Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ফরাসি নির্বাচনের ফলাফলে বাজারে আস্থার সঞ্চার

| প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মারিন লে পেনের পরাজয়ে চাঙ্গা হয়েছে ইউরোপীয় মুদ্রা ইউরো
ইনকিলাব ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইমানুয়েল ম্যাকরোনের জয়ে ফরাসি ব্যবসায়ীরা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। ব্যবসাবান্ধব বলে পরিচিত এ প্রার্থীর বিজয়কে তারা স্বাগত জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি বৈরী মনোভাবাপন্ন প্রার্থী মারিন লে পেনের পরাজয়ে চাঙ্গা হয়েছে ইউরোপীয় মুদ্রা ইউরো। ৩৯ বছর বয়সী ইমানুয়েল ম্যাকরোন এর আগে ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। সমাজবাদী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন মুক্তবাজারের প্রবক্তা। তিনিঁ বলতেন, ফ্রান্সের প্রয়োজন এমন তরুণ, যারা বিলিয়নেয়ার হতে চায়। বিজ্ঞাপন খাতের জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান পাবলিসিস গ্রুপের সিইও মরিস লেভি বলেন, ম্যাকরোন হচ্ছেন তর্কাতীতভাবে ব্যবসাবান্ধব। ফরাসিরা সচরাচর ব্যবসায়ের জন্য অনুকূল প্রার্থীকেই পছন্দ করে। ম্যাকরোন জানেন যে, লাভজনক ব্যবসাই হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপায়। তিনি যদি ঠিক দলটি বেছে নিতে পারেন, তা হলে ফরাসি অর্থনীতি গতি পাবে। ফরাসি অর্থনীতির বিষয়ে ম্যাকরোন বেশকিছু পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সরকারের কল্যাণ বরাদ্দ হ্রাস এবং ৫ হাজার কোটি ইউরোর (৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) বিনিয়োগ পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং তরুণ ও বেকারদের প্রশিক্ষণে জোর দেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। ইমানুয়েল ম্যাকরোন কর পরিকল্পনাও ব্যবসায়ের স্বার্থ সুরক্ষা করবে। করপোরেট কর হ্রাসের পাশাপাশি তিনি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সংগৃহীত সামাজিক সুরক্ষা চাঁদা কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ম্যাকরোন বলেছেন, তিনি বিক্রি কর বৃদ্ধি করবেন না। ফ্রান্সে প্রচলিত সম্পদ কর বাতিলের পরিবর্তে সংশোধন করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। সমালোচকদের মতে, ম্যাকরোন হচ্ছেন বৈশ্বিক পুঁজিবাদের প্রতিভূ। তার প্রতি বিরক্ত ভোটারদের সামনে বিকল্প ছিলেন মারিন লে পেন। রক্ষণশীল লে পেন ফ্রান্সকে ইইউ ও ইউরো থেকে বের করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এছাড়া অভিবাসন ও সস্তা পণ্য আমদানির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তিনি। লে পেনের বিরুদ্ধে ম্যাকরোনের জয়ে ইইউতে স্থিতিশীলতার আবহ সৃষ্টি হবে। এ কারণেই ফ্রান্সে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ডলারের বিপরীতে ইউরোর মান ছয় মাসের উচ্চতম স্তরে পৌঁছে। একইভাবে ইয়েনের বিপরীতে ইউরোর মান এক বছরের উচ্চতম স্তরে পৌঁছে। অবশ্য মুনাফা ঘরে তুলতে ব্যবসায়ীরা ইউরো বিক্রি শুরু করলে মুদ্রাটির মান কিছুটা নেমে আসে। ইউরোর মতো আস্থা দেখা গেছে এশিয়ার শেয়ারবাজারেও। এ অঞ্চলের সব ক’টি শেয়ার সূচকে গতকাল ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। দিনের শুরুতে জাপানের নিক্কেই সূচক ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে যায়। ডিসেম্বরের পর নিক্কেই কখনো এতদূর ওঠেনি। এছাড়া কোরিয়ার কসপি ও অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি এএসএক্স২০০ গতকাল যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। নিউজিল্যান্ডের এনজেডএক্স৫০ সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। গত জুনে ব্রিটেনের ইইউ ছাড়ার সিদ্ধান্ত এবং নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে সৃষ্ট ভূরাজনৈতিক উদ্বেগ ম্যাকরোনর জয় সাময়িকভাবে স্তিমিত হয়েছে। গতকাল শেয়ার ও মুদ্রাবাজারে এ স্বস্তিরই প্রতিফলন দেখা গেছে। ইমানুয়েল ম্যাকরোন ইইউর সঙ্গে ফ্রান্সের ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চান। ফ্রান্সের কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে তিনি শ্রম আইনে সংস্কারের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। মন্ত্রী থাকাবস্থায় তিনি এ উদ্যোগ নিলে তার বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ হয়েছিল। কিন্তু ম্যাকরোন তার অজনপ্রিয় উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রæতিতে অনড় রয়েছেন। ফরাসি দৈনিক লিবারেশনের ভাষায়, একদিকে ম্যাকরোনর নগ্ন পুঁজিবাদ, অন্যদিকে লে পেনের ফ্যাসিবাদ— দুটিই অপছন্দ হওয়ায় বিপুলসংখ্যক ভোটার এবার কেন্দ্রে যাননি। তার পরও যারা ভোট দিয়েছেন, তারা ব্যবসাবান্ধব হিসেবে ইমানুয়েল ম্যাকরোনকেই বেছে নিয়েছেন। ফ্রান্সে সবশেষ ব্যবসাবান্ধব সরকার এসেছিল নিকোলাস সারকোজির নেতৃত্বে। সারকোজি ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু বেকারত্ব বাড়তে থাকায় এবং বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কারণে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ হ্রাস করায় তিনি অবস্থান পাল্টাতে বাধ্য হন। সারকোজির আগে ব্যবসাবান্ধব সরকার বলতে গেলে ভ্যালেরি জিসকার দেস্তার কথা বলতে হবে। ভ্যালেরি জিসকা ১৯৭৪-৮১ সময়কালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ধনীদের ওপর করারোপ এবং সরকারের কৃচ্ছ্র কর্মসূচি হ্রাসের প্রতিশ্রæতি দিয়ে ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ২০১২ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে অর্থনীতির বন্ধ্যাদশা ও বেকারত্বের উচ্চহার দেখে তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কর রেয়াতের ঘোষণা দেন। বিনিয়োগ ও কর্মী নিয়োগ উত্সাহিত করতেই তিনি ওই ঘোষণা দেন। ওলাঁদের সরকারে অর্থমন্ত্রী থাকাবস্থায় ম্যাকরোনর কিছু পদক্ষেপ ফ্রান্সে ব্যবসায়ীদের ভ্রু কুঞ্চিত করেছিল। যেমন গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি রেনোতে সরকার অ্যাক্টিভিস্ট ইনভেস্টরের ভূমিকা নিয়েছিল। ২০১৫ সালে রেনোর শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানিতে সরকারের প্রভাব হ্রাসের প্রস্তাব দিলে ম্যাকরোন ওই পদক্ষেপ নেন। এতে করে কোম্পানিতে সরকারের ভেটো ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। গত বছর ম্যাকরোন টেলিযোগাযোগ কোম্পানি বুইগির একটি উদ্যোগে হস্তক্ষেপ করেন। ১ হাজার কোটি ইউরোর ওই চুক্তিটি সম্পন্ন হলে ফ্রান্সে টেলিকম অপারেটরের সংখ্যা চার থেকে তিনে নেমে আসত। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ