Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শিগগির চালু হচ্ছে চট্টগ্রামের আলোচিত সেই তিনটি সেতু

প্রধানমন্ত্রীর অসন্তোষের পর কাজে অবিশ্বাস্য গতি

| প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম মহানগরীর বিমানবন্দর সড়কে সেই তিন সেতুতে শিগগির গাড়ি চলবে। সেতু তিনটির নির্মাণ কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। দেড় বছরে কাজের অগ্রগতি ছিল যেখানে মাত্র ৫ শতাংশ। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসন্তোষ প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। আগামী ২০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট নির্ধারণ করা হলেও তার আগেই দুু’টি সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। বাকিটিও নির্ধারিত সময়ে চালু করা যাবে। খুব শিগগির সেতুটি চালু হলে ওই সড়কে জনদুর্ভোগের অবসান হবে।  
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা-জাইকার অর্থায়নে মহানগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে তিনটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়কের রুবি সিমেন্ট কারখানার পাশে ৭ নম্বর খালে, ৯ নম্বর গুপ্তখালে ও ১৫ নম্বর খালের ওপর এই তিন সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। তিনটি সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিটি গভর্নেন্স প্রজেক্টের আওতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতু তিনটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজের কোন অগ্রগতি না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু কাজে ধীরগতিতে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ওই ভিআইপি সড়ক চরম জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনটি সেতু ভেঙ্গে বিকল্প পথে যানবাহন চলাচল করায় সড়কজুড়ে রাতে-দিনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
গত ১২ মার্চ নগরীর পতেঙ্গা বোট ক্লাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি শোধনাগার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দর সড়কে উন্নয়ন কাজে ধীরগতিতে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ওই ভাঙ্গা সেতু পার হয়ে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে যান। প্রধানমন্ত্রী দ্রæত তিনটি সেতুর কাজ শেষ করে সড়কটি  যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। জনদুর্ভোগের জন্য যারা দায়ী তিনি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারী দেন।
প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট সকলে সেতু তিনটির নির্মাণ কাজ তদারকিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, এলজিইডি, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা নিয়মিত কাজ তদারক করতে সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় দেন। চসিকের পক্ষ থেকে প্রকৌশলীদের নেতৃত্বে কয়েকটি টিম গঠন করা হয় কাজ তদারক করতে। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাতে-দিনে কাজ চলতে থাকে। জনবলের পাশাপাশি বাড়ানো হয় যন্ত্রপাতিও। কাজে অবিশ্বাস্য গতি আসে। দেড় বছরে যেখানে ৫ ভাগ কাজও হয়নি সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দুই মাসে প্রায় পুরো কাজ শেষ করে আনা হয়। জনদুর্ভোগ কমাতে ওই সড়কে দিনের বেলায় ভারি যানবাহন চলাচলও বন্ধ করা হয়। দিনের বেলায় শুধুমাত্র ব্যক্তিগত যানবহান ও অটোরিকশা, টেম্পু, মিনিবাসের মতো হালকা যানবাহন চলাচল করায় যানজটও হ্রাস পায়। মার্চে প্রায় দশদিন ওই সড়ক পুরোপুরি বন্ধ করে কাজ করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ৭ ও ৯ নম্বর খালের উপর দু’টি সেতুর গার্ডার ও মূল অংশের ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ। বিপুল সংখ্যক শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। নির্মাণ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাশপাশি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত নির্মাণ সামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, সেতুর মূল কাজ শেষ, বাকি যা আছে তা শেষ হতে আর বড় জোর এক সপ্তাহ সময় লাগবে। দু’টি সেতু কয়েকদিনের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া যাবে। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নিয়মিতই সেখানে যান এবং উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন জানিয়ে শ্রমিকরা বলেন, মেয়র একবার সেখানে গেলে দীর্ঘ সময় থাকেন এবং তাদের কাজে উৎসাহ দেন। প্রবীণ শ্রমিক রশিদ মিয়া বলেন, এই সেতুর কাজের খোঁজ খবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রাখছেন। এই সেতুর কাজ করতে পেরে আমরাও খুশি। প্রধানমন্ত্রী দ্রæত কাজ শেষ করতে বলেছেন, আমরাও তাই রাত-দিন কাজ করছি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, ইতোমধ্যে তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজ ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। ৭ ও ৯ নম্বর খাল এলাকার দুটি সেতুর ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সেতু দুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে। তবে ১৫ নম্বর খালের সেতুটির কাজ প্রায় শেষ দিকে হলেও অ্যাপ্রোস রোড দীর্ঘ হওয়ায় ওই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হতে আরও কিছুদিন লাগবে। আগামী ২০ জুনের মধ্যে সেতু তিনটির নির্মাণ শেষ করার যে চ্যালেঞ্জ নেওয়া হয়েছিল তাতে তারা সফল হবেন জানিয়ে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ওই দিন সেতু তিনটি উদ্বোধন করা হবে। তবে তার অনেক আগেই সেতু তিনটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দ্রæত কাজ শেষ করতে গিয়ে কাজের গুণগত মান ক্ষুণœ ও বাজেট বাড়ানো হচ্ছে না। সেতুর মান ও বাজেট ঠিক রেখেই কাজ শেষ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যথাসময়ে কাজ শেষ করতে সিটি কর্পোরেশন যাবতীয় সকল প্রকার সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। রাতে-দিনে কাজ চলছে এরফলে দ্রæত কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ