রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
কামরুজ্জামান টুটুল, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে
মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছে ডাকাতিয়া নদীর চাঁদপুর অংশ। নদীর কোল থেকে বালু ব্যবসা বন্ধ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ আর খনন না করলে অচিরেই হারিয়ে যাবে ডাকাতিয়া নদী। এটাই এখন ডাকতিয়ার বাস্তবতা। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ডাকাতিয়া নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লার বাগসারা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যা পরবর্তীতে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি কুমিল্লা-লাকসাম চাঁদপুর জেলার বুক ছিড়ে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে মিশেছে। চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে শুরু হয়ে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত চলে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর বেশ কিছু অংশ আজ বিভিন্নভাবে মরে যেতে বসেছে। এর মধ্যে নদীর সবচে বেশি সর্বনাশ হচ্ছে হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি এলাকায়। নদীর এই সকল এলাকায় বেশ কিছু স্থান শুকিয়ে বা বালি জমে এতোটাই সরু হয়ে গেছে যে ইচ্ছে করলে যে কেউ কোন কোন স্থানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে লোকজন চলাচল করতে পারে। সরজমিনে দেখা যায়, জেলার হাজীগঞ্জ বাজার এলাকার ডাকাতিয়ার অংশের দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে অনেকগুলো বালু মহাল। বালু ব্যবসায়ীরা ট্রলার থেকে বালুর ডিবিতে বালু উঠানোর সময় নদীর পাড় এলাকায় বালি পড়ে জমে থাকে। জমে থাকা সেই বালি সরিয়ে না নেয়ার কারণে ডাকাতিয়া নদীর এই অংশগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা হাজীগঞ্জের আলীগঞ্জসহ শাহরাস্তি উপজেলার খোর্দ্দ এলাকার সেতুর পাশসহ নদীর পাড় এলাকাসহ সকল বালি মহালগুলোর স্থান। আবার হাজীগঞ্জ বাজারস্থ ডাকাতিয়ার উত্তর পাস বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ধীরে ধীরে কৌশলে দখলে নিয়ে নিচ্ছে। তবে দখলকারীরা একজনে এক রকমভাবে কৌশল অবলম্বন করছে। কেউ দেয়াল টেনে, কেউ ময়লা ফেলে, কেউ বাঁশের বেড়া কেউবা আবার নেটের বেড়া দিয়ে কৌশলে দখলে রেখেছে। সময় সুযোগমতো নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিবে। সরজমিনে আরো দেখা যায়, হাজীগঞ্জ বাজারের হলুদ পট্টির ভিতর দিয়ে ডাকাতিয়ার এই অংশ নদীটি একটি সরু খালে পরিণত হয়ে গেছে। সদ্য নির্মিত পাবলিক টয়লেটের পাশ দিয়ে একটু সামনে এগুলো পাকা ঘাটলার একপাশে ময়লা আর আবর্জনায় ভরাট হচ্ছে ডাকাতিয়া। একই অংশের দক্ষিণ পাড়ে মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে যার কারণে এই অংশটি একেবারে সরু হয়ে গেছে। এই অংশের দক্ষিণ পাড় নোয়ার্দ্দা গ্রামের শুকুর আলী জানান, বেশ কয়েক বছর আগে নদীতে জোয়ার ভাটা উপলব্ধি করা যেতো। এখন অনেক সময় বুঝা যায় না কোন সময় জোয়ার আসে আর কোন সময় ভাটা পড়ে। একটু ভিন্ন প্রশ্নে শুকুর আলী বলেন, নদী পাড়ের অবৈধ দখল সরিয়ে খনন না করলে ডাকাতিয়ার অন্তত এই অংশ টুকু নিশ্চিত ভরাট হয়ে যাবে। একই সুরে কথা বললেন হাজীগঞ্জ বাজার থেকে ডিগ্রী কলেজ গুদাড়া ঘাটে নৌকা চালাতেন স্থানীয় রান্ধুনীমুড়া গ্রামের রফিক। এই রফিক জানান, প্রায় দশ বছর আগে নৌকা চালানো বন্ধ করে দিয়েছি কিন্তু আমরা এমন সরু নদীতে নৌকা চালাইনি। কি নদীতে কাজ করছি আর এখন কি দেখছি এই ডাকাতিয়াকে। দখলের বিষয়ে জিজ্ঞেস করাতে কেন বলতে চাননি এই মাঝি যার কারণ যাদের নাম বলবেন তাদের সবাই তাকে চিনে। অপরদিকে ডাকাতিয়া নদীর নাম করণের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ধারণা করা হচ্ছে এই নদী দিয়ে মগ-ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলায় ডাকাতির জন্য প্রবেশ করতো। ডাকাতদের উপদ্রবের কারণে নদীটির নাম ডাকাতিয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আবার তৎকালীন কলকাতাস্থ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাউন্সিলের পক্ষে কোর্ট অব ডিরেক্টর সভার কাছে ১৭৫৮ খ্রিস্ট্রাব্দের ১০ জানুয়ারি পেশকৃত একটি চিঠির মাধ্যমে জলদস্যুদের উপদ্রবের চিত্র পাওয়া যায় যা থেকে ডাকাতিয়া নদীর নামকরণ হয়েছে বলে লোক মুখে শুনা যায়। অন্যদিকে এক সময় ডাকাতিয়া নদী তীব্র খরস্রোতা ছিল। মেঘনার এই শাখা নদী ডাকাতিয়ায় মেঘনার উত্তাল রূপ ফুটে উঠত। ফলে ডাকাতিয়ার করালগ্রাসে নদীর দুই পাড়ের মানুষ সর্বস্ব হারাত। ঐ সময়ে ডাকাতিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে বহু মানুষের সলিল সমাধিও ঘটেছে। ডাকাতের মতো সর্বগ্রাসী বলেই এর নাম করা হয়েছে ডাকাতিয়া। এতো সব আর ইতিহাসের সাক্ষী সেই ডাকাতিয়া নদী আজ সাধারণ মানুষের হাতে মরতে বসেছে। এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওলিউজ্জামান ইনকিলাবকে জানান, ডাকাতিয়ার হাজীগঞ্জ অংশে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা শুরু হয়েছে। তালিকার কাজ শেষ হলে আইনীভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।