Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শবে বরাত: ফযীলত ও আমাদের করণীয়

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আতিকুর রহমান নগরী
আল­াহ তা’লা যাকে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা মর্যাদা দান করেন, ফযীলত বা শ্রেষ্ঠত্ব তারই হাতে। এই চিরন্তন বিধান অনুযায়ী এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির উপর, এক নবী অন্য নবীর উপর, এক জনপদকে অন্য জনপদের উপর, এক সাহাবীকে অন্য সাহাবীর উপর, এক মাসকে অন্য মাসের উপর, এক দিবসকে অন্য দিবসের উপর এক রজনীকে অন্য রজনীর তিনি শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন। রমযান মাস সকল মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, জুমার দিন অন্যান্য দিনের তুলনায় শ্রেষ্ঠ, অনুরূপ শবে বরাত, শবে ক্বদরের মর্যাদা অন্যান্য রাত্রির তুলনায় অনেক গুণ বেশী। প্রত্যেক মানুষের ইহাই কাম্য হওয়া উচিত যে তার জীবনের মূল্যবান মুহুর্তগুলি ইবাদতে ইলাহিতে ব্যয় হউক এবং বেশি বেশি কল্যাণের অধিকারি হউক। কিন্তু মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী, সীমাবদ্ধ তাহার আয়ূ। আবার এর উপর রয়েছে অনেক বাধা-বিঘœ যার কারণে সে গন্তব্যস্থান পর্যন্ত পৌছতে সক্ষম হয় না। ইহা দয়ামনের অসীম দয়া যে, তিনি স্বীয়-বান্দাগণের প্রতি অনুগ্রহ করে তাহাদের জীবনে কল্যাণ দান ও অফুরন্ত সওয়াব হাসিল করার জন্য বিশেষ বিশেষ ‘দিবস’ দান করিয়াছেন।
শবে বরাত হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত অনুরূপ এক বরকতময় সুবর্ণ সুযোগ। শবে বরাত (লাইলাতুল বরাত) “শব” হচ্ছে ফার্সি শব্দ এর অর্থ রাত, রজনী। বারাআতুন হল আরবী শব্দ এর অর্থ হচ্ছে নাজাত, নিস্কৃতি।
যেহেতু, এই রাত্রিতে আল­ার প্রিয় বান্দারা তাওবা- ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে ক্ষমা প্রাপ্ত হইয়া দোযখ হতে নাজাত ও নিস্কৃতি লাভ করিয়া থাকেন।
তাই এই রাত্রির নাম “লাইলাতুল বারাআত” ইহারই সংক্ষিপ্ত নাম “শবে বরাত”। এই রাত্রিটি হল শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত এবং ১৫ই শাবানের পূর্বে রাত্রিটি। হাদীসে ইহাকে বলা হয়েছে “লাইলাতিন নিছফি মিন শা’বান”। অর্থাৎ অর্ধ শাবানের রাত্রি।
সারা বৎসরের যাবতীয় ফয়সালা হায়াত (জীবন), মওত (মৃত্যু) রিযিক্ব, ধন-সম্পদ, আমল ইত্যাদির সহিত সম্পর্ক যুক্ত আদেশ-নিষেধ সমূহ উক্ত রাত্রিতে লওহে মাহফুজ থেকে উদ্ধৃত করিয়া কার্যনির্বাহি ফেরেস্তাদের নিকট সোপর্দ করা হয়। হতে পারে, শাবানের পনের তারিখ রাত হইতে এই কাজ শুরু হয় এবং শবে ক্বদরে তাহার পরিসমাপ্তি ঘটে। তফসীরে আশরাফীতে উলে­খ আছে যে, উভয় রাত্রিতে (শবে বরাত-শবে ক্বদর) উপরোক্ত বিষয়াদির মিমাংশা হইয়া থাকে।
মহানবী সা. বলেন, অর্থাৎ “খুশী তাহার জন্য, যে শা’বান চাঁদের মধ্য (পনের তারিখ) রাতে ইবাদতে মগ্ন থাকে।” অপর এক হাদীসে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. হইতে বর্ণিত যে, রাসূল সা. বলেছেন “হে মুমিনগণ! তোমরা শা’বান মাসের মধ্যম (পনের তারিখ) রাতে জাগ্রত থাক। কেননা এ রাত অতি বরকতময়। এরাতে আল্লাহপাক বলিতে থাকেন, হে বান্দাগণ! তোমাদের মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেহ আছ কি? আমি তাহাকে ক্ষমা করিব।
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, “যে ব্যক্তি শা’বান মাসের পনের তারিখ রোযা রাখিবে, দোযখের আগুন কখনও তাহাকে স্পর্শ করবেনা”।
শবে বরাতের ফযীলত
১। এই রাত্রিতে আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহ মু’মীনদের উপর বর্ষিত হয়।
২। এই রাত্রিতে আল্লাহর দরবারে মানুষের আমল সমূহ পেশ করা হয়।
৩। এই রাত্রিতে মানুষের এক বৎসরের রিযিক নির্ধারিত হয়।
৪। এই রাত্রিতে পরবর্তী এক বৎসরের মৃত্যুবরণকারীদের নাম তালিকাভুক্ত হয়।
৫। এই রাত্রিতে পরবর্তী এক বৎসরের জন্মগ্রহণকারীদের নামও তালিকাভুক্ত করা হয়।
৬। এই রাত্রিতে বিশেষ ধরণের অপরাধী ছাড়া বাকি সকলকে মাফ করা হয়।
৭। এই রাত্রিতে মাঝামাঝি সময়ে নবীজি সা. মদীনা শরীফের প্রসিদ্ধ গোরস্তান বাকী এ গরক্বদে গমন করিয়া শহীদগণের মাযার যিয়ারত করেন।
৮। এই রাত্রিতে যমযমের পানি সুমিষ্ট হয়।
৯। এই রাত্রিতে “বনী কালব”Ñ বনী রবী, এবং মুদার গোত্রের সমগ্র ভেড়া-বকরীর পশমের সংখ্যা পরিমাণ গোনাহগার বান্দাদের ক্ষমা করা হবে।
“লাইলাতুন মুবারাকা”
তাফসীর বিশারদগণের অভিমত হল যে, “সূরা দুখানে” উল্লেখিতÑ “লাইলাতুম মুবারাকা’র দ্বারা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে।
এই অভিমত পোষণকারীদের মধ্যে কেহ কেহ শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভির নাম উলে­খ করেছেন। হযরত ইকরামা রা. এই আয়াতে উল্লেখিত “লাইলাতুম মুবারাকার” তাফসীরে ১৫ই শা’বানের রাত্রিকে নির্ধারিত করেছেন। (সূরা দুখান: ২৫নং পারা)
মহান এ রাতে যারা ক্ষমার অযোগ্য: (১) মুশরিক, (২) যাদুকর (৩) গণক (৪) ঈর্ষা পরায়ণ (৫) না-হক্ব হত্যাকারী (৬) গায়ক (৭) বাদক (৮) ভাগ্য ও ভবিষ্যত বর্ণনাকারী (৯) আত্মীয়দের সাথে ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া সম্পর্ক ছিন্নকারী (১০) পরস্পর শত্রæতার ভাবপোষণকারী (১১) জালিম শাষক ও তাহাদের সহযোগী (১২) মিথ্যা শপথের সাহায্যে পণ্য বিক্রেতা (১৩) পায়ের গিরার নিচে কাপড় পরিধানকারী (১৪) মদ্যপানকারী। (১৫) পরস্ত্রীগামী (১৬) মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান (১৭) কৃপণ ব্যক্তি (১৮) পরোক্ষ নিন্দাকারী (১৯) অন্যায়ভাবে শুল্ক আদায়কারী (২০) দাবা পাশার খেলোয়ার।
শবে বরাতের নামাযের নিয়ম কানুন: এশার ফরয ও সুন্নত দুই রাকাতের পরে বিতির নামায না পড়িয়া শবে বরাতের নফল নামায সমূহ আদায় করিতে হয়। কত রাকাত পড়িতে হবে তার কোন সীমারেখা নেই। যতবেশী পড়া যায় ততই ভালো।
এই রাতে শুধু নফল নামায পড়িতে হবে এমন কোন কথা নয়। নফল নামাযের সাথে অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী, যেমন: কোরআন তেলাওয়াত দোয়া দূরূদ, তাসবীহ-তাহলীল, যিকির-আযকার করিলেও অশেষ সওয়াব পাওয়া যায়। শবে বরাতের নামাযের নিয়ত নিচে দেয়া হল।
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্-উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’লা রাকাআতাই সালাতিল লাইলাতিল বারাআতি নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
শবে বরাতের রাত্রে আমাদের করণীয়: আমাদের সমাজে এমন অনেক মূর্খ লোক পাওয়া যায় যারা এই রাত্রে দলবেধে পায়ে হেঁটে, গাড়িতে চড়ে জোড়ে “আল্লার নাম অর্থাৎ যিকির করে রাস্তা-ঘাটে, মসজিদে মাজারে ঘুড়ে বেড়ায় হাসি খুশী করে।
১। তাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ যে, আল্লাহর ইবাদত একাগ্রতার সহিত খালিছ দিলে হওয়া উচিত। দলবেধে মিছিল সহকারে আল্লাহর ইবাদত হয়না বরং তাতে গুনাহের কাজ হয়।
সুতরাং মনে রাখা উচিত আল্লাহ হচ্ছেন সর্বশ্রোতা, ক্ষমাশীল দয়াময় আস্তে আস্তে যিকির আযকার করলে অন্য ব্যক্তির অসুবিদা হবে না। তাতে আল্লাহ ও আপনার উপর সন্তুষ্টি থাকবেন।
২। মাজার যিয়ারত করা কোন গুনাহের কাজ নয়। কিন্তু মাযার যিয়ারতের নিয়ম কানুন বজায় রেখে করা উচিত। মাজারে মোমবাতি, আগরবাতি, জ্বালালো মারাত্মক গুনাহের কাজ। এ থেকে আমরা বিরত থাকব। অন্যকে বিরত রাখবো। পরিশেষে, আমি মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করি তিনি সমগ্র দুনিয়ার মুসলমানকে ক্বোরআন হাদীসের আলোকে পবিত্র রজনী “শবে বরাত” আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে দেয়ার তৌফিক দান করেন। আমিন।



 

Show all comments
  • Abul hasnat ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৪১ পিএম says : 0
    মাশাঅাল্লাহ অনেক কিছু জানতে পারলাম।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শবে বরাত

৭ মার্চ, ২০২৩
৭ মার্চ, ২০২৩
২০ মার্চ, ২০২২
২০ মার্চ, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ