স্টিয়ারিনের দাম কম; কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কৃত্রিম রঙ ও কৃত্রিম সুগন্ধ মিশিয়ে নানা রকম তেলকে সরিষার তেল বানানো হয়। সরিষার ঝাঁজের জন্য ব্যবহার করা হয় ইরুসিক এসিড এবং এলাইল আইসোথায়োসায়ানেট। আবার তেলে পোড়া মবিলও ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ইফতার উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের শরবতে ব্যবহার করা হয় কৃত্রিম রঙ ও চিনি। যেগুলো পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ইফতারিতে মুড়ির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। অথচ এই মুড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইউরিয়ার পাশাপাশি সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড, যার বাণিজ্যিক নাম হাইড্রোজ। লবণ মিশ্রিত পানি মুড়িতে মেশানোর সময় হাইড্রোজ মিশিয়ে দেয়া হয়। সাধারণ মুড়ি তৈরির সময় দু’বার সিদ্ধ করায় মুড়ির চাল লালচে হয়ে থাকে। এ চাল থেকে লালচে মুড়ি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাজারে লালচে মুড়ির চাহিদা কম বলে মুড়ি সাদা করতে কারখানার মালিক মুড়িতে হাইড্রোজ অথবা ইউরিয়া সার ব্যবহার করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইফতারি বিক্রেতারা খরচ কমাতে কালচে রঙের ছোলা ব্যবহার করে। অনেকে আবার ছোলা সিদ্ধ করে হাইড্রোজ দিয়ে সাদা করে। ফলে কালচে রঙের ছোলাকে সাদা বানিয়ে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে, বুন্দিয়া বানাতেও রঙ ব্যবহৃত হচ্ছে ঢালাওভাবে। একইভাবে জিলাপিতে লাল ও হলুদ রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে। বেসনের তৈরি বুন্দিয়া বা লাড্ডুর স্বাভাবিক রঙ হালকা হলদে আর জিলাপি সামান্য লালচে। পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রীর অবিচ্ছেদ্য অংশ মাঠা। ব্যাপক চাহিদার কারণে বেশ কয়েকটি মাঠা বোতলজাতকারী কারখানা গড়ে উঠেছে। অত্যন্ত নোংরা পরিবেশে এগুলো বোতলজাত করা হচ্ছে। উৎপাদনকারীরা বলছেন, রঙ না দিলে মাঠা চলে না। মাঠার স্বাভাবিক রঙ সাদা। অথচ অস্বাভাবিক রঙ ব্যবহার করে মাঠা বাজারজাত করা হচ্ছে।
অপরদিকে, রমজান মাসব্যাপী ভেজাল খাবার প্রতিরোধ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে বিএসটিআই। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় অসাধু ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা যাতে ভেজাল-নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য এবং পানীয় সরবরাহ করতে না পারে সে জন্য বিএসটিআই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।