পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ছাগলনাইয়া থেকেঃ খাগড়াছড়ির রামগড় সাব্রুম স্থল বন্দর চালুর লক্ষ্যে সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নির্মাণ কাজের জন্য আগরওয়াল কনস্ট্রাকশন নামে গুজরাটের একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে ভারত। সেদেশের ন্যাশনাল হাইওয়েস এন্ড ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) নামে সংস্থাটি গত জানুয়ারি মাসে এ সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে।
এক্সটা ডোজড, ক্যাবল স্টেইড আরসিসি সেতুটি নির্মাণের দরপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল গত ১৮ ফেব্রুয়ারি। নির্মাণকাজের জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ৪১২মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ দশমিক ৮ মিটার প্রস্তের মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ খুই শিগগিরই শুরু করবে। সীমান্তের ওপারের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, প্রায় ১১০ কোটি ভারতীয় রুপি ব্যয় করে সেতুটি নির্মাণ করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। আর্ন্তজাতিকমানের দুই লেনের এ সেতুতে থাকবে ফুটওয়ে এবং এপ্রোচ রোড। রামগড় পৌর সভার সীমান্তবর্তী মহামুনি এবং ওপারের আনন্দপাড়া এলাকায় ফেনী নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণের স্থান ইতোমধ্যে চুড়ান্ত করা হয়েছে। ৪১২ মিটার দীর্ঘ সেতুটি রামগড়-বারৈয়ারহাট-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত হবে। ওপারে সেতু থেকে প্রায় ১২শ মিটার এপ্রোচ রাস্তা নবীনপাড়া-ঠাকুরপল্লিহয়ে সাব্রুম-আগরতলা জাতীয় সড়কে যুক্ত হবে। সেতু নির্মাণের সময়সীমা ধরা হয়েছে দুই বছর পাঁচ মাস। ন্যাশনাল হাইওয়েস এন্ড ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এর ডিজিএম প্রদীপ ভুইয়ার বরাত দিয়ে ত্রিপুরার আগরতলার ডেইলি দেশের কথা পত্রিকায় প্রকাশিত এক রির্পোটে বলা হয়, সাব্রæমের ছোটখীল রাস্তা হতে ফেনীনদী পর্যন্ত একএকর ৫৭ শতক জায়গা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ত্রিপুরার আগরতলা থেকে প্রকাশিত ডেইলি দেশের কথা পত্রিকায় ১৫ জানুয়ারী ফেনী সেতুর অনলাইন টেন্ডার ডাকা হলো। শিরোনামে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ফেনীর নদীর উপর প্রস্তাবিত এই আন্তর্জাতিক সেতু নির্মিত হলে শুধু ভারতের পূর্বাঞ্চলই নয়, খুলে যাবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। সেতুটি হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সড়কপথে ত্রিপুরাসহ উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলোর বাণিজ্যিক আদান প্রদানের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে ধারনা করা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কাছে এসে যাবে চট্টগ্রাম নৌ বন্দর। সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ মিলবে। দুই পাড়ের মানুষ বাংলাভাষী। তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতিও বাংলায়। দুপাড়ে পরিবশেগত মিলও রয়েছে ব্যাপক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শরণার্থীরা রামগড় সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়েছিল। মুক্তিবাহিনী সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যুদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরা রাজ্যে গিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছে এবং এখনো বাংলাদেশে তাদের ভিটে মাটি আছে এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বারুনী øানের দিন প্রতি বছর ফেনী নদীতে পুলিশ, বিজিবি, বিএসএফ এর সকল বাধা অতিক্রম করে দুই পাড়ের লাখো বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এক মহামিলন মেলায় মিলিত হয়। দুই পাড়ে বসে বিশাল মেলা। এদিকে, ফেনীনদীর ওপর মৈত্রী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশ অংশের অগ্রগতি স¤পর্কে রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আল মামুন মিয়া বলেন, ইতিমধ্যে দুদেশের যৌথ সার্ভের মাধ্যমের সেতু নির্মাণের এলাইমেন্ট চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। সেতু ও সংযোগ রাস্তার জন্য দুই একর ৮৬ শতক জমি অধিগ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ড. মো. গোরফান ফারুকীসহ তিনি ঐ জমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। জমিগুলো অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। এদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রামগড় সাব্রæম স্থলবন্দরের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক হিসেবে ঢাকা চট্টগ্রাম মহা সড়কের বারৈয়ারহাট হতে রামগড় পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে রুপান্তরিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে জাইকা কাজটি করবে। ইতিমধ্যে সড়কে অবস্থিত ব্রিজ ও কালভার্টগুলো পুনঃনির্মাণের জন্য জাইকার প্রকৌশল বিভাগ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে। তারা মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় প্রাক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ করেছে। জাইকার এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী ফেব্রæয়ারী মাসে তারা রামগড় বারৈয়ারহাট সড়কে ১৫টি ব্রিজ ও কালভার্টের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের নাজিরহাট হতে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সীমান্তের ওপারের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রামগড় সাব্রæম স্থলবন্দর চালুর দুদেশের সিদ্ধান্ত সামনে রেখে ইতিমধ্যে ভারত আগরতলার থেকে সাব্রæম পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এছাড়া জাতীয় সড়কের উন্নয়নসহ বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণ কাজও চলছে। এই মৈত্রী সেতু নির্মিত হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পণ্য দ্রব্য ও ভারী যন্ত্রপাতি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আনা-নেওয়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্য স¤প্রসারণ করা সম্ভব হবে। এতে ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশই লাভবান হবে। তবে এ সেতুটিতে ভারত বেশি লাভবান হবে। মূলতঃ চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা নিতে প্রতিবেশি দেশ এ সেতু নির্মাণে আগ্রহী। প্রসংগত: ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সাথে বৈঠকে রামগড় সাস্থলবন্দর চালু করতে যৌথ সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে ফেনীনদীর ওপর প্রস্তাবিত সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।