Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেইলি ব্রিজে দুর্ভোগে ৩ লাখ মানুষ

প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি : ‘পট্টি মেরে মেরে আর জায়গা নেই। কোথাও কোথাও ৫০ বারেরও অধিক সময় ঝালাই-পট্টি মারা হয়েছে। এক দশক ধরে তিন লাখ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি কোনো মন্ত্রী-এমপি। এমন মন্ত্রী-এমপি আমাদের দরকার নেই, যারা কিনা এক দশকেও একটি ব্রিজ নির্মাণের ক্ষমতা রাখে না।’ সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মরিচ্চাপ নদীর ওপর অবস্থিত বেইলি ব্রিজের দুরবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে ইনকিলাবকে এভাবেই বলছিলেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরার সাথে আশাশুনি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘœ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৯৯২ সালে উপজেলার চাপড়ায় মরিচ্চাপ নদীর ওপর বেইলি ব্রিজটি নির্মাণ করে। এতে উপজেলার ৩ লক্ষ মানুষ উপকৃত হয়। পার্শ¦বর্তী খুলনা জেলার কয়রা এবং পাইকগাছা উপজেলা ও সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার সাথে আশাশুনি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়। উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্যেও সূচনা হয় নবদিগন্তের।
কিন্তু মাত্র কয়েক বছর পরেই মাত্রারিক্ত যানবাহনের চাপে ব্রিজের পাটতন ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। পাটা নদীতে পড়ে গিয়ে কোথাও কোথাও হয়ে যায় ফাকা। এরপর থেকে শুরু হয় ঝালাই পট্টি মারা। একের পর এক পট্টি মারতে মারতে এখন পট্টি মারারও জায়গা নেই। ২০০৫ সাল থেকেই চলছে এই অবস্থা। এরপর মরিচ্চাপ নদী দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল, কিন্তু বেইলি ব্রিজটির অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। অযোগ্য হয়ে পড়েছে চলাচলের। এই দুরবস্থার মধ্যদিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে ইতোপূর্বে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে নষ্ট হয়েছে অনেক যানবাহন। ভাঙা পাটাতনে পা ঢুকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকেইে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহকালে স্থানীয় কয়েকজন এক সাথে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে বলেন, ‘ভাই, মিডিয়ায় নিউজ হলে কি হয়? দশ বছর ধরেই তো নিউজ হচ্ছে। ব্রিজ তো হয় না। আপনি কাল নিউজ করবেন। পরশু আবার এসে ঝালাই পট্টি মেরে যাবে। এবার একটা কথা লিখে দিয়েন- ব্রিজ করতে না পারলে, আমরা নৌকায় পার হবো। কিন্তু আর দুর্ঘটনায় পড়তে চাই না।’
পথচারী আজিজুর রজমান জানান, ব্রিজটির এমনই অবস্থা যে, হেটেও চলাচল করা দুষ্কর। পার হতে গেলে গা’ ছম ছম করে। কখন পা’ ঢুকে যায়, কখন কি হয়- এমন নানা দুশ্চিন্তা নিয়ে পার হতে হয়। আশাশুনি উপজেলা বরাবরই অবহেলিত। এই একটি ব্রিজের উপর উপজেলার ৩ লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। কিন্তু কেউ খোঁজ রাখে না। বাস ড্রাইভার শাহীন হোসেন জানান, ব্রিজটি পার হতে গেলে ভয়ে থাকতে হয় কখন চাকা পাটার ফাকে ঢুকে যায়, কখন টায়ার কেটে টিউ বাস্ট হয়ে যায়। এভাবে চলা যায় না।
ব্যবসায়ী অনিক হালদার জানান, প্রতি নির্বাচনের আগে ব্রিজ নির্মাণে আমাদের একই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু কেউ কথা রাখে না। সর্বশেষ ডা. রুহুল হককে ভোট দিয়েছিলাম। পরে তিনি মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন। আমাদের জন্য কিছুই করেননি। এবারও তিনি বিনা ভোটে এমপি হয়েছেন। এলাকায় আসেন খুব কম। কনক্রিটের ব্রিজ নির্মাণ করে দিলেই উপজেলাবাসী বেজায় খুশি হবে। কিন্তু আমাদের কান্না কেউ দেখে না। ব্রিজটি পুনর্নির্মিত না হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দলকেও দুষলেন অনেকেই। বললেন- আওয়ামী লীগের এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান, নেতা-কর্মীরা পাটাপাটি আর ভাগাভাগিতে ব্যস্ত, কাজ করবেন কখন?
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ জানান, বেইলি ব্রিজটি সংস্কারের জন্য আমরা চট্টগ্রামের ড্রাইডকে চিঠি দিয়েছি। তারা রাজি হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে ব্রিজটির নিচের পাটাতন সম্পূর্ণ বদলে দেওয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেইলি ব্রিজে দুর্ভোগে ৩ লাখ মানুষ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ