পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সেলিম আহমেদ, সাভার (ঢাকা) থেকে : দফায় দফায় বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে ঢাকার সাভারে নির্মাণাধীন একটি ছয়তলা বাড়িতে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষ হয়েছে। দীর্ঘ ১৯ ঘন্টার রুদ্ধদার অভিযানে কোনও জঙ্গিকে পাওয়া যায়নি। অভিযানের উপস্থিতিটের পেয়েই তারা পালিয়েছে গেছে। তবে বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকালে অভিযান শেষে এক ব্রিফিংয়ে ওই বাড়ি থেকে বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান।
তিনি বলেন, অভিযানে হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি, কাউকে আটকও করা হয়নি। তবে জঙ্গিরা নাশকতার জন্যই এখানে অবস্থান করছিল। এখন থেকে এ এলাকাটি পুলিশের কঠোর নজরদারীতে থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বেলা আড়াইটার দিকে অভিযান শেষে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান প্রেস ব্রিফিং এ বলেন, নির্মাণাধীন এই ছয়তলা বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে অভিযানে সাতটি গ্রেনেড, তিনটি সুইসাইড ভেস্ট, ল্যাপটপ, বোমা তৈরির সার্কিট, অত্যাধুনিক চাপাতিসহ নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাভার পৌরসভার নামা গেন্ডা এলাকায় আনোয়ার মোল্লার পাঁচতলা একটি বাড়ি ঘিরে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে ওই বাড়ির সন্দেহভাজন ভাড়াটিয়ারা অভিযানের আগেই বাসা ছেড়ে চলে যায় বলে পুলিশ জানিয়েছিল।
এরপর রাত পৌনে ৮টার দিকে কয়েক শ’ গজ দূরে আরেকটি নির্মাণাধীন ছয়তলা বাড়িতে অভিযান শুরু করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এই বাড়িতে গতকাল সকালে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের ডেপুটি কমিশনার মহিবুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে ভেতরে ঢোকে অভিযান শুরু হয়। এর আগে বাড়িটির আশপাশের বাসিন্দাদের অন্যত্র নিরাপদ দূরত্বে সড়ে যেতে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। অভিযান শুরুর কয়েক ঘন্টার মধ্যে দফায় দফায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাওয়া যায়। এরমধ্যে ছয়তলা এই বাড়ির কাছে আব্দুল হালিমের একটি টিনশেড বাড়িতেও অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সেখানে ঘরের তালা ভেঙে ঢোকেন তারা। তবে এই বাড়ি থেকে কয়েকটি জেহাদী বই ও কয়েকটি আইডি কার্ড পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম নবী। তিনি বলেন, এই বাড়িতে শুধু হেয়ার জেল ও রং ফর্সাকারী ক্রীম তৈরী করতো তারা।
টিনসেড বাড়ির এক ভাড়াটিয়া হলেন লিলি আক্তার বলেন, এ বাড়ির ছয়টি কক্ষ ভাড়া নেন কামাল পরিচয়ে ২২ বছরের এক যুবক। সেখানে কামালসহ নিয়মিত থাকতেন পাঁচজন। অন্যরা হলেন ইব্রাহিম (১৬), নাসিম (১৭), নাসরিন (১৮) এবং বয়স্ক একজন, যার নাম জানা যায়নি। তারা ভাইবোন পরিচয়ে থাকতেন।
অভিযানের পর ওই টিনশেড ঘরটিতে ঢুকে দেখা যায়, এখানে সেখানে ক্রিম তৈরির যন্ত্রপাতি, জেল ইত্যাদি ছড়িয়ে আছে।
প্রতিবেশী আরেকটি বাড়ির মালিক কবির হোসেন পিন্টু জানান, কামাল পরিচয়ে যে ব্যক্তি টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে ক্রিম বানাতেন তার সাথে কয়েকবার কথা হয়েছে। সে জানিয়েছে, তিনি এখানে রং ফর্সাকারী ক্রিম ও হেয়ার জেল তৈরি করবেন। এছাড়া কবির প্রায়ই বোরকা পড়া দুই নারীকে কামালের বাসায় যাতায়াত করতে দেখেছেন।
তবে পুলিশ এসব বিষয়ে কবির হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেলেও পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এলাকাবাসী জানায়, ১৪/১৪ মধ্য গেন্ডার যে ছয়তলা বাড়িতে জঙ্গী আস্তানা সেই বাড়িটি নির্মাণ করছেন সৌদি প্রবাসী হাবিবুর রহমান ও তার শ্যালক ইঞ্জিনিয়ার সাকিব আহম্মেদ অলোক।
বেলা ২টার দিকে সাকিবকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে গেলেও পরে তাকেও ছেড়ে দেয় পুলিশ।
সাকিব সাংবাদিকদের বলেন, তার কর্মচারী আল-আমিন বাসাটি ভাড়া দিয়েছেন। চলতি মাসের ৮ তারিখে মাসিক পাঁচ হাজার টাকায় দক্ষিন পাশের ফ্লাটটি মনির পরিচয়ে এক ব্যক্তি ভাড়া নেয়। সে তার স্ত্রী ও শ্যালক থাকার কথা জানিয়েছে। এর অগে পহেলা মে উত্তর পাশের ফ্লাটটি হেলাল পরিচয়ে এক ব্যক্তি ভাড়া নিয়েছিল। সে তার স্ত্রী ও দুই বছরের এক কন্যা ছিল তখন। তবে তারা যে জঙ্গি তা তিনি জানতেন না।
এদিকে দুপুরে ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনের সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান ঘটনাস্থলে আসেন। প্রথম বিস্ফোরণের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হলো এতে ধারণা করছি ভেতরে বোমা ও জঙ্গি আছে। তিনি বলেন, গত ১৫দিন আগে আমি এ এলাকায় স্থানীয় কাউন্সিলরকে সাথে নিয়ে জঙ্গী বিরোধী সমাবেশ করেছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ছয়তলা বাড়িটির দুইতলার দুটি ইউনিটের ফ্লাট ভাড়া দেয়া। তিন তলার কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ এখনও চলছে।
এদিকে গতকাল বেলা ১২টা ১০মিনিটে বিকট শব্দে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে বাড়িটির ভেতর থেকে। এরপর দুইঘণ্টার মধ্যে আরো নয়টি বিকট বিস্ফারণের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে নয় নম্বর বিস্ফোরণের শব্দ সবচেয়ে বেশি। তখন পুরো এলাকা কেঁপে উঠে।
ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এ এফ এম সায়েদ বলেন, ছয় তলা বাড়িতে শুক্রবার রাতে অভিযানের সময় তাদের ঘরে চুলায় গরম ভাত দেখা গেছে। তাতে মনে হচ্ছে অভিযান শুরুর ঠিক আগেই তারা পালিয়েছে। তিনি বলেন, এরআগে শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের নেতৃত্বে পৌরসভার নামা গেন্ডা এলাকার আনোয়ার মোল্লার পাঁচতলা ভবন ঘিরে রাখার পর নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে কাউকে পায়নি পুলিশ। সেখান থেকে সন্দেহজনক কিছু উদ্ধারের খবরও পাওয়া যায়নি।
ওই ভবনের মালিক আনোয়ার হোসেন মোল্লা জানান, ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বাবু সকালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চলে গেছেন।
বাবুর বাসায় সাতটি গ্রেনেড ও দুটি ল্যাপটপ থাকার সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাঁচ তলা বাড়ির মালিক আনোয়ার মোল্লা বলেন, বাবু কোথায় গেছেন, তার স্থায়ী ঠিকানা-এসবের কোনো কিছু জানেন না তিনি। স্ত্রী ও দুই মাসের একটি শিশু সন্তান নিয়ে মাস দুয়েক আগে বাসাটি ভাড়া করেছিলেন বাবু। অভিযানের খবর পেয়ে তারা পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করছি, -বলেন তিনি। বাবুকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন ভবনের আরেক ভাড়াটিয়া পিকআপ ভ্যানচালক মনির হোসেন। তার স্ত্রী রিমু আক্তার, ৭ বছরের মেয়ে মাস্তুরা ও আড়াই বছরের মেয়ে মোয়াবিয়াকে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আয়নাল হক গেদুর জিম্মায় দেওয়া হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা। এছাড়া বাবুকে ওই বাড়িতে মনির এনেছিল বলে তাকে জঙ্গি কর্মকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে।
মনিরের স্ত্রী রিমু আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, তার স্বামী পিকআপ চালক। সকালে গাড়ি নিয়ে বের হন। মনির সাভারের রাজফুলবাড়ি এলাকার তোতা মিয়ার ছেলে।
আশেপাশের বাড়ি থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয় : জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখা ছয় তলা বাড়ির আশেপাশের সকল বাড়ি থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বাড়িতে প্রবেশ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের ডেপুটি কমিশনার মহিবুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। এর আগেই সকল বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলা হয়।
ছয় তলা বাড়ির অভিযান : গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে ১২ সদস্যের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ওই বাড়িতে দ্বিতীয় দফায় অভিযান শুরু হয়। অভিযানে ওই বাড়িটি থেকে সাতটি হ্যান্ড গ্রেনেড ও তিনটি আত্মঘাতী ভেস্ট নিস্কৃয় করা হয়। এছাড়া অত্যাধুনিক চাপাতি, বেশ কয়েকটি মোবাইল সেট, বেয়ারিংয়ের বল, ব্যাটারি, পাউডার, ল্যাপটপসহ আরও কিছু বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান।
অভিযান শেষে বিকাল আনুমানিক ৩টার দিকে এক ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আমরা প্রথমে অন্য একটি বাড়ির তথ্য পেয়ে শুক্রবার অভিযান চালাই। কিন্তু সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয় একজনের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ছয় তলার এই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।
তবে পুলিশের অভিযানের আগেই জঙ্গিরা ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে। তালা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে একটি রুমে একটি খাট ও চেয়ারের উপরে একটি বিকল টিভি দেখতে পাই। অন্য একটি রুমে ব্যাটারি, সার্কিটসহ বোমা তৈরীর সরঞ্জামাদি দেখতে পাই। পরে সিটিটিসির প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে রাতে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। শনিবার অভিযান চালানো হয়। তবে এ অভিযানে কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।