পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ক্ষতিকর প্রভাবে দেশে রুক্ষ হয়ে উঠেছে পরিবেশ-প্রকৃতি : মানুষের উৎপাদন ক্ষমতা লোপ : নিত্যনতুন রোগ-ব্যাধি
শফিউল আলম : গত মার্চ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫২ ভাগ এবং এপ্রিলে ১০৬ ভাগ অতিবৃষ্টির ফলে হাওরসহ দেশের অনেক এলাকা ভেসে যায়। ফাল্গুনের শেষ ভাগ থেকে পুরো চৈত্র মাস ও বৈশাখের অর্ধেক পর্যন্ত এই অতিবর্ষণ ছিল ৩০ বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ রেকর্ড। কিন্তু গেল বৈশাখের শেষ দিক থেকে চলতি জ্যৈষ্ঠ তথা মে মাস এ পর্যন্ত তাপদাহে অতিবাহিত হচ্ছে। গতকালও (বুধবার) দেশের সর্বত্র মেঘহীন শুষ্ক আবহাওয়ায় আগুনের তেজে প্রখর রোদে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা ছিল বিরাজমান। তাপপ্রবাহ চলছে টানা এক সপ্তাহ ধরে। আবহাওয়া বিভাগ মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল। এবার শীত মওসুমেও (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) স্বাভাবিক শীতটুকুর আমেজ লক্ষ্য করা যায়নি দেশের অধিকাংশ জেলায়। এমননিভাবে ঘটছে আবহাওয়া-জলবায়ুর রূপ বদল। একের পর এক দুর্যোগ, দুর্ভোগ ও সঙ্কট তৈরি হচ্ছে জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনে। এর প্রভাবে নীরবে ঘটছে বহুমুখী বিপর্যয়। অস্বাভাবিক মতিগতিতে ধরা দিচ্ছে আবহাওয়া। বাংলাদেশে চিরায়ত ষড়ঋতুর আদি চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য পাল্টে যাচ্ছে। পঞ্জিকা মতে বর্ষায় বৃষ্টি ঝরে না। শীতে কাঁপায় না। গ্রীষ্মের খরতাপ যেন মরুর আগুনের হলকা। শরৎ, হেমন্ত ও বসন্ত আলাদা করে অনুভূতি জাগায় না। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রেও এর বিরূপ প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আবহাওয়া ও দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনকে সরাসরি ঠেকানো যাবে না। তবে বিরূপ পরিবর্তনের ধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ জীবনধারা এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডকে অগ্রাধিকারমূলক গুরুত্ব দিয়েই অভিযোজন ক্ষমতা পরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। জলবায়ু ক্রমাগত হয়ে উঠছে রুগ্ন, খেয়ালী, বৈরী, এমনকি রুদ্র-রুক্ষ-প্রলয়ংকরী। অনেক সময়ই পূর্বাভাসের সাথে মিলছে না। মানুষের বান্ধব হয়ে আর নয়; বরং জলবায়ুর পরিবর্তন জটিল সঙ্কট হয়ে দেখা দিয়েছে। আবহাওয়ার বিরূপতা সকল শ্রেণী-পেশা-বয়সের মানুষের জীবনযাত্রায় নানামুখী অনিষ্ট ও ভোগান্তি ডেকে আনছে। এরফলে ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে মানবসম্পদের সার্বিক উৎপাদনশীলতা। কমছে সক্ষমতার হার। সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি ও করাল গ্রাসে বসতি হারিয়ে প্রতিবছর পিছু হটে মূল ভূখন্ডের দিকে ছুটে আসছে উপকূল চর দ্বীপাঞ্চলের অভাবী মানুষজন। বাংলাদেশের সন্নিকটে বঙ্গোপসাগরের বৈরী আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব বেড়েছে। উপর্যুপরি সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে হচ্ছে সমুদ্র ও নৌ-বন্দরসমূহকে। তাপমাত্রা অস্বাভাবিক উঠানামা করছে। গত এক বছরের আবহাওয়ায় সারাদেশে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক হারের চেয়ে স্থানভেদে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বাতাসের আর্দ্রতার হারেও হেরফের হচ্ছে। এতে করে অনুভূত হচ্ছে ঘামের আধিক্যে অসহনীয় ভ্যাপসা গরম। বছরের অধিকাংশ সময়ই গুমোট হয়ে থাকছে আবহাওয়া। এর সবচেয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে বিস্তীর্ণ চর, উপকূল ও দ্বীপাঞ্চলবাসী।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে আবহাওয়া ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এ জে এম গোলাম রাব্বানী ইনকিলাবকে বলেন, আবহাওয়া-জলবায়ুর পরিবর্তন নিছক তাত্তি¡ক বা ‘কাগুজে’ সঙ্কট নয়। এর ক্ষতিকর প্রভাব-প্রতিক্রিয়াগুলো এখন খালি চোখে ধরা পড়ছে। শুধু তাই নয়, এর কোনো না কোনোভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠি। জলবায়ু পরিবর্তনে রুক্ষ হয়ে উঠছে আবহাওয়া, পরিবেশ-প্রকৃতি। মানুষের মাঝে নিত্যনতুন রোগ-ব্যাধির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। ফল-ফসল, সবজি আবাদের ক্ষেত্রে বালাইয়ের সংক্রমণ হার বেড়ে যাচ্ছে। তাতে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও দক্ষিণ এশিয়ার নাভিমূলে বঙ্গোপসাগর কিনারে, হিমালয়ের পাদদেশে, ভাটি অঞ্চলে ভৌগোলিক বিশেষ অবস্থানে রয়েছে। আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিক্ষর প্রভাব এখানে বেশি এবং তা নাজুক পর্যায়ে। অধিক জনসংখ্যার অনুন্নত দেশ হওয়ার কারণে জনবসতি, কৃষি-খামার, জীবিকা, জনস্বাস্থ্য, উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ জনজীবনের নানামুখী ক্ষেত্রে গিয়ে পড়ছে এর কমবেশি ধকল।
আকস্মিক ও অকাল বন্যা, পাহাড়ি ঢল, খরতাপ ও শুষ্কতা, খরা, হঠাৎ ভারীবর্ষণ, পানিতে আর্সেনিক ও লবণাক্ততার আগ্রাসন বৃদ্ধি, অতিআর্দ্র ও উষ্ণতার প্রবণতা বাড়ছে। মৌসুমী ভাইরাসজনিত (ট্রপিক্যাল) হরেক রোগ-ব্যাধি যেমন- সর্দি কাশি প্রদাহজনিত জ্বর, বাতজ্বর, ফ্লু, পেটের পীড়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এর বিপরীতে মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষায় এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার এবং এর উপর নির্ভরতা মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েই চলেছে। সেন্টার ফল গেøাবাল চেঞ্জের গবেষণায় জানা গেছে, জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের শিকার বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষের জীবিকা ধ্বংস হচ্ছে। এরমধ্যে আড়াই থেকে ৩ লাখ লোক বাস্তুহারা হয়ে শহর-নগরে আশ্রয় নিচ্ছে। অনেকেই বাধ্য হচ্ছে মানবেতর জীবনযাপনে। তাছাড়া গাছপালা, জীববৈচিত্র্য, প্রাণিকুল হারিয়ে ফেলছে বাঁচার অবলম্বন তথা খাদ্য-শৃঙ্খল (ফুডচেইন)। কৃষিজ খাদ্য উৎপন্ন হচ্ছে কম, পুষ্টিমানও লোপ পাচ্ছে।
এদিকে দেশে আবহাওয়া-জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের কারণে এর ক্ষতিকর প্রভাব-প্রতিক্রিয়ার অন্যতম নজির হলো- বাংলাদেশে এককালের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীনতম দ্বীপ জনপদ স›দ্বীপ ক্রমাগতভাবে ভাঙ্গনে উত্তাল সাগরে বিশাল ভূমি বিলীন হয়ে যাওয়া, ভাঙ্গনে দশমিনার সংকোচন, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা শহররক্ষা বাঁধে ফাটল, কুয়াকাটা, পতেঙ্গা থেকে শুরু করে কক্সবাজার-টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সৈকতে ও উপকূলের অগভীরে ডলফিন, হাঙ্গর, শুশুক, জেলিফিস, সামুদ্রিক, শৈবাল, সাপ, কচ্ছপ ও শামুক-ঝিনুকের গণহারে মড়ক, চিংড়িসহ মাছের প্রজনন হ্রাস ও প্রজাতির সংখ্যা সংকোচন, গবাদি পশুর চারণভূমি বিপন্ন, বালির সৈকতে (স্যান্ড বীচ) কাদামাটির আধিক্য সাম্প্রতিককালে বৃদ্ধি, লবণাক্ততার অধিকতর আগ্রাসন, সুন্দরী ও ধুন্ধল গাছের সংখ্যাহ্রাস, কেওড়া গাছের আগামরা রোগ (টপ ডায়িং) ইত্যাদি। তাছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং মনুষ্যসৃষ্টি আগ্রাসন উভয় কারণে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, গাজীপুরে প্রকৃতির নিপূণ হাতে গড়া সারি সারি পাহাড়-টিলা এবং বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এতে করে দেশের মূল ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পাল্টে যাচ্ছে। বিপন্ন হয়ে উঠেছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। জনবসতি, কৃষি-খামার, জীবিকা, জনস্বাস্থ্য, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ সবক্ষেত্রেই আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্ষতিক্ষর প্রভাব বেড়েই চলেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।