পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তার উদ্দেশে আপিল বিভাগ বলেছেন, দেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিচারবিভাগ ১০০ ভাগ ভালো এবং বিচার বিভাগের প্রতি দেশের ৯০ ভাগের বেশি মানুষের আস্থা আছে বলে মন্তব্য করেছেন আপিল বিভাগ। তবে এ নিয়ে নিজের অসন্তোষ্টির কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল। এসময় আদালতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মধ্যে ব্যাপক বাকবিতন্ডা হয়। গতকাল বুধবার ষোড়শ সংবিধান অবৈধ করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে এ যুক্তিতর্ক বাকবিতন্ড রূপ নেয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির বেঞ্চে এ শুনানি চলছে। সকাল ৯টা কিছু পর শুনানি শুরু হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন। আজ (বৃহস্পতিবার) ফের এই মামলার আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি শেষে রিটকারীদের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বক্তব্য শুরু করেন। বেলা পৌনে একটার দিকে তার বক্তব্যও শেষ হয়। এরপর আদালত কর্তৃক নিযুক্ত ১২ জন অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম তার মতামত প্রদান করতে শুরু করেন। তার বক্তব্য অসমাপ্ত অবস্থায়ই বেলা সোয়া একটায় আদালত দিনের শুনানি মুলতবি করেন আদালত।
শুনানির একপর্যায়ে আদালতের ভাবমূর্তি বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মন্তব্য করেন। তিনি আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, কোর্টে যা হচ্ছে তা নিয়ে বিচারপ্রার্থী ও জনগণের একটা গণশুনানি নেন। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ৯০ ভাগের বেশি। চৌকি আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। আমি বাঁশখালীর চৌকি আদালতে গিয়েছি। ওখানে যতজন বিচারপ্রার্থী আসে, ডিসি অফিসেও এত আসে না। বাংলাদেশের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিচার বিভাগ ১০০ গুণ ভালো। আপনারা তো প্রধান বিচারপতিকে পঙ্গু করে রাখার......। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আই এম নট টোটালি হ্যাপি। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রধান বিচারপতি চেয়েছেন, যাদের লেখাপড়া আছে, যোগ্যতা আছে, তাদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে। কিন্তু দেড় বছরেও নিয়োগ হয়নি। আপনারা যেটা চাচ্ছেন, আপনিও জানেন, সবাই জানে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মার্শাল ল’-তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করা হয়েছে। এটা সংবিধানের বড় লজ্জা। সেখানে রিলিজিয়াস (রাষ্ট্রধর্ম) বিষয়টাও আছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ওখানে ক¤েপ্রামাইজ করলে এখানে নয় কেন? অ্যাটর্নি বলেন, সমস্ত পান্ডিত্য আমাদের, আপনাদের। কিন্তু বাহাত্তরের সংবিধানে হাত দিতে পারেন না। যোগ করা যেতে পারে।
আপিল বিভাগ বলেন, জুডিশিয়াল ইমপ্রæভমেন্ট থাকবে না? জুডিশিয়াল রিভিউ থাকবে না? উঠিয়ে দেন। সংবিধানের এ টু জেড আমরা ব্যাখ্যা করব জনগণের অধিকার প্রশ্নে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে। শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ইংল্যান্ডের জুডিশিয়ারি নিয়ে একটি লেখা অ্যাটর্নি জেনারেলকে পড়তে দেন। পড়া শেষে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি যে লিখিত যুক্তি দিয়েছেন, এ লেখা অনুসারে সেটি না জেনেই ইংল্যান্ডের ব্যাপারে দিয়েছেন।
পৃথিবীতে একমাত্র সভ্য দেশ ইংল্যান্ড, যেখানে অলিখিত সংবিধান পালনে চুল পরিমাণ এদিক- সেদিক হয়নি। ব্রেক্সিটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কী চেতনা, কী মানসিকতা!
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। ইংল্যান্ড বিদেশিদের লুণ্ঠন করেছে। তাদের সভ্য বলতে পারেন না। প্রধান বিচারপতি বলেন, লুণ্ঠন অন্য জিনিস। আমেরিকাও লুণ্ঠন করছে। অ্যাটর্নি বলেন, তাদের (ইংল্যান্ড) আইনের শাসন ডেভেলপ করেছে- এটা বলতে পারেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ইয়েস, তারা তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে পেরেছে। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অন্যদের লুণ্ঠন করে নিজের নাগরিকদের সুরক্ষা দিয়েছে।
প্রধান বিচারপতি: সংবিধানের এটুজেড আমরা ব্যাখ্যা করবো জনগণের অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আসলে আমরা সারা সংবিধান ব্যাখ্যা করবো। জনগণের মৌলিক অধিকার বিচার বিভাগের স্বাথধীনতা ও সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর প্রশ্ন যখন আসবে তখন আমরা সংবিধানের এটু- জেড দেখবো।
বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিঞা বলেন, আপনি যেভাবে বলছেন যে, সংসদ সদস্যেদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধের রেকর্ড পাওয়া গেছে। রায়ে তো সেভাবে নাই।
অ্যার্টনী: কালকে একটি শব্দের ব্যবহারের কারণে গণমাধ্যম আমাকে খলনায়কে পরিণত করেছে। আপনার নিজেরই একটি রায় আছে।
প্রধান বিচারপতি-আমাদের রায়ের ফাইন্ডিংস কি আছে তা দেখতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে যাতে কোনো শূণ্যতা সৃস্টি না হয় সেটার কারণেই বলা আছে।
অ্যাটর্নী বলেন, সুপ্রিম জুডশিয়াল কাউন্সিল অবৈধ। যদি সেটা বাতিল করা হতো তবে ওইসময়ের বিচারও বাতিল হতো। ফলে একটা শূণ্যতা সৃসিট হতো। তৎকালীণ টেকনোক্রেট আইনমন্ত্রী যিনি এই আদালতেরই একজন সিনিয়র আইনজীবী তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের এক ধরণের সুবিধা দিতেই জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে বাদ দিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনী করেছেন।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন সুপ্রিম কোর্টকে আন্ডারমাইন করবেন না। টেকনোক্রেট মন্ত্রীদের নিয়ে এত কথা বলছেন? তাহলে কেন এ প্রথা রেখেছেন, কেন বাতিল করেননি? একটি শব্দ ব্যবহারের পূর্বে বুঝেশুনে করবেন। ইট মারলে পাটকেল পরবে, এটা মনে রাখবেন। যার কথা বলেছেন, তার যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনে অবদান রয়েছে। তাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
অ্যাটর্নী: যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি রাজনৈতিক মেনিফেস্টোতে ছিল। এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাকে ছোটো করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি না থাকলে এটা হতো না। প্রধান বিচারপতি: এখানে আবার প্রধানমন্ত্রীকে টানছেন কেন? আপনি যদি গণতন্ত্র, আইনের শাসনের কথা বলেন, তহলে ইংল্যান্ড সহ বিশ্বের সভ্য দেশগুলোর দিকে তাকান। অ্যাটর্নী বলেন: আপনার এ আদালতে কি হচ্ছে? একটা গণশুনানি দরকার। প্রধান বিচারপতি-আমি দক্ষ, যোগ্য বিচারকেএখানে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলাম। যে কারণে গত দেড় বছরে কোনো বিচারক নিয়োগ হয়নি। আপনারা যা চাচ্ছেন সেটি হলে তো এরকম হবেই।
এদিকে রিটকারীর আইনজীবীর মনজিল মোরসেদ বলেন, স্বাধীন বিচার বিভাগ আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোরই অংশ। এটাতে হাত দেয়া যাবে না। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে এতে আঘাত করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো আইন করা হলে সেটা বাতিল করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। সংসদ আইন পাশ করে। শুনেছি সুপ্রিম কোর্টে গেলে সেসব আইন বাদ হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে কেন বাদ হয়। সংসদের পাওয়ারটা ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।