Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবার বর্ষায় ভারতে অতিবৃষ্টিতে উজানের ঢলে দেশে বন্যার শঙ্কা

আবহাওয়ায় এল-নিনোর প্রভাব কমেছে

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : সামনের বর্ষা মৌসুমে (জুন-জুলাই-আগস্ট) ভারতে অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আর উজানে ভারতে ভারী বর্ষণ হলে এতে আসন্ন বর্ষায় বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ-নদীর দুকুল ছাপিয়ে আকস্মিক অথবা নিয়মিত বন্যার আশঙ্কা আছে। একই কারণে পাহাড়ি ঢলেও বন্যা কবলিত হতে পারে দেশের কোনো কোনো অঞ্চল। ভারতের আবহাওয়া বিভাগের মহাপরিচালক কে জে রামেশ গত ৯ মে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, আগের পূর্বাভাস ছাড়িয়ে ভারতে সামনে বর্ষাজুড়ে অতিবৃষ্টি হতে পারে। এর পেছনে কারণটি হচ্ছে আবহাওয়ামÐলের অন্যতম প্রধান নিয়ামক এল-নিনো পরিস্থিতির প্রভাব কমে আসা। এর ফলে ভারত মহাসাগরে তৈরি হচ্ছে বর্ষার বৃষ্টি বা অতিবৃষ্টির আবহ।  
এর আগে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ গত ১৮ এপ্রিল পূর্বাভাসে জানিয়েছিল যে, আসন্ন বর্ষায় এল-নিনোর প্রভাবে দেশটিতে গত ৫০ বছরের গড় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ডের তুলনায় ৯৬ শতাংশ বৃষ্টিপাত (অর্থাৎ ৪ শতাংশ কম) হতে পারে। গত মার্চ পর্যন্ত আবহাওয়ার নিয়ামকগুলো বিশ্লেষণ করে উপরোক্ত পূর্বাভাস দেয়া হয়। তবে এখন এল-নিনোর প্রভাব বলয় কমে আসার ফলে ভারতে বর্ষায় বেশি বৃষ্টির আশা করা হচ্ছে এবং এতে দেশটিতে ফল-ফসলের আবাদ ও ফলন বৃদ্ধির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে অতিসম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ব্যুরোর পর্যবেক্ষণেও জানানো হয়েছে, আবহাওয়ার উপর এল-নিনোর প্রভাব কমে এসেছে। ‘এল-নিনো’ হচ্ছে পূর্ব ও মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিভাগের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে ক্রমাগত উষ্ণায়নের বর্ধিত প্রভাবে সুদূর বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ উপমহাদেশ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতে ঘাটতির ফ্যাক্টর বা নিয়ামক তৈরি। এল-নিনো স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের আবহ রোধকারী আবহাওয়া-জলবায়ুর বিশেষ একটি অবস্থা। এতে করে বর্ষারোহী মৌসুমী বায়ুমালার সৃজন ও আগমন ব্যাহত, বিলম্বিত কিংবা সংকুচিত হয়। বৃষ্টিপাতের আবহ দীর্ঘদিনের জন্য বিঘিœত হতে পারে আবহাওয়ায় এল-নিনো পরিস্থিতির কারণে।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের উক্ত সর্বশেষ পূর্বাভাসের (আসন্ন বর্ষায় সে দেশে অতিবৃৃষ্টি) বিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা এখনও বর্ষা মৌসুমের পূর্বাভাস দেইনি। প্রাক-বর্ষার (এপ্রিল-মে-জুন) পূর্বাভাস প্রদান করা হয়েছে। আপাতত সেটিই আমাদের পূর্বাভাস।
প্রসঙ্গত আবহাওয়া বিভাগের দেয়া দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়, চলতি মে মাসে অর্থাৎ প্রাক-বর্ষায় দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। আগামী জুন মাসের প্রথমার্ধে সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুমালা (বর্ষাকাল) বিস্তার লাভ করতে পারে। জুনেও স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। মে মাসে নদ-নদীর অবস্থা সম্পর্কে পূর্বাভাসে বলা হয়, এ মাসে দেশের নদ-নদীর পানির সমতল স্বাভাবিক থাকবে। তবে অতি ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল (বৃহত্তর সিলেট) ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের (বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম) বিভিন্ন এলাকা আকস্মিক বন্যা কবলিত হতে পারে।    
এদিকে চলতি মে ও জুন মাসে আবহাওয়া বিভাগ যেহেতু স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে সেহেতু প্রাক-বর্ষায় দেশে অতিবৃষ্টির কারণে বন্যার কোন আশঙ্কা দেখা হচ্ছে না। তবে এখন ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ প্রধানের পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে আশঙ্কার কারণটি হলো ভারতের বিশেষত দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্যে অতিবর্ষণ হলে এবং এ কারণে উজান থেকে নেমে আসা ভারতের পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যা কবলিত হতে পারে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল।  
গত এপ্রিল মাসে দেশে বৃষ্টিপাত হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০৬.২ শতাংশ বেশি। গত মার্চেও দেশে ১৫২ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়।
দাবদাহ কমতে পারে : বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
সর্বশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান দাবদাহ আজ (শনিবার) থেকে কমতে পারে। সেই সাথে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ভোলায় ৩৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ও ২৬ ডিগ্রি সে.।  
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।  
আজকের আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
ফরিদপুর, মাদারীপুর, সীতাকুÐ, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, ফেনী, রাজশাহী, খুলনা, মংলা, সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল, খেপুপাড়া ও ভোলা অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে।  
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। বর্ধিত ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ