বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর থেকে : দেশে বোরো আবাদের প্রকৃত চিত্র কি? ফলন এবার কেমন হতে পারে। বন্যা, বøাষ্ট রোগ, অতিবর্ষনে গোড়া পচন এবং সর্বপরি একনাগারে বৃষ্টির পর আকষ্মিক রৌদ্রতাপে ধান চিটা হওয়ার ঘটনায় কি পরিমান ফলন কম হতে পারে এর কি কোন পরিসংখ্যান সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে এবং কল্যাণে কাজ করে যাওয়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা সঠিকভাবে তদারকি করছেন কি ? মাঠ পর্যায়ের মাঠ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কৃষকদের সাথে যোগাযোগ এবং মাঠের প্রকৃত তথ্যের মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি? ভালভাবে তদন্ত হলে এসবের অধিকাংশের উত্তর আসবে না। কারন মাঠের সাথে নয় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের সর্ম্পক কাগজের সাথে। লক্ষমাত্রা নির্ধারন এবং পূরনের সাথে দুই যুগের হিসাব খুব কম বেশী নয়। মডেল হিসাবে শুধুমাত্র দিনাজপুর জেলার লক্ষমাত্রা, আবাদ এবং পূরনের হিসাব মুল্যায়ন করলেই কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। ধানের আবাদ ও উৎপাদনের কাল্পনিক চিত্র তুলে ধরে মূলত সরকারকেই বিব্রত করার পথ তৈরী করছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। কেননা সরকার কৃষি উৎপাদনকে মাথায় রেখে সরকারের বাৎসরিক জিডিপি হার নিরুপনসহ উন্নয়নের সার্বিক পরিকল্পনা’র অন্যতম অংশিদার হচ্ছে ফসল উৎপাদন। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, রডের জায়গায় বাঁশ ব্যবহারের ঐতিহাসিক কর্মকান্ডের নিরব স্বাক্ষী এই বিভাগের জেলা পর্যায়ের তদারককারী কর্মকর্তারাই।
কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে বছরের প্রধান অর্থকরী ফসল হচ্ছে বোরো ধান। হাওড়সহ কয়েকটি এলাকায় বছরে একটি মাত্র আবাদ হয়ে থাকে- যা হচ্ছে বোরো আবাদ। আবার উত্তর ও দক্ষিনাঞ্চলে দু থেকে তিনটি ফসল আবাদ হয়ে থাকে। যার মধ্যে বছরের অন্যতম ফসল হচ্ছে বোরো। এবার অকাল বন্যায় হাওড়ের বোরো ফসল সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস হয়ে গেছে। বোরো ফসলের সাথে ক্ষতিগ্রস্থ মাছ, হাঁসসহ জীবিকা নির্বাহের অন্যান্য প্রাণীসম্পদ। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ প্রথম অবস্থায় হাওড় এলাকার ক্ষতি নিয়ে অতটা সংশয় প্রকাশ করেছে। মিডিয়ার এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপের কারনে হাওড় এলাকার সব শেষ হওয়ার চিত্র ফুটে উঠে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী’র সদয় হস্তক্ষেপের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পাশে দাড়াতে বাধ্য হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংস্থা এমনকি বিভিন্ন সংগঠন। হাওড় এলাকার ক্ষতি ধান চালের বাজারকে অস্থির করে তুলে।
বোরো আবাদের মৌসুমের শুরুতে সর্বপ্রথম বোরো ধান কাটা মারা শুরু হয় হাওড় অঞ্চলে। উত্তরের কৃষি শ্রমিকেরা ৬/৭ মাস আগে থেকেই হাওড় অঞ্চলে ধান কাটা মারার চুক্তি নিয়ে থাকে। হাওড় অঞ্চলে ধান কাটা মারা শেষে শুরু হয় উত্তরাঞ্চলে ধান কাটা মারা। ওই শ্রমিকেরাই ফিরে এসে উত্তরের ধান কাটা মারায় অংশ নিয়ে থাকে। এবার ৯০ ভাগ কৃষি শ্রমিক হাওড় অঞ্চলে যেতে পারেনি। ফলে বৈশাখ মাসেও অর্ধেক মুজুরীতে উত্তরের শ্রমিকেরা কাজ খুজতে বাধ্য হয়েছে।
ধানের বাজারের চিত্রও প্রায় একই। বড় বড় অটো মিল মালিকেরা সাধারনত দক্ষিনাঞ্চলের ধান এনে মিল চালু করে থাকে। এবার যা সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক মিল এখনও চালুই করা সম্ভব হয়নি। বন্যায় হাওড়ের ধান শেষ হতে না হতেই শুরু হয় উত্তরে বøাষ্ট রোগ। চৈত্রের প্রখর রৌদ্রতাপে যখন তেষ্টা মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেখানে চৈত্রের শুরু থেকে অঝোর ধারার বৃষ্টিতে বাড়ীর বের হওয়াই মুশকিল হয়ে পড়ে। শেষ রাতে গরম কাপড় গায়ে দিতে হয়। কৃষি’র সাথে একটু হলেও জড়িতরা জানেন বোরো ধান সেচ নির্ভর ফসল। উপর থেকে অর্থাৎ আকাশের পানি সহ্য করতে পারে না এই ফসল। কিন্তু অঝোর ধারার বৃষ্টিতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা সুখের ঢেকুর তুলে জানান, এবার সেচ কম লাগায় কৃষকের অর্থ বেঁচে গেছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বৃষ্টির পানির কারনে কোন বিষ বা ভিটামিন ব্যবহার করতে হবে কিনা এবং বোরো জমিতে পানি যেন জমে না থাকে সে ব্যাপারে কোন সচেতননামূলক প্রচার চালায়নি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক কৃষকের সাথে আলাপ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ২৪ এপ্রিল হঠাৎ করেই উত্তরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে থাকে। ৩৪ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা উঠে যায়। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই দুধালো এবং শিষ বের হওয়া বোরো ধানের বিস্তিৃর্ন ক্ষেত লাল হয়ে বিবর্ণ হয়ে যেতে থাকে। ক্ষেত দেখে বাড়ী থেকে নাস্তা খেয়ে ফিরেই দেখে ধান ঝলছে গেছে। খানসামা বীরগঞ্জ, বিরল ও সদরের অনেক এলাকার কৃষক জানায় জমির পাশেই দাড়িয়ে থাকতে থাকতে মিনিট থেকে ঘন্টা পার না হতেই ধান গাছ লাল হয়ে যেতে দেখে অনেকেই বলেছে এটা আল্লাহর গজব ছাড়া আর কিছু নয়। আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ঘটনারা পর শত শত মানুষ ঝলছে যাওয়া ধান ক্ষেত দেখতে গ্রামে গিয়েছে। মাঠ পর্যায়ের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা’রা বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের জানিয়েছে বৃষ্টির পানিতে থাকে নাইট্রোজেন ্ও ইউরিয়া এই দুইয়ের মিশ্রণে হঠাৎ তাপমাত্রা অসহনীয় হয়েই এই ঘটনা ঘটছে। আবার ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউট রংপুর অঞ্চলেল প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বোরো ধান ধান শীষ বের হওয়ার সময় তাপমাত্রা যদি ৩৪ ডিগ্রির উপরে উঠে যায় তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা হয়েছে। তার মতে উত্তরাঞ্চলের যা ঘটেছে তার অধিকাংশই আবহাওয়া জনিত কারনে। কিন্তু কৃষি বিভাগ এটা মানতে নারাজ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষি বিদ গোলাম মোস্তফা জানান বøাস্ট বা বিএল এর কারনেই ক্ষতি হয়েছে- যার পরিমান অত্যন্ত কম। আবাদী ১ লক্ষ ৭৭ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে মাত্র ৬ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু এখনই যদি অন্য কোন মাধ্যম দিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করা হয় তাহলে এই পরিমান তিন গুন হবে এবং বøাষ্ট এর চেয়ে রোগ বালাই নেই কিন্ত ক্ষতিগ্রসথ হয়েছে এর পরিমানই বেশী হবে। সচেতন মানুষদের মন্ত্রব্য কৃষি সম্প্রাসারণ বিভাগ নয় প্রয়োজনে ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউট এবং ধান নিয়ে গবেষনা করে এমন প্রতিষ্ঠান দিয়ে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন এবং তদন্ত করলে মূল তথ্য বেরিয়ে আসবে। মূল তথ্য বের হলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ আগামীতে কাগজে নয় মাঠে যেয়ে আবাদ ও ফলনের চিত্র সরকারের কাছে তুলে ধরতে উদ্ভুত্ হবে। নইলে কাগজে কলমে ফলন বাম্পার হবে কিন্তু বাস্তবে বাজারে ধান ও চালের সংকট থেকেই যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।