Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ঝুঁকিতে ৩ হাজার ২২২ হেক্টর জমি

| প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


পানি বিশেষজ্ঞরা সত্য কথা বলেননি : আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
স্টাফ রিপোর্টার : চলতি ২০১৭ সালে দেশের প্রধান তিনটি নদী যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মার তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার মোট ৩ হাজার ২২২ হেক্টর জমি ভাঙ্গন কবলিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)।  
হাওরের বিপর্যয় নিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলো সঠিক তথ্য দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এছাড়া এ নিয়ে পানি বিশেষজ্ঞরাও সত্য কথা বলেননি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নদীভাঙন পূর্বাভাসবিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেন্টার ফর এভায়রনমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর উদ্যোগে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহযোগিতায় এই  সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রী বলেন, হাওরে বন্যা হয়েছে অতিবৃষ্টির কারণে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে স্মরণকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে। হাওরের বাঁধের উচ্চতা সাড়ে ছয় মিটার। পানি বয়ে গেছে সাত মিটার ওপর দিয়ে। ফলে অসময়ের এই বৃষ্টির কারণেই ফসলহানি হয়েছে। তবে তাঁরা শুধু পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন। পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার নদী ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। নদী ভাঙনের পূর্বাভাস পেলে তা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া যায়। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) নদীর গতি-প্রকৃতি ও ভাঙনের পূর্বাভাস নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে এবং এজন্য তাদের প্রশংসা করে পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, এই পূর্বাভাস অনুযায়ী আমাদেরকে যথোপযুক্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক এমপি উপস্থিত ছিলেন। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহম্মদ খান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর কবীর এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত উপস্থিত ছিলেন। সিইজিআইএস-এর নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. ওয়াজিউল্যাহ উদ্বোধনী সেশনে সভাপতিত্ব করেন।
পানিসম্পদ বলেন, নদী ভাঙন মানুষের জীবনে এক কঠিন নিয়তি, বাধ্য হয়েই মানুষকে তা মেনে নিতে হয়। নদী ভাঙনের কারণে মানুষের ঘর-বাড়ী স্থানান্তরিত হয়। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা হলে বিশ্ব জানে। ঝড়-বন্যা হলে সরকার নড়ে চড়ে বসে। কিন্তু নদী ভাঙন হলে তাৎক্ষণিকভাবে তেমন কিছু  দেখা যায় না। তিনি বলেন, নদী ভাঙনের ফলে জীবনহানি না হলেও জমি ও ফসলহানি হয়। এর মাধ্যমে আসলে আমরা ভবিষ্যত হারাই। যে ব্যক্তি বা পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়, তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। নদী সিকস্তির শিকারদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ক্ষতিপূরণ কখনই পূরণ করা সম্ভব নয়। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, কিন্তু এ বিষয়ে কাজ করার জন্য আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নদীর সামগ্রিক পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। জ্বালানী খাতে যেভাবে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ছে, তেমনি পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মার তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ও স্থাপনা গুলো সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এতে যমুনা নদী সম্পর্কে বলা হয়েছে, যমুনার তীরবর্তী ১ হাজার ২০৫ হেক্টর জমি, ১৭৬  হেক্টর বসত-ভিটা, ২ হাজার ৪৭০ মিটার ব্যবহার্য এবং ৩৬২ মিটার অব্যবহার্য বেড়ি-বাধ, ২৩৫ মিটার জেলা সড়ক, ২২৭ মিটার উপজেলা সড়ক, ২ হাজার ৩৯৩ মিটার গ্রামীণ সড়ক, ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫টি হাট-বাজার, ১টি সরকারি ও ১টি বেসরকারি অফিস, ১টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ২১টি মসজিদ ও মন্দির ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে। গঙ্গার তীরবর্তী ৩৮৬ হেক্টর জমি, ৪৫ হেক্টর বসত-ভিটা, ২৪৭ মিটার উপজেলা সড়ক, ৫০১ মিটার গ্রামীণ সড়ক, ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১টি হাট-বাজার, ১টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ৩টি মসজিদ ও মন্দির ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে। অপরদিকে পদ্মার তীরবর্তী ১ হাজার ৬৩১ হেক্টর জমি, ৩৬২ হেক্টর বসত-ভিটা, ৯০৬ মিটার গ্রামীণ সড়ক, ২টি হাট-বাজার, ১টি মসজিদ বা মন্দির ভাঙ্গনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় মোট ৩ হাজার ২২২ হেক্টর জমি, ৩৬২ হেক্টর বসত-ভিটা, ২ হাজার ৪৭০ মিটার কার্যকর এবং ৩৬২ মিটার অকার্যকর বেড়ি-বাধ ভাঙ্গন কবলিত হতে পারে। এ ছাড়া সেমিনারে এই তিনটি নদীতে ২৩৫ মিটার জেলা সড়ক, ৪৭৪ মিটার উপজেলা সড়ক, ৩ হাজার ৮০০ মিটার গ্রামীণ সড়ক, ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৮টি হাট-বাজার, ১টি সরকারি ও ১টি বেসরকারি অফিস, ২টি স্বাস্থ্য  কেন্দ্র এবং ২৫টি মসজিদ ও মন্দির ভাঙ্গন কবলিত হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জমি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ