Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভ্যাট নিয়ে সিদ্ধান্তহীন সরকার

| প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সরকার যা একপ্রকার দুশ্চিন্তায় রূপ নিয়েছে। কারণ আসন্ন বাজেট বর্তমান সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট যার সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে সরকারের জনপ্রিয়তা; যার ওপর ভিত্তি করেই আগামি জাতীয় নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে ক্ষমতাসীন দলটির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে।
নির্বাচনের আগে দলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো একটি দৃশ্যমান অবস্থায় নিতে চাচ্ছে সরকার। আর এজন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থ- যে কারণে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না করার কোন বিকল্প পথ নেই। তবে ‘পূর্ণাঙ্গ হিসাব রাখার ভয়ে’ এই উদ্যোগে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যবসায়ী সমাজ। নতুন আইন কার্যকর হলে কাঁচামাল ক্রয় থেকে শুরু করে বিক্রয় পর্যন্ত হিসাব রাখতে হবে ব্যবসায়ীদের। আর এই ভয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রকাশ্যে বিতন্ডায় জড়িয়ে রাজপথে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় বাড়িয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সাধারণ মানুষের মন জয় করবে; না কি ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নেবে- এ নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না সরকার। যদি ব্যবসায়ীদের দাবি উপেক্ষা করে নতুন আইন কার্যকর হয় তবে এই অযুহাতে ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে যার সরাসরি প্রভাব পড়বে আগামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায়। আবার রাজস্ব আয় বাড়াতে না পারলে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পই সরকার এগিয়ে নিতে পারবে না যেগুলোও প্রভাব ফেলবে আগামি নির্বাচনে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুশি করতে গিয়ে ব্যাপক হারে বেতন বাড়িয়ে সরকার ইতোমধ্যেই যে অর্থসংকটে পড়েছে তা স্পষ্ট। কারণ আগামি ১ জুলাই থেকে যারাই অবসরে যাবেন তারা পেনশনের অর্ধেক অর্থ তুলতে পারবেন। বাকি অর্থ নিতে হবে মাসিক কিস্তিতে। এটা নিয়েও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মাচারিদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে, যে কারণে অনেকেই ৩০ জুনের মধ্যে চাকরি থেকে ঐচ্ছিক অবসরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সরকার।
আগামি ১১ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত দেবেন- সেটাই কার্যকর করবেন অর্থমন্ত্রী। যদিও এখন পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী বলে আসছেন, ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন যে কোন মূল্যে কার্যকর হবে। এ বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা করতে পারেন বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, নতুন ভ্যাটহার অভিন্ন ১২ থেকে ১৩ শতাংশ হতে পারে অথবা এই আইন বাস্তবায়ন আগের মতো পিছিয়ে যেতে পারে অথবা যে কোন মূল্যে নতুন আইন কার্যকর করা হতে পারে। সংশোধন আসতে পারে নতুন ভ্যাট আইনে যা মন্ত্রীসভায় পাশ করার পর আগামি ১ জুন সংসদে উত্থাপন করা হতে পারে। তবে কোন পথে হাঁটা হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি অর্থ মন্ত্রণালয়।
ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গতবছর নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন থেকে সরে আসলেও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে যে কোন মূল্যে এটা বাস্তবায়নের কথা বার বার বলে আসছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্য উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় অর্থমন্ত্রী ও ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে। সেখানে ব্যবসায়ীরা নতুন আইন বাস্তবায়ন রোধে রাজপথে আন্দোলনের হুমকি দিলে অর্থমন্ত্রী যে কোন মূল্যে আন্দোলন দমনের ঘোষণা দেন।
সরকার ফ্লাটহারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করতে চাইলেও ব্যবসায়ী নেতারা দাবি জানিয়ে আসছেন সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ভ্যাটের। এর মধ্যে একেক খাতে একেক হারে ভ্যাট কার্যকর থাকবে। ব্যবসায়ীরা যুক্তি দেখাচ্ছেন, নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে দ্রব্যমূল্য বাড়বে। তবে নতুন ভ্যাট আইনে যে কারণে সরকারের সঙ্গে বিতর্কে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা সেটা হলোÑ উৎপাদন থেকে বিপনন, প্রতিটি ক্ষেত্রে কম্পিউটারাইজড হিসাব রাখতে হবে ব্যবসায়ীদের। রাজস্ব বোর্ড নতুন আইনের যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, এ আইন কার্যকর হলে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করায় পণ্য বা সেবার প্রকৃত ভ্যাট ২ থেকে ৩ শতাংশ কমবে। তাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কোন কারণ নেই বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
১৯৯১ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ভ্যাট প্রবর্তনের বাইশ বছর পর ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, অবকাঠামোগত সমস্যা, ব্যবসায়ীদের আপত্তিসহ নানা কারণে এতদিন আইনটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী জুলাই থেকে বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেন। বিদ্যমান আইনে পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজনের ওপর ‹হ্রাসকৃত› হারে ভ্যাট আদায়ে বিশেষ ছাড় রয়েছে। তবে যারা হ্রাসকৃত সুবিধা নিয়ে আসছিল তারা উপকরণ কর রেয়াত পেতো না। যারা ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছে তারা উপকরণ কর রেয়াত পেয়ে আসছে। এক্ষেত্রে তাদের প্রকৃত ভ্যাট হ্রাসকৃত হারের চেয়েও কম। নতুন আইনে কেউ হ্রাসকৃত হার পাবে না। সবাইকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিয়ে উপকরণ কর রেয়াত সুবিধা গ্রহণ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভ্যাট

১০ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ