Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৌসুমি ফলে ফরমালিনের শঙ্কা

ঢাকা জেলা প্রশাসন ও র‌্যাবের মোবাইল কোর্টের প্রস্তুতি

| প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : বৈশাখ যাচ্ছে। আসছে মধুমাস জৈষ্ঠ্য। এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে মৌসুমী ফল। আম, লিচু, কাঁঠাল, তরমুজসহ বিভিন্ন ফল বাজারে এসেছে। মৌসুমী এসব ফল নিয়ে মানুষের মধ্যে ফরমালিন ভীতি এখনও আছে। ফরমালিনযুক্ত ফল বাজারে যাতে কোনোভাবে কেউ বিক্রি করতে না পারে সেজন্য মোবাইল কোর্টের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম শফিক গতকাল ইনকিলাবকে বলেন,  মোবাইল কোর্টের জন্য ইতোমধ্যে পুলিশের জন্য চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। সেটা পূরণ হলেই টিম সাজানো হবে। এরপর প্রতিদিনই পরিচালিত হবে ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্ট। র‌্যাবের মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট মো: সারওয়ার আলম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বাজারে মৌসুমী ফল আসার সাথে সাথে আমাদের মনিটরিংও শুরু হয়েছে। শিগগিরি অভিযান শুরু হবে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে আসতে শুরু করেছে মৌসুমি ফল। পল্টনের ফলের দোকানগুলোতে পাকা আম, কাঠালের সাথে দিনাজপুরের লিচুও উঠেছে। আর তরমুজ, বাঙ্গি, পেয়ারা, আমলকি, ডালিম, আঙ্গুর আছে আগে থেকেই। ফল বিক্রেতারা জানান, বৈশাখের দাবদাহে তরমুজের কদর ছিল বেশ। দাম বেশি হলেও বিক্রিতে কমতি ছিল না। যাত্রাবাড়ীর ফল বিক্রেতা রসুল মিয়া বলেন, মৌসুমী ফল বাজারে এলে প্রথম দিকে দামটা একটু বেশি থাকে। তবে মানুষ বেশি দাম দিয়েই  সেগুলো কিনে। ধোলাইপাড়ের ব্যবসায়ী মিলন বলেন, বাজারে মৌসুমী ফল এলেই মানুষের মধ্যে ফরমালিনের আতঙ্ক ভর করে। বেশিরভাগ ক্রেতাই ফরমালিন আতঙ্কে ফল কিনতে চান না। মিলনের দাবি, এখন আর আগের অবস্থা নাই। এখন মৌসুমী ফলে ফরমালিন থাকে না। তবে ক্রেতারা এটা বুঝতে চায় না। তাদের ধারণা নতুন ফল মানেই ফরমালিন।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের সাবেক এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এক সময় ফরমালিনের ব্যবহার ব্যাপক বেড়েছিল। মোবাইল কোর্ট জোরদারের কারণে সেই প্রবণতা কমে যায়। একই সাথে মানুষের মধ্যে ফরমালিন সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরী হয়ে গেছে। সেটা থেকেই মানুষ এখন অনেক সচেতন। মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে ফলে  যে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে সেটা ঘুরেফিরে তার পেটেও আসতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বাদামতলীতে ফলের পাইকারী আড়তে আগে যারা ফরমালিন মিশিয়ে ফলের একচেটিয়া ব্যবসা করতো তাদের মধ্যে অনেকেই এখন নিস্ক্রিয়। তবে যাত্রাবাড়ী এলাকার কিছু চিহ্নিত ব্যবসায়ী এখনও ফরমালিনের কারবার করেন। যাত্রাবাড়ী পাইকারী বাজারের এক ফল বিক্রেতা জানান, কলাপট্টির এক চিহ্নিত ব্যবসায়ী এবারও ফরমালিনযুক্ত আম বিক্রির পায়তারা করছে। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তিনি ইতোমধ্যে সেই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন যে, তার কাছে থেকে আম কিনলে অল্প সময়ে পঁচে যাওয়ার ভয় থাকবে না। শনিরআখড়া বাজারের ফল বিক্রেতা মাসুদ জানান, ফরমালিনযুক্ত আম তিনি কখনওই বিক্রি করবেন না। এজন্য এবার পরিচিত ভালো পাইকারের কাছে থেকে আম কিনবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদনকারী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারও আমের বাগানে যাতে কেউ ফরমালিন বা অন্য কোনো কেমিক্যাল মেশাতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার কামাল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাগানের গাছ থেকে আম পারার তারিখ ২৫ মে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ওই তারিখের আগে কেউ আম পারতে পারবে না। একই সাথে কেউ যাতে কোনো প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মনিটরিং করছে। কামাল হোসেন জানান, বাজারে এখন যেসব আম পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর বেশিরভাগই ভারত থেকে আমদানী করা। দিনাজপুরের কিছু আম বাজারে উঠেছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এখানকার আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক গাছের আম পড়ে গেছে। গাছে থাকা আমও শিলার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। সেগুলো অকালে পেকে অথবা পড়ে যাবে। এই ক্ষতির কারণে এবার ফলন কিছুটা কম হবে বলে কামলসহ আম বাগানের মালিকদের ধারণা।
ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও মৌসুমী ফল যাতে ফরমালিনমুক্তভাবে বাজারে বিক্রি হয় তা নিশ্চিত করতে প্রতিদিনই রাজধানীতে ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম শফিক ইনকিলাবকে বলেন, বাজারে মৌসুমী ফল পুরোপুরি আসার আগেই জেলা প্রশাসন প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। চাহিদা মাফিক পুলিশ পাওয়া গেলেই মোবাইল টিম সাজানো হবে। আশা করছি খুব শিগগিরি মোবাইল কোর্টের অভিযান শুরু হবে।
ভুক্তভোগি ক্রেতাদের মতে, ফরমালিনমুক্ত মৌসুমী ফল নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক বিরাজ করে তা দূর করার জন্য যতো তাড়াতাড়ি ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্টের অভিযান শুরু হয় ততোই ভালো। র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট মো: সারওয়ার আলম জানান, ক্রেতাদের শঙ্কামুক্ত রাখতে র‌্যাবের ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্টের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত পর্যায়ে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ