পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশে কারা নিরাপত্তা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে জোরদার ও উন্নত হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) ও বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে কাজ শুরু করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর খিলক্ষেতের হোটেল লা মেরিডিয়ানে প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ কারা কর্মকর্তাদের ‘কারাগারের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা এবং মানবিক চাহিদার ভারসাম্য’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। আন্তর্জতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) ও বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তর যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করছে।
তিন দিনের এই সম্মেলন শেষ হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। ‘কারাগারের মধ্যে নিরাপত্তা এবং মানবিক চাহিদার ভারসাম্য’ শিরোনামে আয়োজিত এ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের ২৮ জন জ্যেষ্ঠ সংশোধনাগার ব্যবস্থাপক অংশ নিচ্ছেন। দেশে এবারই প্রথম কারা অধিদপ্তর ও আইসিআরসি যৌথভাবে এ ধরনের আঞ্চলিক সম্মেলন আয়োজন করছে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কারাবন্দির শ্রেণিবিন্যাসের ব্যবস্থা না থাকলেও অন্য অনেক দেশের চেয়ে এ দেশের কারাগার ব্যবস্থাপনা অনেক উন্নত। বর্তমান সরকার শ্রেণিবিন্যাসের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কারাগারগুলোতে নিরাপত্তা প্রদ্ধির পাশাপাশি কারা ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে আমাদের কারা সেক্টরকে আরও উন্নত করেছি। আগামীতে কারাবন্দিদের শ্রেণী বিন্যাস ব্যবস্থা চালুর বিষয়ও বিবেচনায় রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় জেলখানা স্থানান্তর করে কেরানীগঞ্জে নেয়া হয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এক দিনে সাড়ে ৭ হাজার কারাবন্দিকে স্থানান্তরের এমন নজির নেই।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘রেডক্রস আমাদের বন্ধু সংস্থা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা আমাদের সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ কারাগারের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে এবং এতে উন্নতির চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা অন্য রাষ্ট্রের কারা নিরাপত্তা ও এ বিষয়ে নানা অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পাব’।
এ সময় স্বরাষ্ট্র সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৭৩ হাজার কারাবন্দির মধ্যে ৭৪ শতাংশই বিভিন্ন মামলায় শুনানির অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি বলেন, কারাবন্দিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ ও কারা ব্যবস্থাপনায় উন্নতির ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার অনেক বেশি আন্তরিক।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব বলেন, কারাগারে বন্দির সংখ্যা কমিয়ে আনতে দ্রæত মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া আরো গতিশীল করতে কম্পিউটারাইজড ব্যবস্থা চালু করা হবে। প্রচলিত কারা বিধির সংশোধন ও মান্নোয়নের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, প্রিজন ম্যানেজমেন্ট তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। ওই সম্মেলনে উন্মুক্ত কারাগার নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারের উখিয়াতে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে এবং এ জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে।
আইজি প্রিজন বলেন, সম্মেলনের বিভিন্ন কর্ম অধিবেশনে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন কেস স্টাডির ভিত্তিতে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে। এতে কারাগার বা বন্দিশালা নির্মাণ, ডিজাইন, পরিকল্পনা এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও মানবিক ব্যবস্থার মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন এবং বন্দীদের শ্রেণীভুক্ত করা ও তাদের পরিদর্শনের বিষয় গুরুত্ব পাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দক্ষ ও সুষ্ঠু কারা ব্যবস্থাপনায় কারা কর্মকর্তাদের জন্য আধুরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রসচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বাংলাদেশের কারাগারের বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরেন। এ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অনেক উপকৃত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা আইসিআরসির সঙ্গে একটি গতিশীল কাজের সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। এই অঞ্চলে আমাদের সমকক্ষদের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছি। আমরা আশা করি, অংশগ্রহণকারীরা প্রতিবেশী দেশের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ থেকে শিখবে এবং তাদের নিজস্ব বন্দী-সুবিধাগুলো উন্নত করতে অনুপ্রাণিত হবে।
আইসিআরসি বাংলাদেশের প্রতিনিধি-প্রধান ইখতিয়ার আসলানভ বলেন, আইসিআরসি সুষ্ঠুভাবে কারাগার ব্যবস্থাপনা করতে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোকে একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে উৎসাহিত করে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। বন্দীদের হয়ে আমাদের কাজ পরিচালনা সহজতর হবে।
সম্মেলনে জানানো হয়, অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন কেস স্টাডি ব্যবহার করে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে। কারাগার বা বন্দিশালাগুলো তৈরি, নকশা প্রণয়ন, পরিকল্পনা এবং পরিচালনার সময় নিরাপত্তা ও মানবিক অবস্থার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা নিয়েও আলোচনা হবে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশ হচ্ছে কম্বোডিয়া, চীন, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভানুয়াতু। অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশ কারাগারে বিভিন্ন কর্মকান্ড ও সেবার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেবে। গত বছরের কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের পর কারাসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোয় যে ধরনের অগ্রগতি হয়েছে, সেগুলো আলোচনা করবে। পাশাপাশি চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও আলোচনা-পর্যালোচনা হবে।
রেজোয়ান হারুনের অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরার পর নিখোঁজ হওয়া রেজোয়ান হারুনের অবস্থান জানতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা অনুসন্ধান চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
গতকাল সচিবালয়ে বিকালে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। এর আগে মন্ত্রণালয়ের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সিরিয়া ও ইরাকে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি যারা পালিয়ে দেশে ফিরছে, তাদেরও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত এমন কেউ দেশে ঢুকতে পেরেছে বলে কোনও তথ্য নেই। একইসঙ্গে তারা যাতে দেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরও বলেন, দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব না হলেও দমনে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। বৈঠকে আলোচনার বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রায়ই এভাবে বৈঠক করি। উভয় দেশের সম্পর্কন্নোয়নে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করি। গত এক বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি এন্টি টেররিস্ট ইউনিট বাংলাদেশে জঙ্গি দমনে কাজ করছে। জঙ্গি দমনে তাদেরও ভূমিকা রয়েছে। তাদের কাছ থেকে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করছে।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট টিমের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে প্রস্তাব রয়েছে। এর আগে ইংল্যান্ড ক্রিকেট টিমও বাংলাদেশে এসেছিল। তাদেরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দিয়েছে। নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনও প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। যেকোনও মূল্যে সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা এস. বার্নিকাট বলেন, সন্ত্রাসবাদ এখন বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা প্রায়ই বৈঠক করি। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় কিভাবে একসঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ কারা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছি।’
বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মার্শা এস. বার্নিকাট এবং পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হকসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।