Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রেনেই সুন্দরবন

নতুন রেলপথ হবে যশোরের নাভারন থেকে শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : ট্রেনেই যাওয়া যাবে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যের সুন্দরবন। এজন্য যশোরের নাভারন থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে। মুন্সীগঞ্জ হচ্ছে সুন্দরবনেরই একটি পয়েন্ট। মুন্সীগঞ্জের চুনা নদীর ওপারেই গভীর বনাঞ্চল। এর মাধ্যমে রেল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনা একটি কোম্পানীর সাথে রেলওয়ের চুক্তি (এমওইউ) হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, সাতক্ষীরা অতি সম্ভাবনাময় একটি জেলা। এ জেলায় রেলপথ হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুন্দরবনে যাতায়াত সহজ হবে। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত পণ্যও দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো সহজ হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, নাভারন (যশোর) থেকে মুন্সীগঞ্জ (ভায়া সাতক্ষীরা) রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে ৯৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ট্রেনে চড়ে যাওয়া যাবে সুন্দরবনের খুব কাছাকাছি মুন্সীগঞ্জ পয়েন্টে। সেখান থেকে একটা নদী পাড়ি দিলেই মূল সুন্দরবন। সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণী বৈচিত্রের কথা চিন্তা করেই ১০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ট্রেন যাবে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী নতুন এ রেললাইন নির্মাণ করা হবে।
রেলওয়ের পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যশোরের নাভারন থেকে সাতক্ষীরা হয়ে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য চীনের একটি কোম্পানীকে প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গত ৬ ফেব্রæয়ারি রেলভবনে চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএনটিআইসি) এর সাথে বাংলাদেশ রেলওয়ের এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। রেলওয়ের পক্ষে প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক এবং সিএনটিআইসি এর পক্ষে জেনারেল ম্যানেজার লিও ঝিউই ওই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক জনসভায় এই রেলপথটি নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। রেলওয়ে সূত্র জানায়, নাভারন থেকে মুন্সীগঞ্জ গ্যারেজ পর্যন্ত ৯৮ দশমিক ৪২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। রেলপথটি  হবে যশোরের নাভারন থেকে মুন্সীগঞ্জ ভায়া সাতক্ষীরা।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবহেলিত রেলওয়ের দিকে নজর দেয়। বিশেষ করে নতুন রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন এবং বর্তমান রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক দায়িত্ব নেয়ার পর রেলওয়েতে উন্নয়নের জোয়ার শুরু হয়। গত কয়েক বছর ধরে সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণসহ তা বাস্তবায়নের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য তিনি ছুটে চলেছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।  জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলা দীর্ঘদিন থেকে রেল যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত। সাতটি উপজেলা ও আটটি থানা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ২২ লাখ মানুষের বসবাস। এ জেলা থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলা ও আশপাশের বিভিন্ন নদীতে পলি জমে নাব্যতা হারিয়ে নৌপথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সুন্দরবন, চিংড়ি সম্পদ এবং ভারত-বাংলাদেশ আমদানি-রপ্তানি (ভোমরা স্থলবন্দর) বাণিজ্য অর্থনৈতিকভাবে ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব কারনে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে একমাত্র সড়কপথটি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসব কারনেও এখানে রেলপথ অতি জরুরী হয়ে পড়েছে।  স্থানীয়দের মতে, যশোরের নাভারন থেকে সাতক্ষীরা হয়ে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত এই রেলপথ স্থাপিত হলে রেল যোগাযোগের নবদিগন্ত সূচিত হবে। এতে করে ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ভ্রমণও হবে আরামদায়ক ও নিরাপদ। পণ্য পরিবহনও হবে সাশ্রয়ী। এছাড়া নতুন রেললাইন স্থাপনের ফলে সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগে পর্যটকদের যাতায়াত অনেক সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে রেলওয়ের মহাপরিচালক   মো. আমজাদ হোসেন বলেন,  সারাদেশকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সুন্দরবন রেলপথে যুক্ত হবে। তবে বনের যাতে ক্ষতি না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এজন্য সুন্দরবন থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে শেষ হবে রেলপথ।
জানা গেছে, নাভারন  থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত মোট ৮টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে নাভারন ছাড়া নতুন স্টেশন হবে ৭টি। এগুলো হলো- বাগআচড়া, কলারোয়া, সাতক্ষীরা, পারুলিয়া, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর ও মুন্সীগঞ্জ। নাভারন থেকে বাগআচড়া স্টেশনের দূরত্ব ১২ দশমিক ৪ কিলোমিটার, বাগআচড়া থেকে কলারোয়া ১২ দশমিক ৬৮, কলারোয়া থেকে সাতক্ষীরা ১৪ দশমিক ২৩, সাতক্ষীরা থেকে পারুলিয়া ১৫ দশমিক ১১, পারুলিয়া থেকে কালিগঞ্জ ১৮ দশমিক ৩৭, কালিগঞ্জ থেকে শ্যামনগর ১৩ দশমিক ৮২ ও শ্যামনগর থেকে মুন্সীগঞ্জ স্টেশনের দূরত্ব হবে ১১ দশমিক ৮১ কিলোমিটার। ব্রডগেজের এ রেললাইনের যাত্রীবাহী ট্রেনের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। তবে সাধারণত পণ্যবাহী ট্রেন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে। এই রেলপথে  অধিকাংশ সেতু নির্মিত হবে বাঁকাল, লাবণ্যবতী, সাপমারা খাল ও কাকশিয়ালী নদীর ওপর।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন
রেলওয়ের পরিকল্পনা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, নাভারন থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হলে পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে। এখন সুন্দরবন দেখতে গেলে সড়ক ও নদীপথে যেতে হয়। তাতে খরচ, ভোগান্তি, ঝুঁকি সবই বেশি। রেলপথ হলে কম খরচে আরামদায়ক ট্রেন ভ্রমনে মানুষ সুন্দরবন দেখতে পারবে। সুন্দরবন হলো সমুদ্র উপকূলবর্তী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি। এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র  মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের  পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান  হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গ কি.মি। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশের আয়তন প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গ কি.মি। এটি বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এছাড়া এই বনভূমিতে বিখ্যাত সুন্দরী ও গোলপাতা গাছও পাওয়া যায়। এই বনের মৌচাক থেকে প্রচুর মধু সংগ্রহ করা হয়। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রেন

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ