Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবৈধ টমটমের জট কক্সবাজারে

প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কক্সবাজার অফিস : পর্যটন শহর কক্সবাজার এখন যেন টমটমের শহরে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার তাগিদে শহরে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধের উদ্যোগ কিছুটা সফল হলেও শহরবাসী নতুন করে টমটম জটে পড়েছে এখন। আনাড়ি টমটম চালকদের হাতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা এবং হতাহত হচ্ছে মানুষ। পৌর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মহলের শিথিলতায় পার পেয়ে যাচ্ছেন ওসব আনাড়ি টমটম চালক মালিকরা। এতে করে কক্সবাজার শহরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অবৈধ টমটমের বহর। টমটম জটে প্রায় সময় রাস্তায় হাঁটা-চলাই দুষ্কর হয়ে পড়ে। টমটম জটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পর্যটক ও শহরবাসী।
কক্সবাজার শহরে একাধিক সড়ক থাকলেও প্রধান সড়কটিই একমাত্র যানবাহন চলাচলের উপযোগী। শহরের আভ্যান্তরীণ সড়কগুলো দখল বেদখলে কাহিল। তাই প্রধান সড়কেই চাপ পড়ে সব ধরণের যানবাহনের। কক্সবাজার শহরকে যানজট মুক্ত করতে পৌর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন শহরে বড় যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে। তবে ছোট যানবাহন চলাচলের সুযোগে টমটম নামের ইজিবাইক গুলো দখল করে নেয় কক্সবাজার শহরের রাস্তা-ঘাট। ধূঁয়া মূক্ত পরিবেশ সম্মত হওয়ায় প্রশাসন শহরে ইজিবাইক গুলোর চলাচল পারমিট করে। কিন্তু এই সুযোগে শহরে প্রয়োজনের চার গুণ বেশী ইজিবাইক চলাচলের কারণে সৃষ্টি হয় নতুন করে টমটম জট।
অনুসন্ধানে দেখাগেছে, কক্সবাজার শহরে যে পরিমান টমটমের প্রয়োজন তার চার গুণ বেশী টমটম চলাচল করছে। এসব টমটম এক-তৃতীয়াংশের অনুমতি থাকলেও অন্য গুলোর কোন অনুমতি নেই কোন কর্তৃপক্ষের। তার পরেও তিন হাজারের অধিক টমটম নির্র্বিঘেœ চলাচল করছে শহরে।
অধিকাংশ টমটম চালক আনাড়ি ও অপরিপক্ব। দেখা গেছে, চালকদের অনেকেই সাগরে মাছ ধরার কাজ করত, সেখানে মন্দা দেখা দেয়ায় শহরে এস টমটম চালা শুরু করে। আবার কেউ ছিল রিক্সা চালক, এখন হয়ে গেছে টমটম চালক। অথচ কারো কোন প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা নেই। তাই রাস্তায় দেখা যায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। এছাড়াও এসব হাজার হাজার টমটম প্রতিদিন অবৈধ সংযোগে বিদ্যুৎ চুরি করে শহরবাসীর বিড়ম্বনা বাড়ালেও যেন দেখার কেউ নেই। অধিকাংশ ফিটনেসবিহীন টমটমের লাইট জ¦লেনা। রাতের বেলায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েও ঘটে দূর্ঘটনা।  
অনুসন্ধানে অরো জানা গেছে, গত তিন বছরে কক্সবাজার শহরে চলাচলকারী টমটমের ধাক্কায় এক ডজন মানুষের মৃত্যু হলেও আহত হয়েছে কম পক্ষে তিন শতাধিক মানুষ। সর্ব শেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারী বিমান বন্দর সড়কের কানাইয়া বাজার এলাকায় অবৈধ টমটমের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন মাওলানা আবু তৈয়ব কুতুবী (৫৫)। তিনি কক্সবাজার শহরতলীর কুতুবদিয়া পাড়া শাহ ওয়াজেদ আলী সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক। এছাড়াও তিনি মুফাস্সিরে কুরআন মাওলানা ইসমাঈল কুতুবীর আপন চাচাত ভাই।
জানাগেছে, ওই দিন টমটমের ধাক্কায় মাওলানা আবু তৈয়ব মাথায়, কুমরে ও পায়ে গুরতর আঘাত পেয়ে আহত হয়েছিলেন। স্থানীয়রা তাকে কক্সাবজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হলেপথে তিনি প্রাণ হারান।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে ট্রাফিক ইনসপেক্টর বজলুর রহমান জানান, কক্সবাজার পৌরসভায় দুই হাজার মত টমটম চলাচলের সুযোগ থাকলেও এখন আসলে কত টমটম চলাচল করে তা তিনি জানেন না। পৌর কর্তৃপক্ষ এগুলোর অনুমোদন কর্তৃৃপক্ষ হলেও শহরে চলাচলকারী অসংখ্য টমটম হচ্ছে লাইসেন্স বিহীন। তবে ট্রাফিক পুলিশ অবৈধ টমটমের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে বলেও তিনি জানান।
কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহাবুবুর রহমান মাবু এ প্রসঙ্গে বলেন, শহরে পাঁচ হাজার মত টমটম চলাচল করলেও পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে দেড় হাজার মত। তবে অবৈধ চলাচলকারী টমটমের বিরুদ্ধে প্রতিমাসে একবার অভিযান চালানো হয়ে থাকে। এই পরিমান অবৈধ টমটমের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য পৌর সভার জনশক্তির অপ্রতুলতা ছাড়াও নানা সমস্যা রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে নানা রকম চাপের কারণে এগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না বলেও তিনি জানান।
ভুক্তভোগীরা নতুন করে টমটমের লাইসেন্স না দেয়া এবং শহরে অবৈধ টমটম চলাচল বন্ধ করে যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানের দাবী জানান।










 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অবৈধ টমটমের জট কক্সবাজারে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ