Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আবহাওয়া বিপর্যয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা

| প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী : নিজে বেঁচে আছি। ভালোভাবে বেঁচে আছি। এই স্বার্থপরতার পেছনে পৃথিবীর আবহাওয়া যে কটাক্ষ করছে তা বুঝতে হলে নিশ্চিয়ই প্রয়োজন ভূ-প্রকৃতির সম্যক জ্ঞান। মহাশূন্যে ভাসমান পৃথিবী নামক এই গ্রহে কেন এবং কীভাবে জীবজগৎ সৃষ্টি হল, এই জীবজগতের স্থায়িত্ব রক্ষায় জীবশ্রেষ্ঠ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া দরকার সেই বিপর্যয়ের অশনিসংকেত দিতে হচ্ছে আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের। এ পৃথিবীতে জ্ঞানী পÐিতের অভাব নেই। কিন্তু যে জ্ঞান নিজের বাসস্থান রক্ষায় কাজে লাগে না এবং ‘আমি কে’ এই বোধটুকু জাগায় না সেইসব জ্ঞান তাপসরা নিশ্চয় বড় অসহায় বোধ করছে।
ডিসকভারি চ্যানেল-এ দেখলাম মাত্র ক’বছরের মধ্যে আবহাওয়া এক ভয়ংকর অবস্থা সৃষ্টি করবে বিশ্বজুড়ে। এই আবহাওয়াজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে এখনই প্রয়োজন বিশ্বের শীর্ষ শ্রেণীর রাজনীতিকদের একত্রিত হয়ে আলোচনায় বসার। সময় হাতে নেই মোটেই। প্রতিটি মুহূর্ত জটিল আবহাওয়া সৃষ্টির দিকে এগোচ্ছে। বর্তমানের আবহাওয়ার এ জটিল পরিস্থিতি সম্পর্কে কিন্তু আজ থেকে ছ’বছর আগে আবহাওয়া-বিজ্ঞানীরা সংকেত দিয়ে রেখেছিলেন। বলেছিলেন, ২০১০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যেই ভয়ংকর অবস্থায় পড়বে পৃথিবী নামক গ্রহটি। মানুষ নিজেরাই তা দেখবে এবং অনুভব করবে। বিজ্ঞানীদের অভিমত হল, ২০১০ সাল থেকেই এমন তাপদগ্ধ হতে থাকবে পৃথিবী যার ফলে কোন কোন স্থানে ঘন বারিবর্ষণ হবে, পানিমগ্ন হবে বহু অঞ্চল। বায়ুর গতিবেগ দারুণ বেড়ে যাবে। এ বায়ু সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। ভূপাতিত হবে বড় বড় গাছগাছালি। মানুষের অক্সিজেন ধারণ করার ক্ষমতা কমতে থাকবে। আগেকার দিনের সারাদিন বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণের সমান হবে আধঘণ্টা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। আবহাওয়ার পূর্বাভাষকে ডিঙিয়ে যে কোনো সময় ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। প্রতিটি মুহূর্ত মানুষকে সজাগ থাকতে হবে যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য। পাহাড়-পর্বত থেকে প্রবাহিত নদী পানি ধারণ করে রাখার ক্ষমতা হারাবে। তীব্র বেগে পাহাড়-পর্বত থেকে পানিধারা নামবে। সঙ্গে নিয়ে আসবে পাহাড়-পর্বতের শিলাখÐ, গাছপালা। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা হবে বৃহৎ আকারের। পাহাড়-পর্বত চূর্ণ করে দেবার ক্ষমতা নিয়েই প্রকৃতি ফোঁসবে।
সত্যি, বিজ্ঞানীদের দেওয়া আগাম সংকেত তো ইতোমধ্যে আমরা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি। তাপমাত্রার প্রবলতা এবং পরিষ্কার আকাশে হঠাৎ কালো মেঘের আবির্ভাব এবং আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই ঝড়-বৃষ্টি। ভূপতিত হচ্ছে বড় বড় গাছগাছালি এবং শিলাস্তর। সুতরাং বিজ্ঞানীদের দেওয়া সংকেতে ভুল কোথায়? তাঁরা যে বলেছেন ২০১০ সাল থেকে ২০৫০ সালের মধ্যেই মানুষের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়বে তা তো ভুল নয়? তবুও আমাদের হুঁশ ফিরেনি। আমরা বেশ আছি। ঐক্যবদ্ধভাবে আবহাওয়ার কথা চিন্তা না করে আমরা ক্ষমতা লাভের রাজনীতিতে ডুবে আছি। এ যেন চোরাবালিতে তলিয়ে যাবার মৃত্যু ক্ষুধা আমাদের পেয়ে বসেছে।
আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে বর্তমান রাজনৈতিক জটিল সমস্যা। তাই ভাবতে হচ্ছে আবহাওয়াকে এই ভয়ংকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিতেই কি বিশ্বজুড়ে জটিল রাজনৈতিক সমস্যা চলেছে? মানুষ সুস্থভাবে বাঁচুক, দীর্ঘয়ু নিয়ে বাঁচুক, আরো হাজার বছর কম করেও পৃথিবীর মানুষের বাঁচার অনুকূলে থাকুক আবহাওয়া, এই বোধটুকু কি রাজনীতিকদের মনে এখনও জাগছে না? ২০০৪ সালের দেওয়া অশনিসংকেত তা কি স্মরণ হচ্ছে না দেশপ্রেমিকদের? কোথায় আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা?
পরিবেশ-বিজ্ঞানীরা সাবধান করে দিচ্ছেন। কিন্তু গোটা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকদের সময় নেই সাবধান বাণী শোনার। বরং ক্ষমতার যুদ্ধকে উসকে দিতে কত কৌশল চলছে বিশ্বজুড়ে। আরো আরো বাড়–ক আধিপত্যের লড়াই, ধর্ম-জাত-পাত, সীমানা, ভূখÐ দখল, সেই সঙ্গে আল্লাহর হুকুম, জেহাদÑকত না অলীক কল্পনা এবং আত্মলোভের বশবর্তী মানুষ মানুষ-নিধনে চালিয়ে যাচ্ছে অস্ত্র। কিন্তু সবকিছুর উপরে যে প্রকৃতির যুদ্ধ প্রলয়ঙ্কর অবস্থার দিকে এগোচ্ছে সে খেয়াল মানুষের নেই। কার জন্য জমির লড়াই, কার জন্য আধিপত্য কায়েম কার জন্য ধর্মসাধনা, সমাজ সাধনা, জাতি সাধনা? সবকিছু তো মুহুর্তে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে জটিল আবহাওয়া। তছনছ করে দিতে পারে মানুষের স্বপ্নের সৌধ। প্রথম কথা হল বেঁচে  থাকা। তা-ও সুস্থভাবে। তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে কীসের অহংকার মানুষের!
ভুলে গেলে চলবে না প্রকৃতি থেকেই জীব ও জগৎ। এই প্রকৃতিই জন্মদাতা পুরুষ এবং নারী। অর্থাৎ বাবা ও মা। সন্তানের জন্ম ও বেঁচে থাকার জন্য যেখানে প্রকৃতির অশেষ দয়া, সেখানে সন্তানের লাঞ্ছনা আর কতকাল সইবে প্রকৃতি। পৃথিবী ও সূর্যের মধুর সম্পর্ক বজায় রাখার দিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি যতদিন না থাকবে, পৃথিবীর বাইরেই আমাদের মূল অবস্থান, এই মনোভাবের পরিবর্তন না হবে, ততদিন দুর্ভোগ আমাদের পিছু ছাড়বে না।
অবশ্য বলা যায়, আধুনিক বিজ্ঞানের যান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সভ্যতার ক্রমবিকাশ মানুষকে তার স্বাভাবিক কাজকর্ম ও প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে শিল্প-দানবের দাস করে ফেলছে। যার ফলে বনাঞ্চল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু বনাঞ্চল যে মানুষের প্রকৃত সত্তাকে বিকশিত করে তা ভুলে বসে আছে মানুষ। নির্জন প্রকৃতির সংরক্ষণই যে মানব সভ্যতা টিকে থাকার কষ্টিপাথর তা নিয়ে কেউ ভাবছে না। বর্তমান মানব সমাজ বনাঞ্চল ধ্বংস করে, নদী-নালা-খাল-বিল-ঝর্নাকে বুজিয়ে দিয়ে নগর সভ্যতার প্রত্যাশী। এই প্রত্যাশা পশ্চিমা নাগরিক সভ্যতার যান্ত্রিকতায় ক্লান্ত মানুষ এখন বুঝতে পেরে প্রকৃতি রক্ষার চিন্তায় আকৃষ্ট হচ্ছেন। তাই প্রকৃতিকেন্দ্রিক পরিবেশ আন্দোলন পশ্চিমে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও সেভাবে সাড়া জাগেনি। বলা যায়, জীববিদ্যার বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন সভ্যতার বিকাশ প্রাকৃতিক পরিবেশকে পরিবর্তন ছাড়া অসম্ভব। কিন্তু ক্রমাগত হস্থক্ষেপ কখনও ব্যাপক বিপর্যয়ের সূচনা করতে পারে এই আশঙ্কাটি বর্তমানে অনেক বিজ্ঞানীকে চিন্তান্বিত করে। বলা যায়, পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে শুধু মানুষ নামক প্রাণীর বাসস্থান এবং সুখ-সুবিধার কথা, ভোগ-বিলাসের কথাই বর্তমান সভ্যতা বলে মেনে চলার এই অন্তিম পরিণতিই আজ প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। জীবনযাত্রার উন্নত অবস্থাকে চালু রাখতে যে ব্যাপক সম্পদ তৈরি করতে হচ্ছে শিল্প, কৃষিতে তা থেকে উদ্ভূত দূষণ পরিবেশকে ধ্বংস করছে। রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। বলতে হয়, আধুনিক শিল্প ও কৃষিজাত দূষণকে সীমিত রাখতে নতুন সমাজ ও জীব-দর্শনের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি প্রযুক্তি-নির্ভর আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা, ধনতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক যাই হোক না কেন, তার বিরোধী মতবাদগুলোকে একটি ঐক্যের সূত্রে গেঁথেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
মানুষ নিজেকে খুব বড় বলে মনে করে। ভূ-প্রকৃতির কাছে মানুষ তিল পরিমাণ কিছু নয়। এ পৃথিবীর অভ্যন্তরে যে কী কাÐকারখানা চলছে তা মানুষ জানে না বলেই বেশ আছে। যখন মাঝে-মাঝে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ভয়ংকর রূপ ধরে প্রকাশ হয়, তখন ধ্বংসলীলা দেখে ক্ষণিক ভাবিত হলেও পরক্ষণে ভুলে গিয়ে আত্মসুখে মেতে ওঠে। নিজেকে বিশ্বের অধীশ্বর বলে ভাবে। এই তো কিছু দিন হয় এই অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ নিয়ে বিজ্ঞানের এক অধ্যাপকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিল। এই অঞ্চলের তাপমাত্রার একটা গÐি ছিল। তা ভেঙে গেছে কেন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক বললেন, ভুলে যাবেন না গত সুনামির কথা। সেই সময় সুনামির ভয়ংকর রূপ দেখেছেন, কিন্তু সেই ভয়ংকর রূপের কারণে সে সময়ই কেবল প্রচÐ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে নিঃশ্বাস ফেললে চলবে না, সে সময়ের পরিণতি তো জানার এখনও বাকি। পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশে দিক পরিবর্তন যখন আমরা একদিন জানতে পারব, তখন অবাক হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। আমরা সত্যি সত্যি কি আগের জায়গায় আছি, না পূর্ব থেকে দক্ষিণে চলে গেছি কে জানে। সুনামির প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। একদিন ভূ-পৃষ্ঠের দিক পরিবর্তনের চিত্র আমরা জানব। তখনই আমাদের ক্ষমতা অহংকার চূর্ণ হবে। বিশ্ব-প্রকৃতির কাছে নতজানু হয়ে নিজেদের অহংকারকে চূর্ণ করা ছাড়া গতি থাকবে না।
সত্যি, মানুষ এখনও নিজেদেরকে শোধরাবার চেষ্টা করুক। পরিবেশ রক্ষায় যতœবান হোক। প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করুক। হাতের কুড়াল বা করাত ফেলে গাছগাছালির গোড়ায় পানি ঢালুক। যুদ্ধের  অস্ত্র ফেলে মানুষে-মানুষে আলিঙ্গনাবদ্ধ হোক। সুখ ও সমৃদ্ধির লাগাম টানুক। কার্বনের বিষাক্ত পরিবেশের কথা স্মরণ করে অধিকমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ বন্ধ হোক। সবচেয়ে বড় কথা অপচয় রোধ করার দিকে যতœবান হোক। প্রয়োজনের অধিক অপচয়ই সর্বনাশ ডেকে আনে। মনে রাখা দরকার, ভোগবাদই বিশ্ব-প্রকৃতির বড় শত্রæ। শুধু মানুষ বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তাই ডেকে আনছে বড় বিপদ।
বিশ্ব পরিবেশ তো আর ভালো হচ্ছে না। শিল্প স্থাপনের নিমিত্তে নির্গত কার্বন এবং যুদ্ধাস্ত্রের কারণে বারুদের ধোঁয়ায় আকাশ আচ্ছন্ন। সেই সঙ্গে তামসিকতায় আচ্ছন্ন মানুষের মন। বোধহীন বহু জীবনের অমানুষিকতায় বিড়ম্বনার জীবন আজ বিশ্বজুড়ে। আত্মসুখে মগ্ন ক্ষমতালোভী মানুষের মোহ ভঙ্গ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। বিলাসী জীবন যাত্রায় থেকে যে পৃথিবীকে সুন্দর ও স্বর্গ বলে আমরা মনে করছি তা যে মোটেই সুন্দর ও স্বর্গ সমান নয় আবহাওয়ার এই জটিল পরিবর্তনে তা আর বলার প্রয়োজন পড়ে না। যদি এখনও বিজ্ঞানীদের সংকেত শুনে আমাদের বোধোদয় না ঘটে, যুদ্ধ থেমে না যায়, কার্বন নির্গত বন্ধ না হয়, মানবতাবোধ প্রকট না হয়, প্রকৃতি সৃজনে মনোযোগী না হয়, তাহলে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঁচবে না। আমরা যারা বুড়ো খোকার দল তারা মরে গেলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদেরে স্বার্থপর, অপদার্থ, অশিক্ষিত, অমানুষ ইত্যাদি বলে গালাগাল দেবে। তারাও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে আমাদের অভিশাপ দিতে দিতে মরবে।
উন্নয়ন ও শান্তির কথা আজ বাতুলতা মাত্র। কারণ প্রকৃতির বৈরিতায় উন্ন্য়ন ও শান্তি বিঘিœত হবে। হচ্ছেও। উন্নয়নের নামে রাজকোষের টাকা খরচ হলেও প্রকৃতির বৈরিতায় রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ধূলিসাৎ হতে সময় লাগে না। আবার নবনির্মাণে রাজকোষের মুখ চাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এভাবে উন্নয়ন কি সম্ভব? কিন্তু তাই হচ্ছে। আবহাওয়া-বিজ্ঞানীরা বারবারই বলেছেন, বিশ্বের তাপমাত্রা দারুণ বেড়ে যাওয়ায় বরফ গলছে। আটলান্টিক মহাসাগরে  ঠাÐা পানির স্তর নামছে। ফলে পানির স্তর বাড়বে। প্রলয়ঙ্কর বন্যা হবে। যেসব জায়গায় কোনোদিন পানি হয়নি, বন্যা কী জিনিষ যারা কখনও শোনে নি বা দেখে নি, তারাও পানিপ্লাবনে প্রচÐ দুর্ভোগ পোহাবে। পাহাড়-পর্বতের প্রবল কর্ষণের কারণে বড় বড় ধস নামবে। এমনকি পাহাড়ি অঞ্চলে পানিস্রোতের কারণে ধসে বসতবাড়ি তলিয়ে যাবে।
এখন নিশ্চয় বক্তৃতা দিয়ে সম্মান কুড়ানোর সময় নয়। এখন প্রয়োজন আওয়াজ তোলা সাম্রাজ্যলোভী বিরুদ্ধে। তাঁদের রাসায়নিক অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বাজার সৃষ্টি করার মতলব ভেঙে দেওয়া। বন ধ্বংসকারী শয়তানদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে কঠোর শাস্তির দাবি জানাতে হবে জনগণকে। যারা বেঁচে থাকার উপাদান অক্সিজেন এবং প্রকৃতিকে সঠিক রাখার বনজ সম্পদ লুণ্ঠন করছে তাদের আর ক্ষমার চোখে দেখার সময় নেই। সবচেয়ে বড় কথা, ভীষণভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে তা সবাই অনুভব করছেন। গরমে অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগছে মানুষসহ সকল প্রাণীই। কিন্তু কেন বাড়ছে, কারা বাড়াচ্ছে, কী করা দরকার সেদিকে নজর দিচ্ছে না কেউ। অনেকে বলছেন, তা সরকার দেখবে, বিজ্ঞানীরা কারণ দর্শাবে। বিজ্ঞানীরা কারণ দর্শাবেন ঠিক, কিন্তু জনগণ কি সরকার নয়? তাছাড়া আবহাওয়া-বিজ্ঞানীরা শুধু পূর্বাভাষ দিতে পারেন। মানুষের হাতেই যে আবহাওয়া রক্ষার দায়িত্ব, তা কে বোঝাবে?
আমরা বেশি না বুঝলেও এইটুকু তো বুঝি যে, পরিবেশকে রক্ষা করে বনাঞ্চল। সেই বনাঞ্চল রক্ষার দায়িত্ব বনবিভাগের উপর ছেড়ে দিয়ে আমরা যদি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাই, তাহলে স্বার্থপর মানুষরা উন্মুক্ত বনাঞ্চল লুন্ঠন করবে না তা ভাবি কী করে? ঘরে কপাট দিয়ে, প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকা অবস্থায় চোর-ডাকাতদের হাত থেকে জীবন-সম্পদ রক্ষা করা যায় না যেখানে, সেখানে উন্মুক্ত বনাঞ্চল অক্ষত থাকবে তা ভাবাটাও তো ঠিক নয়। প্রতি মাসে বন রক্ষা ও উন্নয়নের নামে অজস্র টাকা খরচ হয় দেশের। তবু দেশ হারায় তার প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ। এর মতো দুর্ভোগ আর কী হতে পারে দেশের। অশিক্ষিত লোকরা হয়তো বনাঞ্চলের উপকারিতা ও দেশের সম্পদ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় স্বার্থপরের মতো বন ধ্বংস করে। কিন্তু শিক্ষিত লোকরা যারা মদত দেয় এবং চোরাকারবারিদের সহায়তায় বনজ সম্পদ থেকে অর্থ লুন্ঠন করে তখন তাদের কী বলতে হয়? সেইসব লুন্ঠনকারী সরকারি-বেসরকারি শিক্ষিত লোকদের আবার দেখা যায় মনুষ্য সমাজে বেশ প্রতিপত্তি আছে। দেশ ও সমাজে হিতাকাক্সক্ষী হিসাবে তারা উপদেশে দেন, বক্তৃতাও করেন। সেইসব মুখোশধারী সভ্য বলে পরিচিত মানুষদের ক্ষমা করা আর কতকাল চলবে- সেটাই এখন ভাবার বিষয়। তবে এটা ঠিক, তাদের সন্তানরা যদিও বর্তমানে দুধে-ভাতে আছে, কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দুধে-ভাতে থেকে যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে সুষ্ঠুভাবে সুখী জীবন লাভ করতে পারবে না সে সংকেত তো বিজ্ঞানীরা দিয়েই রেখেছেন। ২০১৫ থেকে ২০৫০ সালÑ প্রাকৃতিক আবহাওয়া মহা বিপর্যয়ের ভয়ংকর সময়। তা থেকে মুক্তি ধনীরাও পাবেন না। তাই সাধু সাবধান! শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে, বিলাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত যারা, যারা বর্তমান সময় থেকে আগামী সময়ের আবহাওয়া বিপর্যয়ের আশঙ্কা নিয়ে এখনও নাক গলাচ্ছেন না, তাদের ভুল ভাঙবে। সময় আসন্ন।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট, বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরষ্কার (১ম স্বর্ণপদক-১৯৯৮) প্রাপ্ত।



 

Show all comments
  • Selina ১৭ মে, ২০১৭, ২:৫২ পিএম says : 0
    Natural water flow in river is one of the solution adverse impact on the country no natural water flow in river virtually no Bangladesh northern part of the country now merely desert area .the Padda river is a fossil river of the world .
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবহাওয়া

২৯ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ