পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : “আর কত? দেশের মানুষ এখনো পর্যন্ত ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ তুলছে না কেন? কেন রাষ্ট্র, আইন-আদালত তাদের (ধর্ষক) ফাঁসি দিচ্ছে না? আমার মতো আর কত নারীর সম্ভ্রমহানী ঘটলে প্রতিবাদ করবে সবাই?” আর্তনাতের সাথে কথাগুলো বললেন, নগরীর নতুন বাজার স্ট্যান্ড রোডের ব্যাংক গলির সেলিম গাজীর বাড়ীতে ধর্ষিত খুলনার সিটি ‘ল’ কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী নবমুসলিম (২৫)। গতকাল সোমবার তার সাক্ষাতকারটি গ্রহন করেছেন আমাদের খুলনা ব্যুরো রিপোর্টার আশরাফুল ইসলাম নূর।
সেদিনের নির্মম ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, “অনেক মারপিট করার পর আমার গলায় দা’ ধরে আর আমার হাজবেন্টের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে করতে নেশাজাতীয় ওষুধ মুখের মধ্যে দিয়ে খাইয়েছে। প্রথমে আমাকে চারটে, পরে আরো একটা মোট পাঁচ এবং আমার স্বামীকে ১১টা ট্যাবলেট সেবন করাইছিল। এছাড়া ডালের সাথে, ভাতের সাথে কি খাইতে দিছে তা তো জানি না। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার স্বামী ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর থেকে শুরু হয় আমার ওপর অত্যাচার। অচেতন অবস্থায় কিছুটা বুঝতে পারছিলাম নরপশুদের পৈশাচিকতা। আর কিছুই বলতে পারবো না, বুঝে নেন। একদিন পর ঘুম ভেঙে দেখি আমার স্বামী খুব বমি করছে। আমারও খুব বমি হচ্ছিল। আমি ওদের বলি- আমাকে আটকিয়ে রাখো, ওকে ছেড়ে দাও। হাসপাতালে ভর্তি করাও। কিন্তু ওরা আমার কোন কথা শুনেনি। তার পরে জোর করে তিনটি স্ট্যাম্পে আমাদের স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। আমার স্বামীর মটরসাইকেলটিও রাঙ্গা বাদশার নামে এভিডেভিট করে নেয় জোর করে। রাঙ্গা বাদশা আমাদে প্রচুর মেরেছে। আমি জীবনে এরকম মাইর খাইনি।”
অশ্রæসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার স্বামী কাঠের ব্যবসা করেন। তার ব্র্যাক ব্যাংকের চেক ও ক্রেডিট কার্ড, ওর (স্বামীর) মোবাইল, আমাদের ব্যাগে ৭ হাজার টাকা ও বিকাশে ৯০০টাকা ছিল সব ছিনিয়ে নেয় তারা। এর একপর্যায়ে আমি কাটাতারের বেড়া পেরিয়ে পালাই। সেই কাটাতারের বেড়ায় আমার বোরখা ও স্কার্টের অংশ ছিঁড়ে রয়ে গেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে আমারে পূর্ব পরিচিত সাইফুলকে মোবাইল করে ডাকি। সে পুলিশ নিয়ে আসে। পুলিশ নিয়ে সেই বন্দী করে রাখা ঘরে গিয়ে আমার স্বামীকে পাইনি। পরে অন্য এক জায়গা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। আমি আর কি বলবো, দু’টো রাতের কথা আমি বলতে পারবো না।
ঘটনার পূর্বসূত্র উল্লেখ করে নওমুসলিম গৃহবধু বলেন, সেলিম গাজী তার বৌ তারাকে বেদম মারপিট করায় তিনি গ্রামের বাড়ী কয়রাতে চলে গিয়েছিলেন। আমাদের ডেকে ছিল তাদের ঝগড়া মিমাংসা করিয়ে দিতে। সেলিম গাজী ও তারার এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। ১ মে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমরা গেলেই ওরা আমাদের একটি রুমের মধ্যে আটকিয়ে বেধড়ক মারপিট শুরু করে। আমার বাবা (সনাতন ধর্মাবলম্বী) কে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করেছিল। আমার বাবা বড় লোক, সেটাই হয়তো তারা মনে করেছিল। চার ভাই-বোনের আমি সবার ছোট। বাবাকে ফোন করে বলেছিল, এখন দুই লাখ টাকা দিবি; আর বাকী তিন লাখ টাকা এক সপ্তাহ’র মধ্যে দিতে হবে। না হলে বস্তা ভরে ভৈরব নদে লাশ ফেলে দেবো। আর একটি রাত থাকলে জীবনে বাঁচতাম কি না জানি না!
তিনি বলেন, আমি রূপসার কাজদিয়া স্কুল থেকে এসএসসি এবং পিঠাভোগ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি), খুলনা মহিলা কলেজ থেকে অনার্স (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ও বিএল কলেজ থেকে মাস্টার্স্ পাশ করেছি। বর্তমানে সিটি ল’ কলেজে ২য় বর্ষের ছাত্রী আমি। আমি আইন বুঝি, শিক্ষিত, সচেতন। কিছুদিন আগে বনানীতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আর কত? দেশের মানুষ এখনো পর্যন্ত ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ তুলছে না কেন? কেন রাষ্ট্র, আইন-আদালত তাদের (ধর্ষক) ফাঁসি দিচ্ছে না? আমার মতো আর কত নারীর সম্ভ্রমহানী ঘটলে প্রতিবাদ করবে সবাই?”
প্রসঙ্গত্ব, গত ১ মে দিনে-রাতে ধর্ষণের ঘটনার পরদিন খুলনা সদর থানায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় মূল অভিযুক্ত নতুন বাজার স্ট্যান্ড রোড ব্যাংক গলির মোঃ সেলিম গাজী (২৫), অন্য আসামীরা হল- নতুন বাজার মসজিদ গলির মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে আবুল বাশার বাদশা ওরফে রাঙ্গা বাদশা (৫০), গগনবাবু রোডের মোঃ নুরুল্লাহ’র ছেলে মোঃ রানা (২৫), টুটপাড়া দিলখোলা রোডের মোঃ বাবু ওরফে কালা বাবু (৩১), নতুন বাজার লঞ্চঘাটের মোঃ সোহরাব মোল্লার ছেলে মোঃ দুলু (২৩)সহ অজ্ঞাত আরো ২/৩জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার এস আই মোঃ আশরাফ হোসেন। তিনি বলেন, “অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।