Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভ্যাটে জনতুষ্টির পথে সরকার কমছে বাজেটের আকার

| প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইএমএফের চাপ, সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সুযোগ আর ব্যবসায়ীদের দাবির মধ্যে জনতুষ্ঠিকেই বেছে নিয়েছে সরকার। কারণ নির্বাচনের আগে আর ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলটি। তাই অর্থমন্ত্রীর জোর চাওয়ার মুখেও বিষয়টি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সমাধানে আসতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার রাতে এ বিষয় নিয়ে এক বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট হার কমিয়ে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবে কি না, নাকি পূর্বের ভ্যাট আইনই কিছুটা সংশোধন করে বহাল থাকবে- সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেয়ার পরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন শেখ হাসিনা
এদিকে অর্থমন্ত্রী আগামি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার কথা জানিয়ে আসলেও নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে না পারায় কমানো হচ্ছে বাজেটের আকার। তবে কত কমানো হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামি অর্থবছরের জন্য বাজেটের নতুন আকার নির্ধারণ হতে পারে ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি থেকে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
এক বিনিয়ন ডলারের ঋণ অনুদান পেতে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের শর্ত জুড়ে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এই শর্ত বাস্তবায়নে গতবছরই ১৫ শতাংশ একক ভ্যাট হার ধরে নতুন আইন বাস্তবায়নের জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে ব্যবসায়ীদের জোর দাবির মুখে গতবার এই আইন বাস্তবায়ন থেকে সরে আসলেও ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে যেকোন মূল্যে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
পাশাপাশি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বর্তমান সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। এর পরেই ১১ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই নির্বাচনের আগে চলমান মেগাপ্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করে জনগণের মন জয় করার চিন্তা আছে সরকারের। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করার চেষ্টার পেছনে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থের যোগান নিশ্চিত করাও উদ্দেশ্য ছিল সরকারের। কারণ নতুন আইন বাস্তবায়ন করতে পারলে রাজস্ব আয় ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়তো।
তবে নির্বাচনের আগে জনপ্রিয়তার কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দাবি আর জনগণের ভোগান্তির বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন ভ্যাট হার বাস্তবায়ন করা হলে ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়ার একটি আশংকা ছিলÑ যে কারণে ঝুঁকি নিতে চাননি প্রধানমন্ত্রী সহ ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতারা। অর্থমন্ত্রী যে কোন মূল্যে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কথা বলে আসলেও ব্যবসায়ীদের দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল, ভ্যাটের হার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ নির্ধারণ এবং বিভিন্ন শিল্পে বিভিন্ন হারে ভ্যাট আদায়ের প্রথা চালু রাখা। পাশাপাশি ভ্যাটমুক্ত সীমা বাড়ানো। আর নতুন ভ্যাট আইনে বলা হয়েছে, সবক্ষেত্রে ভ্যাটহার ১৫ শতাংশ হবে; আর প্যাকেজ ভ্যাট থাকবে না; ভ্যাটমুক্ত লেনদেনের সীমা ৩০ লাখ টাকা হবে।
এ বিষয়ে সমাধানে আসার জন্য গত রোববার রাত সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থউপদেষ্টা, রাজনৈতিক উপদেষ্টা, এনবিআর চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মুখ্য সচিব ও এনবিআরের তিন সদস্যকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বৈঠক করেন। ভ্যাট আইন নিয়ে গত ৫ বছরেও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের দুরত্ব দুর করতে না পারায় অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের ওপর বিরক্ত হয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দ্রæত বসে সমাধানে আসার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তো ট্যাক্স দিচ্ছে, না হলে রাজস্ব আসছে কোথা থেকে? তাঁদের বাদ দিয়ে আইন করা ঠিক হবে না। তাঁদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলতে পারে, এমন কোনো সুযোগ আমি কাউকে দিতে চাই না।’
অর্থমন্ত্রী ১৩ শতাংশ ভ্যাট হার কার্যকরের বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৩ শতাংশ আর ১৫ শতাংশের মধ্যে পার্থক্য কী?’ এ বিষয়টি এখনই চূড়ান্ত না করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাঁকে যাঁকে প্রয়োজন মনে করবেন, তাঁকে তাঁকে নিয়ে বসে আলোচনা করে ভ্যাট আইনের বিষয়টি চূড়ান্ত করে দ্রæত আমাকে দেখাবেন।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী অর্থ বিভাগের সিনিয়র কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে আগামী বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। সেই বৈঠকে নতুন ভ্যাট আইনের কারণে জনগণের ওপর যাতে বাড়তি চাপ না পড়ে, দ্রæত তার উপায় খুঁজে বের করতে অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, ‘ভ্যাটের কারণে জনগণের যাতে ভোগান্তি না হয়, সে জন্য দ্রæত পথ খুঁজে বের করুন। সামনে নির্বাচন রয়েছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভ্যাট

১০ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ