Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস

রাজস্ব ঘাটতি ১৬৮৩ কোটি টাকা

| প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি এক হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর ভিত্তিক সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধমে দেশের নৌ-বাণিজ্যের প্রায় ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার এবং ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর খাতের বেশির ভাগ রাজস্ব আদায় হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ৩৯ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। গত ১১ মে পর্যন্ত  রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩১ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। ওই দিন পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। গেল অর্থ বছরের ওই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। এবার গত বছরের এ সময়ের চেয়ে ৫ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। গতবছর প্রবৃদ্ধির এ হার ছিল ১৩ শতাংশ।
রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি অতীতের সকল রের্কড ছাড়িয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার লক্ষ্যমাত্রা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। একারণে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্য অর্জন করা যাচ্ছে না। এছাড়া আমদানি প্রবৃদ্ধিও তেমন বাড়েনি। তবে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানিসহ নানা কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার কারণেও রাজস্ব আদায় কম হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কিছু পণ্যের দাম কমে যাওয়ার কারণেও রাজস্ব আদায় কমেছে। গত অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা। তবে অর্থ বছরের শেষদিকে এসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। রাজস্ব আদায় হয় ৩১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। কাস্টম হাউসের কমিশনার এএফএম আব্দুল্লাহ খান গতকাল রোববার ইনকিলাবকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও রাজস্ব আদায় অনেক বেড়েছে। চলতি অর্থ বছরের এ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে-যা অতীতের সকল রের্কড অতিক্রম করেছে। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে যে পরিমান রাজস্ব আদায় হয়েছে এবার ইতোমধ্যে তার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়ে গেছে। তিনি আশবাদি চলতি মাস ও আগামী মাসে রাজস্ব আদায়ের হার আরও বাড়বে। এর ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে এনবিআর তাদের রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনেছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের লক্ষ্যমাত্রাও কিছুটা কমানো হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা কত তা কাস্টম হাউসকে জানানো হয়নি বলে জানান কাস্টম হাউসের একজন কর্মকর্তা। কাস্টম হাউস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি-রফতানি বাড়লেও রাজস্ব আদায় সে হারে বাড়েনি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলসহ বেশিরভাগ পণ্যের দরপতন হয়েছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ে এর প্রভাব পড়েছে। এ কারণে আমদানি বাড়লেও সেহারে রাজস্ব আদায় বাড়েনি।
সা¤প্রতিককালে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা বেশ কয়েকটি চালান আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। যে পরিমাণ চালান আটক হয়েছে তার কয়েকগুণ নিরাপদে চলে গেছে। নানা কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার কারণে রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ বছরের শুরু থেকে শুল্ক ফাঁকি রোধে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। এই কারণে অনেক ফাঁকির ঘটনা ধরাও পড়ে।  মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা হতে পারে এমন এইচএস কোড ভুক্ত পণ্যের তালিকা তৈরি করে আমদানিকৃত পণ্য নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হয়। এ কারণে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার চেষ্টাকালে অনেক চালান ধরা পড়ছে। মামলার কারণে আটকে আছে মোটা অংকের রাজস্ব আদায়। শুল্ক আদায় করতে আপিল কমিশনারেট, আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত মামলাসমূহ নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজস্ব


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ