Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি হয়েছে -ওবায়দুল কাদের

| প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, হঠাৎ কী কারণে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অভিযান, সেটা নিয়ে আমি গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক  জেলার দপ্তর, উপদপ্তর ও সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকালের অভিযানের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণতন্ত্রের সম্পর্ক আবিষ্কার করেছেন। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আমাদের পার্টি অফিসে দফায় দফায় হামলা হয়েছে। আমাদের সিআরআই‘র (সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন) অফিস সিলগালা করে দিয়েছিল। তাদের সময় আওয়ামী লীগ অফিসে শুধু অভিযান চালানো হয়নি, দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করা হয়েছিল। অফিস লক্ষ্য করে  বোমা হামলা হয়েছে। এসব কি তারা ভুলে গেছেন। তখন কি গণতন্ত্র সঠিক ছিল?
কাদের বলেন, আমাদের অফিসের সামনে তখনকার বিরোধীদলীয় নেতার একুশে আগস্টের সমাবেশে পরিকল্পিতভাবে যে গ্রেনেড হামলা করেছে, সে কি গণতন্ত্র? আইভি রহমানসহ ২৩ জনের রক্ত ঝরলো, এটা রক্তাক্ত গণতন্ত্র ছিল। দৃষ্টান্ত কারা স্থাপন করেছে? বড় বড় কথা বলে লাভ নেই। গণতন্ত্রের নামে হত্যা নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের পার্টি অফিসের সামনে একুশে ফেব্রæয়ারি সমাবেশ করতে দেয়নি। এটা কি গণতন্ত্র? কাজেই গণতন্ত্রের নামে অতীতের জঘন্য ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত কারা স্থাপন করেছে তা এদেশের মানুষ জানে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় কোনো প্রভাবশালীকেও ছাড় দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। পাবনায় ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলুর ছেলে শিরহান শরীফ তমালকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাবনায় যে ঘটনা ঘটেছে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এটা আপনারা জানেন। এ ধরণের ঘটনা যেখানেই ঘটবে সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং নেয়া হবে।
কাদের বলেন, দলের শৃঙ্খলার ও ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য কোন প্রভাবশালী ব্যক্তিকেও ছাড় দেবেন না দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অপকর্মের জন্য প্রশাসনিকভাবেও ব্যবস্থা  নেয়া হবে। তেমনি দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ীও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, নেত্রী বলেছেন, জেলার আগাছা পরগাছাদের দূর করতে।
তিনি বলেন, আশেপাশের লোকজনের কার্যকলাপ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নিজে ভালো কিন্তু আশপাশের লোকজন ভালো নয়, সেটাও কিন্তু ভালো নয়। সবাইকে একযোগে ভালো হতে হবে এবং ভালো কাজ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, জেলা পর্যায়ে দেখা যায় অনেক নেতা নিজেদের ইচ্ছামত কমিটি করেন, আবার ভেঙে দেন। আবার কমিটি গঠন করেন। আবার কাউকে ইচ্ছেমত বহিষ্কার করে থাকেন এবং ভাঙেন। এটা করা যায় না। এটা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রবিরোধী। কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী কমিটির অনুমতি ছাড়া কাউকে বহিস্কার করা যাবে না। আপনারা সুপারিশ করতে পারেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের আচরণে জনগণ যেন ক্ষুব্ধ না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আগামী দেড় বছরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। গতকালের বর্ধিতসভার মাধ্যমে নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি এবং একটা গাইডলাইন আমাদের নেত্রী উপস্থাপন করেছেন। এ গাইডলাইন অনুযায়ি সবাইকে চলতে হবে। নির্বাচন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে চায়। কিন্তু কিছু কিছু নেতাকর্মীর আচরণের কারণে উন্নয়নের পর জনগণ অসন্তুষ্ট হয়। যা ভোটের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
দলের ভেতরে কোনো সমস্যা থাকলে গণমাধ্যমকে না জানিয়ে সরাসরি তার সঙ্গে কথা বলতেও নেতাকর্মীদের তাগিদ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রতিদিন বিকাল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত তার সঙ্গে দেখা করা যাবে বলেও জানান তিনি।
দলের ভেতরের কথা নিয়ে গণমাধ্যমে না যাওয়ার কথা বলে কাদের বলেন, ঘরের কথা পরকে বলার সময় একটু সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের কাছে আমাদের যেতে হয়, তারাও আমাদের কাছে আসেন। কিন্তু গণমাধ্যম স্পর্শকাতর বিষয়। তাদের সঙ্গে কৌশলী আচরণ করতে হবে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সবাই আওয়ামী লীগ করে না। তাই আমরা যখন আমরা গণমাধ্যমের কথা বলব, তখন অত্যন্ত সতর্কভাবে করবে। দলের স্বার্থে গণমাধ্যমের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। আর গণমাধ্যমের কর্মীরা আমাদের কাছে আসে, দলের স্বার্থ রক্ষা করে তাদের তথ্য দিতে হবে।
নেতাদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। কোনো অভিযোগ থাকলে আগে স্ব স্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠিক সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদককে অবহিত করবেন। তারা যদি সুরাহা দিতে না পারে, তাহলে সাধারণ সম্পাদকের কাছে আসবেন। বিষয়গুলো নিয়ে আমি দলের সভাপতির সঙ্গে কথা বলব। আলোচনা করেই সমস্যাগুলো নিরসন করব।
প্রাথমিক বৈঠক শেষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত  নেতাদের সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের উপর প্রশিক্ষণ দেন।
এরপর প্রতিটি জেলায় একটি করে ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়। গতকাল গণভবনে তৃণমূলের  নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আটটি বিভাগীয় জেলায় আটটি ল্যাপটপ বিতরণ করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ল্যাপটপের অর্থায়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।



 

Show all comments
  • S. Anwar ২৩ মে, ২০১৭, ৮:৪২ এএম says : 0
    গোয়েন্দা তথ্যের ফলাফল শুন্য হবে কেন?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওবায়দুল কাদের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ